সম্পর্কের টানাপোড়েন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে যে বন্ধন প্রথম মেয়াদে ঘনিষ্ঠ ছিল, তা এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি ট্রাম্পের সম্ভাব্য ভারত সফরকে অনিশ্চিত করেছে এবং চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর কৌশলেও প্রভাব ফেলছে। এ অবস্থায় চলতি মাসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে দুই নেতার বৈঠক বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।
ট্রাম্পের অভিযোগ ও শুল্ক ইস্যু
হোয়াইট হাউসে এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “আমরা ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখি। কিন্তু বহু বছর ধরে সম্পর্ক একপেশে ছিল। ভারত আমাদের ওপর বিশাল শুল্ক আরোপ করেছে, যা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ।” তিনি অভিযোগ করেন, ভারত প্রায় সব ধরনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাত, অথচ আমেরিকার পণ্যের ক্ষেত্রে বাধা ছিল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প দাবি করেন, ভারত এখন শুল্ক শূন্য করতে রাজি হয়েছে, তবে দেরি হয়ে যাচ্ছে। আগস্টে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় তেল আমদানির কারণে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ ‘সেকেন্ডারি ট্যারিফ’ আরোপ করে। ফলে আগে থেকেই থাকা ২৫ শতাংশ শুল্ক মিলিয়ে এখন মোট ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ব্রাজিলের সঙ্গে বিশ্বে সর্বোচ্চ।
রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ও কূটনৈতিক জট
ট্রাম্পের অভিযোগ, “ভারত তাদের অধিকাংশ তেল ও সামরিক পণ্য রাশিয়া থেকে কেনে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে খুব কম।” ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার ঐতিহাসিক সম্পর্ককে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
এর আগেই মোদী-ট্রাম্প সম্পর্কের টানাপোড়েন স্পষ্ট হয়েছিল। জুনে ট্রাম্প-মোদীর ফোনালাপে পাকিস্তান-ভারত সংঘর্ষ পরবর্তী যুদ্ধবিরতি নিয়ে বিতর্ক হয়। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তাঁর মধ্যস্থতার কারণে যুদ্ধবিরতি হয়েছে এবং ইঙ্গিত দেন মোদী তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিন। কিন্তু মোদী স্পষ্ট করে জানান, ওই যুদ্ধবিরতির সঙ্গে ট্রাম্পের কোনো সম্পর্ক নেই।
![]()
পাকিস্তান অবশ্য ট্রাম্পের ভূমিকার প্রশংসা করে তাঁকে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। ভারতে বিরোধী দলগুলো যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপকে অপ্রয়োজনীয় বলে সমালোচনা করেছিল।
একসময় ঘনিষ্ঠতা, এখন শীতলতা
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মোদী ছিলেন চতুর্থ নেতা যিনি হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রিত হন। ফেব্রুয়ারির সরাসরি বৈঠকে মোদী বলেছিলেন, “আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছ থেকে শিখেছি, তিনি জাতীয় স্বার্থকে সর্বাগ্রে রাখেন।” কিন্তু এর পর থেকেই সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্র ভারতের প্রতি কৌশলগতভাবে ঝুঁকেছিল, কারণ তারা চেয়েছিল ভারতকে রাশিয়া থেকে দূরে এনে চীনের মোকাবিলায় শক্তিশালী মিত্র বানাতে। তবে এ বছর ভারতের আয়োজনে কোয়াড সম্মেলনে ট্রাম্পের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এতে জাপানও উদ্বিগ্ন, কারণ টোকিও কোয়াডকে ইন্দো-প্যাসিফিকে চীনকে ঠেকানোর প্রধান উপায় হিসেবে দেখছে।
ইউক্রেন সংকটে প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত টানাপোড়েন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও প্রভাব ফেলতে পারে। সম্প্রতি চীনের তিয়ানজিনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মোদীর বৈঠক হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে পুতিনের ভারত সফরের সম্ভাবনা রয়েছে, যা চার বছরে প্রথম। ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত থাকলে সেটি কার্যত মস্কোর যুদ্ধ তহবিলে সহায়তা করবে।
সেপ্টেম্বরে বৈঠকের গুরুত্ব
চলতি মাসে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে ট্রাম্প-মোদীর বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা চলছে। এক সাবেক জ্যেষ্ঠ ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, “এই বৈঠক জরুরি। সমস্যাগুলো সমাধান না হলে সম্পর্ক আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
যদি বৈঠক না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক আরও নিম্নগামী হবে এবং এর প্রভাব বৈশ্বিক কূটনীতিতেও পড়বে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















