কুচকাওয়াজের পাশাপাশি নৌ টহল
চীনের সেনাবাহিনী (পিএলএ) বুধবার রাজধানী বেইজিংয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ওপর বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ করেছে। একই দিনে দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত পানিসীমায় নৌবাহিনী চালিয়েছে ‘রুটিন টহল’। চীনের মতে, এই টহল ছিল প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ।
যৌথ মহড়ার প্রেক্ষাপট
এই টহল এসেছে অস্ট্রেলিয়া ও ফিলিপাইনের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় যৌথ সামরিক মহড়া “এক্সারসাইজ অ্যালন”-এর পরপরই। ১৫ থেকে ২৯ আগস্ট চলা এ মহড়ায় কানাডার একটি যুদ্ধজাহাজ অংশ নেয় এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ পর্যবেক্ষক পাঠায়।
চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ডের মুখপাত্র সিনিয়র কর্নেল তিয়ান জুনলি বৃহস্পতিবার জানান, দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা সৃষ্টির যে কোনো চেষ্টা ব্যর্থ হবে। তার ভাষায়, চীনা বাহিনী সর্বদা সতর্ক রয়েছে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও সামুদ্রিক অধিকার রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
কূটনীতি ও সামরিক প্রদর্শনী
এই বার্তা এসেছে এমন এক সময়ে, যখন চীন ব্যস্ত এক সপ্তাহের বড় কূটনৈতিক কার্যক্রম শেষ করেছে। এর মধ্যে ছিল বেইজিংয়ের সামরিক কুচকাওয়াজ এবং তিয়ানজিনে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) সম্মেলন, যেখানে বহু রাষ্ট্রনেতা যোগ দেন এবং আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
তবে বুধবারের নৌ টহলে কত জাহাজ অংশ নিয়েছিল বা কী ধরনের জাহাজ ব্যবহার করা হয়েছিল তা প্রকাশ করেনি দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ড।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
পিএলএ-র সাবেক প্রশিক্ষক ও সামরিক বিশ্লেষক সং ঝংপিং বলেন, কুচকাওয়াজ নিজেই এক ধরনের যুদ্ধ অনুশীলন। তার মতে, সমুদ্রপথে কৌশলগত টহল এবং যুদ্ধ প্রস্তুতির কার্যক্রমও আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ফিলিপাইন যদি এই সুযোগে উত্তেজনা উসকে দিতে চায়, তবে তা ব্যর্থ হবে। আর বাইরের যেসব দেশ ফিলিপাইনকে সহায়তা করতে চায়, তারাও দু’বার ভাববে—কারণ পিএলএ’র কুচকাওয়াজ শক্তিশালী বার্তা বহন করেছে।

স্কারবরো শোল ঘিরে অনুশীলন
গত রবিবার দুই দিনের এসসিও সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে চীনা নৌ ও বিমানবাহিনী স্কারবরো শোল ঘিরে যুদ্ধ প্রস্তুতি টহল চালায়। চীনা ভাষায় এ দ্বীপকে বলা হয় হুয়াংইয়ান, আর ফিলিপাইনের ভাষায় প্যানাটাগ শোল।
দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ড জানিয়েছে, আগস্টের শুরু থেকে তারা ওই অঞ্চলে টহল ও সতর্কতা কার্যক্রম জোরদার করেছে। এতে চীনা বাহিনী নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী করেছে, অনুপ্রবেশ ও উসকানির মোকাবিলা করেছে এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে।
চীন-ফিলিপাইন উত্তেজনা
গত বৃহস্পতিবার বেইজিং ফিলিপাইনকে ‘সমস্যা সৃষ্টির’ অভিযোগে দোষারোপ করে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য দায়ী বলে উল্লেখ করে।
অস্ট্রেলিয়া-ফিলিপাইনের যৌথ মহড়ার প্রসঙ্গে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাং শিয়াওগাং বলেন, ম্যানিলা বারবার বাইরের শক্তির ওপর নির্ভর করছে।

চীন দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ চীন সাগরে টহল ও সামরিক মহড়া চালাচ্ছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কার্যক্রমের সমালোচনা করছে, যেগুলোকে তারা আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়ানোর জন্য দায়ী বলে মনে করে।
বিতর্কিত দাবিগুলো
দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর চীনের ব্যাপক দাবি রয়েছে, যা মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও ব্রুনেই চ্যালেঞ্জ করে আসছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফিলিপাইন সবচেয়ে সক্রিয়ভাবে চীনের দাবির বিরোধিতা করেছে। এর ফলে স্কারবরো শোল ও সেকেন্ড থমাস শোলের মতো বিতর্কিত এলাকায় প্রায়ই মুখোমুখি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
স্কারবরো শোল নিয়ে বেইজিং ও ম্যানিলা দু’পক্ষই দাবি করে। তবে ২০১২ সাল থেকে এটি কার্যত চীনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সেকেন্ড থমাস শোল স্প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জের একটি নিমজ্জিত প্রাচীর, যা ফিলিপাইনের ২০০ নটিক্যাল মাইল (৩৭০ কিমি) বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভেতরে হলেও চীনও এটির দাবি করে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















