তেলবাজারে টানা তিন দিনের পতনের পর এবার তিন সপ্তাহ পর প্রথমবারের মতো সাপ্তাহিক দরপতন ঘটছে। বৈশ্বিক সরবরাহ বাড়ার আশঙ্কা এবং যুক্তরাষ্ট্রে অপ্রত্যাশিত মজুদ বৃদ্ধি বাজারে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
বাজারের অবস্থা
শুক্রবার সিঙ্গাপুর সময় সকাল ৪টা ২০ মিনিটে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১০ সেন্ট কমে প্রতি ব্যারেল ৬৬ দশমিক ৮৯ ডলারে নেমে আসে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) ক্রুড ১৩ সেন্ট কমে দাঁড়ায় প্রতি ব্যারেল ৬৩ দশমিক ৩৫ ডলারে।
এই সপ্তাহে ব্রেন্টের দাম কমেছে ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং WTI কমেছে ১ শতাংশের মতো।
ওপেক প্লাসের ভূমিকা
বাজারে চাপের অন্যতম কারণ ওপেক প্লাসের (OPEC+) সম্ভাব্য সরবরাহ বৃদ্ধি। বিশ্লেষকদের মতে, জোটটি আগামী রোববারের বৈঠকে অক্টোবর থেকে উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করবে।
এর মানে দাঁড়ায়, বিশ্বের মোট তেলের প্রায় অর্ধেক সরবরাহকারী ওপেক প্লাস এক বছরেরও বেশি আগে থেকেই প্রায় ১৬ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল প্রতিদিনের অতিরিক্ত কাটা কমাতে শুরু করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের তেলের মজুদ বৃদ্ধি
আমেরিকার এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (EIA) তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে অপরিশোধিত তেলের মজুদ বেড়েছে ২৪ লাখ ব্যারেল। বাজারে ধারণা করা হয়েছিল মজুদ কমবে ২০ লাখ ব্যারেল। তবে রিফাইনারিগুলো রক্ষণাবেক্ষণের মৌসুমে প্রবেশ করায় মজুদ বেড়েছে।
বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান বিএমআই জানিয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তেলের দাম টিকে ছিল পরিশোধন খাতের শক্তিশালী অবস্থানের কারণে। কিন্তু আগামী মাসগুলোতে বৈশ্বিক চাহিদা কমার পাশাপাশি রিফাইনারিগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শুরু হলে লাভ কমে যেতে পারে, ফলে কাঁচা তেলের ব্যবহারও হ্রাস পাবে।
বৈশ্বিক সরবরাহের ঝুঁকি
তবে সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো বাজারকে প্রভাবিত করছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় নেতাদের বলেছেন, তারা যেন রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করে।
যদি রাশিয়ার তেল রপ্তানি কমে যায় বা অন্য কোনো বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটে, তবে বৈশ্বিক বাজারে তেলের দাম আবারও বেড়ে যেতে পারে।
সারসংক্ষেপ
- • ব্রেন্ট ও WTI উভয়ের দাম টানা তিন সেশন ধরে কমেছে
- • সাপ্তাহিক হিসাবে উভয়ের দাম ১ শতাংশের বেশি কমেছে
- • ওপেক প্লাস উৎপাদন বাড়ানোর সম্ভাবনা দেখছে
- • যুক্তরাষ্ট্রে তেলের মজুদ অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়েছে
- • রাশিয়ার সরবরাহ ঝুঁকি এখনো বাজারকে প্রভাবিত করছে
এই পরিস্থিতি তেলবাজারে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে এবং আগামী রোববারের ওপেক প্লাস বৈঠক বাজারের দিকনির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।