প্রাণহানির মর্মান্তিক চিত্র
৩১ আগস্ট উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে ৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এরপর ২ সেপ্টেম্বর আবারও ৫.২ মাত্রার আফটারশক অনুভূত হয় বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা।
তালেবান প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১,৪০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন এবং হাজারো মানুষ আহত হয়েছেন।
জালালাবাদ ও আশপাশের এলাকায় ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ
ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল পূর্বাঞ্চলীয় জালালাবাদ শহরের কাছে, যা নানগারহার প্রদেশের রাজধানী এবং আফগানিস্তানের পাঁচটি বড় শহরের একটি। বছরের মধ্যে এটি আফগানিস্তানের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পগুলোর একটি, যেখানে বহু গ্রামের ঘরবাড়ি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন কাঠামো
আফগানিস্তান ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে বিশেষভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশটি দুটি বড় সক্রিয় ভূ-তাত্ত্বিক ফল্ট লাইনের ওপর অবস্থিত।
২০২১ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী, আফগানিস্তানের বেশিরভাগ বাড়ি মজবুত ভিত্তিহীন এবং দুর্বল নির্মাণকাজে তৈরি। সাধারণত পুড়ে তৈরি ইট ও সিমেন্ট মিশ্রণ অথবা কাঁচা ইটের দেওয়ালে এসব ঘর দাঁড়িয়ে থাকে। দেওয়ালের পুরুত্ব ২০ থেকে ৮০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এসব ঘরের ছাদ ভারী হওয়ায় ভূমিকম্পে সহজেই ধসে পড়ে।
প্রথম ভূমিকম্পে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত অনেক ঘর দ্বিতীয় ধাক্কায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। তালেবান মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৫,৪০০টির বেশি বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে।
অতীতের ভূমিকম্পের তুলনা
২০১৫ সালে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে বড় একটি ভূমিকম্পে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে কয়েকশ মানুষ মারা যায়। ২০২৩ সালে আরেকটি ভূমিকম্পে অন্তত এক হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের মাত্রা তুলনামূলক কম হলেও, ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে।

ভূমিকম্পের মাত্রা কিভাবে মাপা হয়
ভূমিকম্পের মাত্রা আসলে ভূকম্পন তরঙ্গের আকার মাপে, শক্তি নয়। রিখটার স্কেল লগারিদমিক, অর্থাৎ এক ধাপ বেড়ে গেলে ভূমিকম্পের তরঙ্গ ১০ গুণ বড় হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ৭ মাত্রার ভূমিকম্প ৬ মাত্রার ভূমিকম্পের তুলনায় ১০ গুণ বড় এবং শক্তি প্রায় ৩২ গুণ বেশি।
আফগানিস্তানের ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চল
১৯৮০ সাল থেকে আফগানিস্তানে ৫ বা তার ওপরে মাত্রার ভূমিকম্প বারবার আঘাত হেনেছে। হিন্দুকুশ পর্বত এলাকায় ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে এ ধরনের ভূমিকম্প বেশি হয়।
সাম্প্রতিক কম্পনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্বাঞ্চলের কুনার ও নানগারহার প্রদেশ।

উদ্ধারকাজে প্রতিবন্ধকতা
দুর্গম ও পার্বত্য অঞ্চল হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোতে উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছাতে মারাত্মক সমস্যায় পড়ছেন। ধ্বংসস্তূপের ভেতর আটকে পড়া মানুষদের জীবিত বের করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আফগানিস্তানে ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে হাজারো প্রাণহানি ঘটেছে। ভৌগোলিক অবস্থান ও দুর্বল নির্মাণ কাঠামোর কারণে দেশটি ভবিষ্যতেও বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকবে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 




















