বেইজিং সফরে কন্যার প্রথম প্রকাশ্য আগমন
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের প্রথম বহুপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিতে চীনে সফরই যথেষ্ট আলোচনার বিষয় ছিল। তবে তার পেছনে স্মার্ট পোশাকে দাঁড়িয়ে থাকা কন্যা কিম জু এ-ই নজর কাড়েন কোরিয়া পর্যবেক্ষকদের। দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, কিম জু এ-ই তার বাবার সবচেয়ে সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী।
পরিবারের গোপনীয়তা ও কন্যার পরিচয়
কিম জং উন ও তার স্ত্রী রি সল জুর তিন সন্তান রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে সঠিক সংখ্যা ও তাদের বয়স প্রকাশ করা হয়নি। কিম পরিবার সবসময় ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখে।
কিম জু এ-ই একমাত্র সন্তান যার অস্তিত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত হয়েছে। অন্য কোনো সন্তানকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি।
তার পরিচয় প্রথম প্রকাশ পায় ২০১৩ সালে, যখন মার্কিন বাস্কেটবল তারকা ডেনিস রডম্যান জানান, তিনি উত্তর কোরিয়া সফরে কিমের শিশুকন্যা জু এ-কে কোলে নিয়েছিলেন।

রাজনৈতিক মঞ্চে কন্যার আবির্ভাব
২০১৩ সালের পর থেকে দীর্ঘ সময় তাকে আর দেখা যায়নি। তবে ২০২২ সালের নভেম্বরে একটি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সময় তিনি বাবার পাশে হাজির হন।
এরপর ধীরে ধীরে তাকে বড় বড় আয়োজনে দেখা যায়। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডাকটিকিটে তার ছবি ছাপা হয় এবং উচ্চপর্যায়ের ভোজসভায় উপস্থিত হয়ে তাকে পরিচিত করা হয় বাবার “সম্মানিত কন্যা” হিসেবে।
উত্তর কোরিয়ায় “সম্মানিত” উপাধি শুধু সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের জন্য ব্যবহৃত হয়।
ব্যক্তিগত জীবন ও শখ
দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনআইএস) জানায়, কিম জু এ-এর বয়স প্রায় ১০ বছর। তিনি ঘোড়ায় চড়া, স্কিইং এবং সাঁতারে পারদর্শী। পড়াশোনা করেন পিয়ংইয়ংয়ে বাড়িতেই।

সম্ভাব্য উত্তরাধিকারীর মর্যাদা
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দারা জানান, কিম জু এ-ই বাবার “সবচেয়ে সম্ভাব্য” উত্তরাধিকারী। যদিও তারা সতর্ক করে দেন, বাবার বয়স এখনও তুলনামূলক কম হওয়ায় নানা পরিবর্তন ঘটতে পারে।
এরপর থেকে তাকে বারবার দেখা গেছে বাবার পাশে ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন, সামরিক কুচকাওয়াজ ও সরকারি অনুষ্ঠানে। সামরিক কর্মকর্তারাও তাকে স্যালুট করেছেন।
বিদেশ সফরে নতুন ইঙ্গিত
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের সফরে তিনি প্রথমবার উত্তর কোরিয়ার বাইরে প্রকাশ্যে আসেন। বেইজিং সফরে কিম জং উনের পাশে দাঁড়ানোয় উত্তরাধিকারের জল্পনা আরও বেড়ে যায়।
কিম পরিবার নিজেদের “পবিত্র রক্তধারা”-র উত্তরসূরি হিসেবে উপস্থাপন করে থাকে। ১৯৪৮ সাল থেকে এই পরিবারই দেশটি শাসন করছে।
তবে অনেকে মনে করছেন, কিম জু এ-কে প্রকাশ্যে আনা হয়েছে নারী নেতৃত্ব নিয়ে দেশটির প্রচলিত সামাজিক পূর্বাগ্রহ ভাঙার উদ্দেশ্যে। উত্তর কোরিয়ায় এর আগে কখনও কোনো নারী নেতৃত্বে আসেনি।

কিম জু এ এখন কেবল কিশোরী, তবে ইতিমধ্যেই তিনি দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে উল্লেখযোগ্য জায়গা করে নিয়েছেন। বাবার পাশে তার উপস্থিতি উত্তর কোরিয়ার ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















