শান্তিপূর্ণ সমাধানে ভারতের অবস্থান
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ নেতৃত্ব বৃহস্পতিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনে কথা বলে রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে রাজি করাতে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছে। এ সময় মোদি পুনরায় জানান, ভারত সব সময় ইউক্রেন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং দ্রুত স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার পক্ষে রয়েছে।
ফোনালাপে মূল আলোচ্য বিষয়
ফোনালাপে ভারতের সঙ্গে ইইউর মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত চূড়ান্ত করার বিষয়টিও গুরুত্ব পায়। ইউরোপীয় কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা এবং ইউরোপীয় কমিশন প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইয়েন বলেন, এ বছর ভারত সফরে এসে তারা বছর শেষের মধ্যে চুক্তি শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন।

কস্তা ও ভন ডার লেইয়েন সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধ করতে এবং শান্তির পথে অগ্রসর হতে সহায়তা করার ক্ষেত্রে।” তারা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ভারতের যোগাযোগকেও স্বাগত জানান।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ
ইইউ নেতারা বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা দুর্বল করছে, যা পুরো বিশ্বকেই ঝুঁকির মুখে ফেলছে। ভারতের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারত-ইইউ কৌশলগত অংশীদারিত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ভারতের পররাষ্ট্রনীতি ও আলোচনার অগ্রগতি
বাহ্যিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নেতারা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে মতবিনিময় করেছেন, যার মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার প্রচেষ্টা ছিল অন্যতম। মোদি স্পষ্ট করেছেন, টেকসই সমাধান যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, কেবল আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব।
এদিনই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, ভারত চায় যুদ্ধ দ্রুত শেষ হোক এবং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক।
রাশিয়া-ইউক্রেন ও মোদির কূটনৈতিক ভূমিকা

সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি দুজনেই মোদিকে ফোনে যুদ্ধ সমাপ্তির প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এই সপ্তাহে সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন সম্মেলনের ফাঁকে মোদি ও পুতিনের বৈঠকেও বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।
ভারত ২০২২ সালের রুশ আগ্রাসন প্রকাশ্যে সমালোচনা না করলেও সব সময় সরাসরি আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। মোদি পুতিন ও জেলেনস্কিকে বলেছেন, “সমাধান যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, আলোচনা কেবল তখনই সফল হবে যখন বন্দুকের ছায়া থাকবে না।”
ইইউ বৈঠকের আগে আলোচনা
এই ফোনালাপ হয় কোপেনহেগেনে শনিবার ইইউর ২৭ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের দুই দিন আগে। সেখানে আলোচনায় আসবে “অ্যান্টি-সার্কামভেনশন টুল” নামে একটি ব্যবস্থা, যা রাশিয়াকে নিষিদ্ধ পণ্য ও কাঁচামাল সরবরাহে অন্য দেশকে বাধা দেওয়ার জন্য গৃহীত হতে পারে। এ নিয়ে ভারতের ওপর নতুন চাপ তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় রপ্তানির ওপর অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপ করে দ্বিগুণ শুল্ক আরোপের পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে ভারত জ্বালানি নিরাপত্তার যুক্তি দেখিয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ভারতের মোট জ্বালানি চাহিদার প্রায় ৪০% রাশিয়া মেটাচ্ছে।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ভারতীয় বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উভয় পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা ও সরবরাহ চেইন নিয়ে অগ্রগতিকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) শিগগির শেষ করার এবং ভারত–মধ্যপ্রাচ্য–ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডর (আইএমইইসি) বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

কস্তা ও ভন ডার লেইয়েনও বলেছেন, “আমরা এ বছরের শেষের মধ্যে চুক্তি শেষ করতে বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যে এখনই অগ্রগতি দরকার।”
ভারত ও ইইউ এখন পর্যন্ত ১২ দফা আলোচনা করেছে, যার সর্বশেষটি জুলাইয়ে হয়েছে। ফোনালাপে উভয় পক্ষ ভারতে পরবর্তী ভারত-ইইউ সম্মেলন আয়োজন নিয়েও কথা বলেছে। মোদি কস্তা ও ভন ডার লেইয়েনকে ভারতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। নেতারা জানিয়েছেন, আসন্ন সম্মেলনে উভয় পক্ষ একটি যৌথ কৌশলগত কর্মসূচি তৈরি করবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















