মাবরোকানের খ্যাতি
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া উটদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম ছিল মাবরোকান। বিশাল আকৃতির এই উটের ওজন ছিল প্রায় এক হাজার কেজি এবং তার অনন্য চেহারা তাকে আলাদা করে তুলেছিল। মৃত্যুর আগেই, ২০১০ সালের কয়েক বছর আগে, মাবরোকানকে ৫০ লাখ মার্কিন ডলারে বিক্রি করা হয়—যা ইতিহাসের অন্যতম সবচেয়ে দামী উট হয়ে ওঠে।
ক্লোন প্রযুক্তিতে পুনর্জন্ম
মাবরোকানের মৃত্যুর প্রায় এক দশক পরে সংরক্ষিত ত্বকের টিস্যু ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা তার জেনেটিক লাইন পুনরুজ্জীবিত করেন। ২০২১ সালে তার সঙ্গে জেনেটিকভাবে অভিন্ন ১১টি বাচ্চা জন্ম নেয়। এটি ছিল বৈজ্ঞানিক সাফল্যের একটি বড় অর্জন, যা তার রক্তরেখার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে।
২০২০ সাল থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত বায়োটেক রিসার্চ সেন্টার (UAEBRC) প্রায় ৪০০ উট ক্লোন করেছে। এর মধ্যে সাদা রঙের ক্লোন উটও প্রদর্শিত হয়েছে আবুধাবির আন্তর্জাতিক হান্টিং ও অশ্ব প্রদর্শনীতে (আদিহেক্স–ADIHEX), যেখানে মাবরোকানের ক্লোনরাও বিশেষ আকর্ষণ ছিল।

বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
UAEBRC-এর পশু চিকিৎসক ড. ঘুবাইশা আল কিতবে জানান,
“প্রথম ক্লোনিং করা হয় ২০২০ সালে। এতদিনে প্রায় ৪০০ উট ক্লোন করা হয়েছে। আমাদের কাজের মান অত্যন্ত নিখুঁত এবং উন্নত।”
তিনি আরও জানান, কেন্দ্রটি উট বিক্রি করে না, বরং ক্লোনিং সেবা প্রদান করে। যদি কারও বিশেষ ধরনের উট থাকে, তারা চাইলে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে ক্লোন করাতে পারেন।
UAEBRC-এর প্রধান নির্বাহী ড. উসুক হোয়াং বলেন,
“প্রতিবার আমি এমন কোনো প্রাণী দেখি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মহত্ত্ব আমাকে অভিভূত করে। ক্লোনিং মানে শুধু জেনেটিক কপি তৈরি করা, এখানে ‘ঈশ্বরের খেলা’ করার কোনো বিষয় নেই।”
মাবরোকানের মূল্য ও উত্তরাধিকার
মাবরোকানের একটি ক্লোন বর্তমানে প্রায় ৬৬ মিলিয়ন দিরহামে মূল্যায়িত হয়েছে। এটি প্রমাণ করে, অভিজাত রক্তরেখা সংরক্ষণের পেছনে বিশাল সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব জড়িয়ে আছে।

ড. অ্যালেক্স টিনসন, প্রেসিডেনশিয়াল ক্যামেল সেন্টারের গবেষণা পরিচালক, স্মরণ করেন,
“মাবরোকান প্রথম উট যে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় পূর্ণ ১০ এর মধ্যে ১০ পেয়েছিল। সে বিশাল, শক্তিশালী ছিল, সিংহের মতো দাঁত ছিল তার। তার রাগী স্বভাব এবং বিশাল আকৃতির কারণে তাকে সামলানো অনেক কষ্টকর ছিল।”
জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে মাবরোকান
মাবরোকানের গল্প নিয়ে নেটফ্লিক্সে নির্মিত হয়েছে তথ্যচিত্র King of Clones, যেখানে তার খ্যাতি, ক্লোনিং প্রযুক্তি এবং বৈজ্ঞানিক সাফল্যের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে।
মাবরোকান শুধু একটি সৌন্দর্যের প্রতীকই নয়, বরং আধুনিক বিজ্ঞানের হাত ধরে সংরক্ষিত এক কিংবদন্তি। তার উত্তরসূরীরা আজও বেঁচে আছে এবং ভবিষ্যতেও তার ঐতিহ্যকে ধরে রাখবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 

























