স্থানীয় উৎপাদনে জোর
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম ভোক্তা বাজার ইন্দোনেশিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশীয় উৎপাদন ও সাপ্লাই চেইন গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এর সুযোগ কাজে লাগাতে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো সেখানে কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হচ্ছে। সিঙ্গাপুরের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক ওসিবিসি ইন্দোনেশিয়ায় শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলায় এই সম্প্রসারণে বড় সহায়ক হয়ে উঠছে।
ওসিবিসির সহায়তা
ওসিবিসি ইন্দোনেশিয়ার পরিচালক মার্টিন উইদজাজা জানিয়েছেন, চীনের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে তাদের কাছে যোগাযোগ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন চালু করা, যাতে পরিবহন খরচ কমে এবং সরাসরি ইন্দোনেশীয় ভোক্তাদের কাছে পণ্য বিক্রি করা যায়।
তিনি জানান, ওসিবিসির ২০০টিরও বেশি শাখা রয়েছে, যা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে বহুমুদ্রার অ্যাকাউন্ট, কার্যকরী মূলধন সহায়তা ও মার্চেন্ট সার্ভিসের মতো সুবিধা দিচ্ছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঠিক লোকেশন বাছাই থেকে শুরু করে স্থানীয় পরিবেশক খুঁজে পেতেও ব্যাংকটি সহায়তা করছে।

তরুণ প্রজন্ম ও ভোগ বাড়তি আকর্ষণ
ইন্দোনেশিয়ার তরুণ প্রজন্ম ভোগে আগ্রহী। ২০২৪ সালে ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী জনগোষ্ঠী দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৪২ লাখে, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ।
ওসিবিসির আন্তর্জাতিক এন্টারপ্রাইজ ব্যাংকিং প্রধান রয় তান বলেন, এই বিশাল বাজার নতুন পণ্য ও সেবার জন্য উন্মুক্ত। ই-কমার্সও দ্রুত প্রসার লাভ করছে। স্থানীয় কফি চেইন টোমোরো কফি বা চীনা হটপট চেইন হাইডিলাওয়ের মতো ব্র্যান্ডগুলো ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় দ্রুত বিস্তার ঘটিয়েছে।
মূল্য ও দক্ষতা সফলতার চাবিকাঠি
মার্টিন উইদজাজা আরও জানান, যেসব প্রতিষ্ঠান সফলভাবে এখানে জায়গা করে নিচ্ছে তাদের অপারেশন দক্ষ এবং খরচ নিয়ন্ত্রিত। ফলে তারা এমন দামে পণ্য দিতে পারছে যা সাধারণ ভোক্তাদের নাগালে রয়েছে। এটাই দ্রুত সম্প্রসারণের মূল কারণ।
স্থানীয় উৎপাদন বাধ্যতামূলক নীতি
চীনের শানডং-ভিত্তিক চিকিৎসা যন্ত্র প্রস্তুতকারক উইগো সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ায় বিনিয়োগ শুরু করেছে। কারণ, সরকারি নীতি অনুযায়ী স্থানীয় উপাদান ব্যবহার না করলে সরকারি ক্রয়ে অংশ নেওয়া যায় না।
উইগোর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জেনারেল ম্যানেজার ভিভিয়েন ঝ্যাং জানান, শুধুমাত্র বিক্রি নয়, উৎপাদনের মাধ্যমেই তারা ইন্দোনেশিয়ায় প্রবেশ করছে। ২০২৩ সালে ওসিবিসির ‘ওয়ান কানেক্ট’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে তারা স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ওয়ানজেক্টের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং ২০২৫ সালে যৌথভাবে চিকিৎসা সামগ্রী উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়।

যৌথ উদ্যোগ ও অভিজ্ঞতা
ঝ্যাং বলেন, নতুন বাজারে সফল হতে স্থানীয় অংশীদারের অভিজ্ঞতা জরুরি। তাই তারা ওয়ানজেক্টের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কাজ করছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৬ সালে কারখানা চালু হবে। স্থানীয় অংশীদারদের ওপর নির্ভর করেই তারা জনবল গঠন, ভাষাগত বাধা পেরোনো এবং হাসপাতাল নেটওয়ার্কের সঙ্গে কাজ শুরু করবে।
মহামারির শিক্ষা
ওয়ানজেক্ট ইন্দোনেশিয়ার কমিশনার জেসন তাবালুজান জানান, কোভিড-১৯ মহামারি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ায় সরকার স্থানীয় উৎপাদনকে অগ্রাধিকার দিতে শুরু করে। তার মতে, স্বাস্থ্য খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বিদেশি আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য স্থানীয় উৎপাদন এখন সরকারি নীতির মূল অংশে পরিণত হয়েছে।

আঞ্চলিক প্রবৃদ্ধি
শুধু ইন্দোনেশিয়াই নয়, মালয়েশিয়াতেও শিল্প খাত দ্রুত এগোচ্ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে দেশটির ডেটা সেন্টার খাতের আয় ৩.৬ বিলিয়ন রিঙ্গিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। সরকারও এই খাতে ২০.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ১২টি বড় প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে।
সারসংক্ষেপ
ইন্দোনেশিয়ার তরুণ জনসংখ্যা, বৃহৎ ভোক্তা বাজার এবং সরকারের দেশীয় উৎপাদনমুখী নীতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করছে। ওসিবিসির শক্তিশালী নেটওয়ার্ক এ প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করছে। স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে খাদ্য ও পানীয় খাত—সব জায়গাতেই নতুন প্রতিষ্ঠান দ্রুত বাজার দখল করছে। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উৎপাদনভিত্তিক শিল্প প্রবৃদ্ধির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















