০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
ডেভনে আবার ফিরতে পারে বন্য বিড়াল: দুই বছরের গবেষণায় নতুন সম্ভাবনা প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩২৭) নন-প্রফিট কাঠামোতে যাচ্ছে মাষ্টডন, সিইও পদ ছাড়ছেন প্রতিষ্ঠাতা ইউজেন রখকো” ইউটিউবে রেকর্ড ভিউ, তবু ‘বেবি শার্ক’ নির্মাতার আয় সীমিত কেন” চীনের এআই দৌড়ে তীব্র প্রতিযোগিতা, লোকসানে কেঁপে উঠল বাইদু গোপন সসের নিরাপত্তায় নতুন জোর দিচ্ছে রেইজিং কেইন’স  সিডনিতে জমজমাট ২০২৫ এআরআইএ অ্যাওয়ার্ড, এগিয়ে নিনাজারাচি ও ডম ডোলা তাইওয়ানের স্যাটেলাইট যুগের সূচনা: স্পেসএক্স উৎক্ষেপণে বড় অগ্রগতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৯) শেয়ারবাজারে টানা উত্থান, বিনিয়োগকারীদের মনোভাব আরও ইতিবাচক

রোহিঙ্গাদের জন্য আসন্ন খাদ্য সংকটের সতর্কবার্তা, নভেম্বরের শেষ নাগাদ অর্থায়ন ফুরিয়ে যাবে

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)–এর উপ নির্বাহী পরিচালক ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা কার্ল স্কাউ জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি সহায়তা অব্যাহত রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন হলেও নভেম্বরের শেষ নাগাদ সংস্থাটির অর্থায়ন ফুরিয়ে যাবে।

রোহিঙ্গারা সম্পূর্ণ সহায়তার ওপর নির্ভরশীল

স্কাউ বলেন, রোহিঙ্গাদের আর কোথাও যাওয়ার পথ নেই। তারা কাজ করতে পারে না, স্থানীয় সমাজে মিশতে পারে না এবং রাখাইনে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয় বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে। ফলে তারা শতভাগ ডব্লিউএফপি–এর সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। তিনি সতর্ক করে দেন, সহায়তা কমে গেলে বা বন্ধ হয়ে গেলে রোহিঙ্গারা নেতিবাচক উপায়ে টিকে থাকার চেষ্টা করবে, যা আরও সংকট তৈরি করবে।

অর্থ সংকটে কার্যক্রম

স্কাউ বাংলাদেশের জনগণ ও কক্সবাজারের স্থানীয়দের উদারতা ও সহযোগিতার প্রশংসা করেন। তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের জন্য যে খাদ্য সরবরাহ করা হয়, তা বাংলাদেশের ভেতর থেকে কেনা হয়, যা অর্থনীতিকেও সমর্থন করে। তবে নভেম্বরের পর থেকে এ কার্যক্রম চালানোর মতো বাজেট তাদের নেই।
ডব্লিউএফপি বর্তমানে শিবিরের সব মানুষকে মাসিক খাদ্য সরবরাহ করছে। এ কার্যক্রম বন্ধ হলে মানুষ ক্ষুধার্ত হয়ে পড়বে এবং ক্যাম্পের বাইরেও খাদ্যের সন্ধানে যেতে বাধ্য হবে।

তহবিল সংগ্রহে নতুন উদ্যোগ

প্রশ্নের জবাবে স্কাউ বলেন, তহবিল সংকট মোকাবেলায় তারা নতুন উৎস খুঁজছেন। যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ শতাংশ অর্থ দিয়েছে, তবে অন্যদেরও এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য তারা আসিয়ান, উপসাগরীয় দেশগুলো (সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত) এবং ওআইসি সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, আগামী ছয় মাসের জন্য তাদের জরুরি ভিত্তিতে ৬ কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন। এক বছরের মোট প্রয়োজন ১৬ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার।

দক্ষতা ও সাশ্রয়ী কার্যক্রম

স্কাউ জানান, ডব্লিউএফপি অত্যন্ত দক্ষভাবে কাজ করছে—প্রতিটি ডলারের ৮২ সেন্ট সরাসরি রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যয় হয়। বিভিন্ন সাশ্রয়ী পদক্ষেপের ফলে শুধু ঢাকা অফিস থেকেই ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার সাশ্রয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ৫০ বছরের অংশীদারিত্ব

তিনি মনে করিয়ে দেন, রোহিঙ্গা সহায়তার বাইরেও বাংলাদেশে ডব্লিউএফপি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। ১৯৭৪ সালে অফিস স্থাপনের পর থেকে তারা জরুরি ত্রাণ ও উন্নয়নমূলক কাজে যুক্ত রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে তাদের বার্ষিক বাজেট ৩০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি।
এতে রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা দেওয়া হয়। পাশাপাশি স্কুল মিলস, জলবায়ু অভিযোজন এবং জাতীয় খাদ্য ব্যবস্থার শক্তিশালীকরণেও সহযোগিতা করছে ডব্লিউএফপি।

স্কুল মিলস কর্মসূচির গুরুত্ব

স্কাউ বলেন, স্কুলে খাবার দেওয়ার কর্মসূচি শিশুদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষায় আগ্রহ ও উপস্থিতি বাড়ায়। এ কর্মসূচি স্থানীয় অর্থনীতিকেও সহায়তা করে, কারণ স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে খাবার কেনা হয় এবং স্থানীয় নারীরা রান্নার কাজে যুক্ত হন।
বাংলাদেশ সরকার এখন জাতীয় বাজেট থেকে এ কর্মসূচি সম্প্রসারণে অঙ্গীকারবদ্ধ। ডব্লিউএফপি এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায়।

আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা

আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ফাঁকে রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের সংখ্যালঘুদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে অংশ নেবে ডব্লিউএফপি। স্কাউ বলেন, গাজা, ইউক্রেন, সুদানের মতো বৈশ্বিক সংকটের কারণে মনোযোগ ও সম্পদের প্রতিযোগিতা তীব্র। তাই বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা সংকটকে আন্তর্জাতিক এজেন্ডায় ধরে রাখতে হবে।
তবে তিনি বাস্তবতা তুলে ধরে বলেন, বৈশ্বিকভাবে ডব্লিউএফপি–এর অর্থায়ন ইতিমধ্যে ৪০ শতাংশ কমে গেছে, ফলে বহু দেশে তাদের কার্যক্রম কাটছাঁট করতে হচ্ছে।

কার্ল স্কাউয়ের বার্তা স্পষ্ট—রোহিঙ্গারা তাদের জীবিকার জন্য পুরোপুরি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এ সহায়তা বন্ধ হলে তা কেবল মানবিক সংকটই নয়, আরও বড় সামাজিক অস্থিরতার জন্ম দেবে। তাই বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে এখনই এগিয়ে এসে নতুন অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ডেভনে আবার ফিরতে পারে বন্য বিড়াল: দুই বছরের গবেষণায় নতুন সম্ভাবনা

রোহিঙ্গাদের জন্য আসন্ন খাদ্য সংকটের সতর্কবার্তা, নভেম্বরের শেষ নাগাদ অর্থায়ন ফুরিয়ে যাবে

১১:২৮:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)–এর উপ নির্বাহী পরিচালক ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা কার্ল স্কাউ জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি সহায়তা অব্যাহত রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন হলেও নভেম্বরের শেষ নাগাদ সংস্থাটির অর্থায়ন ফুরিয়ে যাবে।

রোহিঙ্গারা সম্পূর্ণ সহায়তার ওপর নির্ভরশীল

স্কাউ বলেন, রোহিঙ্গাদের আর কোথাও যাওয়ার পথ নেই। তারা কাজ করতে পারে না, স্থানীয় সমাজে মিশতে পারে না এবং রাখাইনে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয় বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে। ফলে তারা শতভাগ ডব্লিউএফপি–এর সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। তিনি সতর্ক করে দেন, সহায়তা কমে গেলে বা বন্ধ হয়ে গেলে রোহিঙ্গারা নেতিবাচক উপায়ে টিকে থাকার চেষ্টা করবে, যা আরও সংকট তৈরি করবে।

অর্থ সংকটে কার্যক্রম

স্কাউ বাংলাদেশের জনগণ ও কক্সবাজারের স্থানীয়দের উদারতা ও সহযোগিতার প্রশংসা করেন। তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের জন্য যে খাদ্য সরবরাহ করা হয়, তা বাংলাদেশের ভেতর থেকে কেনা হয়, যা অর্থনীতিকেও সমর্থন করে। তবে নভেম্বরের পর থেকে এ কার্যক্রম চালানোর মতো বাজেট তাদের নেই।
ডব্লিউএফপি বর্তমানে শিবিরের সব মানুষকে মাসিক খাদ্য সরবরাহ করছে। এ কার্যক্রম বন্ধ হলে মানুষ ক্ষুধার্ত হয়ে পড়বে এবং ক্যাম্পের বাইরেও খাদ্যের সন্ধানে যেতে বাধ্য হবে।

তহবিল সংগ্রহে নতুন উদ্যোগ

প্রশ্নের জবাবে স্কাউ বলেন, তহবিল সংকট মোকাবেলায় তারা নতুন উৎস খুঁজছেন। যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ শতাংশ অর্থ দিয়েছে, তবে অন্যদেরও এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য তারা আসিয়ান, উপসাগরীয় দেশগুলো (সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত) এবং ওআইসি সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, আগামী ছয় মাসের জন্য তাদের জরুরি ভিত্তিতে ৬ কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন। এক বছরের মোট প্রয়োজন ১৬ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার।

দক্ষতা ও সাশ্রয়ী কার্যক্রম

স্কাউ জানান, ডব্লিউএফপি অত্যন্ত দক্ষভাবে কাজ করছে—প্রতিটি ডলারের ৮২ সেন্ট সরাসরি রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যয় হয়। বিভিন্ন সাশ্রয়ী পদক্ষেপের ফলে শুধু ঢাকা অফিস থেকেই ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার সাশ্রয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ৫০ বছরের অংশীদারিত্ব

তিনি মনে করিয়ে দেন, রোহিঙ্গা সহায়তার বাইরেও বাংলাদেশে ডব্লিউএফপি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। ১৯৭৪ সালে অফিস স্থাপনের পর থেকে তারা জরুরি ত্রাণ ও উন্নয়নমূলক কাজে যুক্ত রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে তাদের বার্ষিক বাজেট ৩০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি।
এতে রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা দেওয়া হয়। পাশাপাশি স্কুল মিলস, জলবায়ু অভিযোজন এবং জাতীয় খাদ্য ব্যবস্থার শক্তিশালীকরণেও সহযোগিতা করছে ডব্লিউএফপি।

স্কুল মিলস কর্মসূচির গুরুত্ব

স্কাউ বলেন, স্কুলে খাবার দেওয়ার কর্মসূচি শিশুদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষায় আগ্রহ ও উপস্থিতি বাড়ায়। এ কর্মসূচি স্থানীয় অর্থনীতিকেও সহায়তা করে, কারণ স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে খাবার কেনা হয় এবং স্থানীয় নারীরা রান্নার কাজে যুক্ত হন।
বাংলাদেশ সরকার এখন জাতীয় বাজেট থেকে এ কর্মসূচি সম্প্রসারণে অঙ্গীকারবদ্ধ। ডব্লিউএফপি এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায়।

আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা

আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ফাঁকে রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের সংখ্যালঘুদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে অংশ নেবে ডব্লিউএফপি। স্কাউ বলেন, গাজা, ইউক্রেন, সুদানের মতো বৈশ্বিক সংকটের কারণে মনোযোগ ও সম্পদের প্রতিযোগিতা তীব্র। তাই বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা সংকটকে আন্তর্জাতিক এজেন্ডায় ধরে রাখতে হবে।
তবে তিনি বাস্তবতা তুলে ধরে বলেন, বৈশ্বিকভাবে ডব্লিউএফপি–এর অর্থায়ন ইতিমধ্যে ৪০ শতাংশ কমে গেছে, ফলে বহু দেশে তাদের কার্যক্রম কাটছাঁট করতে হচ্ছে।

কার্ল স্কাউয়ের বার্তা স্পষ্ট—রোহিঙ্গারা তাদের জীবিকার জন্য পুরোপুরি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এ সহায়তা বন্ধ হলে তা কেবল মানবিক সংকটই নয়, আরও বড় সামাজিক অস্থিরতার জন্ম দেবে। তাই বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে এখনই এগিয়ে এসে নতুন অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে।