০৪:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
ডেভনে আবার ফিরতে পারে বন্য বিড়াল: দুই বছরের গবেষণায় নতুন সম্ভাবনা প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩২৭) নন-প্রফিট কাঠামোতে যাচ্ছে মাষ্টডন, সিইও পদ ছাড়ছেন প্রতিষ্ঠাতা ইউজেন রখকো” ইউটিউবে রেকর্ড ভিউ, তবু ‘বেবি শার্ক’ নির্মাতার আয় সীমিত কেন” চীনের এআই দৌড়ে তীব্র প্রতিযোগিতা, লোকসানে কেঁপে উঠল বাইদু গোপন সসের নিরাপত্তায় নতুন জোর দিচ্ছে রেইজিং কেইন’স  সিডনিতে জমজমাট ২০২৫ এআরআইএ অ্যাওয়ার্ড, এগিয়ে নিনাজারাচি ও ডম ডোলা তাইওয়ানের স্যাটেলাইট যুগের সূচনা: স্পেসএক্স উৎক্ষেপণে বড় অগ্রগতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৯) শেয়ারবাজারে টানা উত্থান, বিনিয়োগকারীদের মনোভাব আরও ইতিবাচক

চবি কি কারও জমিদারি? সাধারণ শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে প্রতিরোধের আওয়াজ

রাতের আঁধারে হঠাৎ উত্তেজনা

শুক্রবার গভীর রাত। চারপাশ নিস্তব্ধ। অথচ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস তখন গমগম করছে শত শত তরুণ-তরুণীর স্লোগানে। গোলচত্বর, আবাসিক হলের সামনে ভিড় জমে গেছে। শিক্ষার্থীরা গলা ফাটিয়ে বলছেন—“চবি নিয়ে জমিদারি চলবে না”, “আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না”, “সন্ত্রাসীদের দালাল হুঁশিয়ার”।
একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরই এই বিক্ষোভ। ভিডিওতে দেখা যায়, জামায়াতে ইসলামীর নেতা সিরাজুল ইসলাম দাবি করেছেন—চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নাকি তাঁদের পৈতৃক সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত, তাঁরা এলাকার মালিক। তাঁর এমন মন্তব্য শিক্ষার্থীদের চোখে অপমানজনক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ ঠেকেছে। আর তাই মুহূর্তেই উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়।

বিতর্কিত বক্তব্যের জন্ম

এর আগের দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের জোবরা গ্রামে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সিরাজুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের পৈতৃক সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমরা এই এলাকার মালিক। জমিদারের ওপর কেউ হস্তক্ষেপ করলে তা মেনে নেব না। তিনি আরও যোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় যদি আমাদের যথাযথ সম্মান না করেআমরা জনগণ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।


এমন বক্তব্যে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা মনে করেন, একটি জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সম্পত্তি হতে পারে না। জ্ঞানচর্চার জায়গায় জমিদারির ভাষা মানা যায় না।

শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ: রাতভর প্রতিবাদ

ভিডিওটি শুক্রবার রাতে ছড়িয়ে পড়তেই একে একে আবাসিক হল থেকে শিক্ষার্থীরা নেমে আসেন। কেউ দল বেঁধে আসেন, কেউ একা ছুটে আসেন প্রধান গোলচত্বরে। রাতের আঁধারে এক অদ্ভুত দৃশ্য—শত শত তরুণ মশাল হাতে স্লোগান দিচ্ছেন, পোস্টার হাতে দাঁড়িয়ে আছেন।
তাদের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট: বিশ্ববিদ্যালয় কোনো রাজনৈতিক দলের “সাম্রাজ্য” হতে পারে না। এক ছাত্রীর ভাষায়, আমরা এখানে পড়তে এসেছিকারও দখলদারির শিকার হতে নয়।

ছাত্রশিবির ও রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টি

এই ঘটনায় নতুন মাত্রা যোগ করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিক্রিয়া। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এক বিবৃতিতে সিরাজুল ইসলামের বক্তব্যকে “অপমানজনক ও অহংকারী” বলে নিন্দা জানায়। তবে একই সঙ্গে তারা অভিযোগ তোলে, স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতারাই নাকি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় যুক্ত ছিলেন।


অন্যদিকে বিএনপি নেতারা এই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন। তাঁদের দাবি, ছাত্রশিবির রাজনৈতিক স্বার্থে সংঘর্ষের দায় বিএনপি ও ছাত্রদলের ওপর চাপাচ্ছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা আসলে উল্টো পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস: রাজনৈতিক ছায়া

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা পাহাড়ি পরিবেশে দাঁড়িয়ে থাকা এই প্রতিষ্ঠান দ্রুত দেশের অন্যতম প্রধান উচ্চশিক্ষা কেন্দ্রে পরিণত হয়। তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এখানে রাজনীতি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে।
১৯৮০ ও ৯০–এর দশকে একাধিকবার ছাত্রসংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। কখনো ছাত্রশিবির, কখনো ছাত্রলীগ, আবার কখনো ছাত্রদল—প্রতিটি সংগঠনই এখানে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে। শিক্ষার্থীরা তাই অভ্যস্ত রাজনীতির উত্তাপের সঙ্গে। তবুও “জমিদারি” শব্দটি তাদের কানে লেগেছে ভিন্নরকম দুঃসাহস হিসেবে।

শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা: ভয় আর প্রতিরোধ

বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র বলেন, আমরা প্রায়ই সংঘর্ষ দেখিকিন্তু এবার বিষয়টা অন্যরকম। এখানে আমাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে কেউ নিজের সম্পত্তি বলবেএটা মেনে নেওয়া যায় না।
একজন ছাত্রী যোগ করলেন, চবি কারও জমিদারি নয়এটা আমাদের সবার। এখানে আমরা স্বাধীনভাবে পড়াশোনা করতে চাই।
শিক্ষার্থীদের বক্তব্যে বোঝা যায়, তারা শুধু ক্ষুব্ধ নন, বরং নিজেদের অধিকার রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

প্রশাসনের নীরবতা

এত বড় উত্তেজনা ও বিক্ষোভের পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের হতাশা আরও বেড়েছে।
তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র বলেন, প্রশাসন সব সময় চুপ থাকে। অথচ যখন আমাদের আন্দোলন হয়তখনই তারা কঠোর হয়ে ওঠে। প্রশাসনের এই নিরব ভূমিকা শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন নয়, তবে বারবার তা হতাশার জন্ম দিচ্ছে।

রাজনৈতিক দখলদারির দীর্ঘ ইতিহাস

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শুধু নয়, দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্ররাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দখলদারি আর সংঘর্ষের সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতির ছায়ায় শিক্ষার্থীরা যেমন নিজেদের অধিকার রক্ষায় দাঁড়ায়, তেমনি প্রায়ই তারা রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক দখলদারি অব্যাহত থাকলে একদিকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, অন্যদিকে গবেষণা ও শিক্ষার পরিবেশও নষ্ট হয়ে যায়।

ভবিষ্যতের প্রশ্ন

এই ঘটনাই আবার সামনে এনে দিল সেই পুরোনো প্রশ্ন—বিশ্ববিদ্যালয় কি সত্যিই শিক্ষার স্বাধীন জায়গা, নাকি রাজনীতির নিয়ন্ত্রণকক্ষ? শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে যে ক্ষোভ শোনা গেল, তা হয়তো এক নতুন প্রতিরোধের সূচনা। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব কি এই ক্ষোভ বুঝতে পারবে?

বিশ্ববিদ্যালয় কার?

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্নপূরণের জায়গা। এ বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ব্যক্তির, কোনো দলের, কিংবা কোনো গোষ্ঠীর সম্পত্তি নয়। এটি বাংলাদেশের মানুষের।
শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত বার্তাই তাই স্পষ্ট—চবি কোনো জমিদারি নয়, এটি জ্ঞানচর্চা ও মুক্ত চিন্তার জায়গা। আর সেই জায়গা রক্ষায় তরুণরা প্রস্তুত সব সময়।

জনপ্রিয় সংবাদ

ডেভনে আবার ফিরতে পারে বন্য বিড়াল: দুই বছরের গবেষণায় নতুন সম্ভাবনা

চবি কি কারও জমিদারি? সাধারণ শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে প্রতিরোধের আওয়াজ

০৪:০৭:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রাতের আঁধারে হঠাৎ উত্তেজনা

শুক্রবার গভীর রাত। চারপাশ নিস্তব্ধ। অথচ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস তখন গমগম করছে শত শত তরুণ-তরুণীর স্লোগানে। গোলচত্বর, আবাসিক হলের সামনে ভিড় জমে গেছে। শিক্ষার্থীরা গলা ফাটিয়ে বলছেন—“চবি নিয়ে জমিদারি চলবে না”, “আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না”, “সন্ত্রাসীদের দালাল হুঁশিয়ার”।
একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরই এই বিক্ষোভ। ভিডিওতে দেখা যায়, জামায়াতে ইসলামীর নেতা সিরাজুল ইসলাম দাবি করেছেন—চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নাকি তাঁদের পৈতৃক সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত, তাঁরা এলাকার মালিক। তাঁর এমন মন্তব্য শিক্ষার্থীদের চোখে অপমানজনক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ ঠেকেছে। আর তাই মুহূর্তেই উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়।

বিতর্কিত বক্তব্যের জন্ম

এর আগের দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের জোবরা গ্রামে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সিরাজুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের পৈতৃক সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমরা এই এলাকার মালিক। জমিদারের ওপর কেউ হস্তক্ষেপ করলে তা মেনে নেব না। তিনি আরও যোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় যদি আমাদের যথাযথ সম্মান না করেআমরা জনগণ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।


এমন বক্তব্যে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা মনে করেন, একটি জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সম্পত্তি হতে পারে না। জ্ঞানচর্চার জায়গায় জমিদারির ভাষা মানা যায় না।

শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ: রাতভর প্রতিবাদ

ভিডিওটি শুক্রবার রাতে ছড়িয়ে পড়তেই একে একে আবাসিক হল থেকে শিক্ষার্থীরা নেমে আসেন। কেউ দল বেঁধে আসেন, কেউ একা ছুটে আসেন প্রধান গোলচত্বরে। রাতের আঁধারে এক অদ্ভুত দৃশ্য—শত শত তরুণ মশাল হাতে স্লোগান দিচ্ছেন, পোস্টার হাতে দাঁড়িয়ে আছেন।
তাদের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট: বিশ্ববিদ্যালয় কোনো রাজনৈতিক দলের “সাম্রাজ্য” হতে পারে না। এক ছাত্রীর ভাষায়, আমরা এখানে পড়তে এসেছিকারও দখলদারির শিকার হতে নয়।

ছাত্রশিবির ও রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টি

এই ঘটনায় নতুন মাত্রা যোগ করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিক্রিয়া। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এক বিবৃতিতে সিরাজুল ইসলামের বক্তব্যকে “অপমানজনক ও অহংকারী” বলে নিন্দা জানায়। তবে একই সঙ্গে তারা অভিযোগ তোলে, স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতারাই নাকি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় যুক্ত ছিলেন।


অন্যদিকে বিএনপি নেতারা এই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন। তাঁদের দাবি, ছাত্রশিবির রাজনৈতিক স্বার্থে সংঘর্ষের দায় বিএনপি ও ছাত্রদলের ওপর চাপাচ্ছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা আসলে উল্টো পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস: রাজনৈতিক ছায়া

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা পাহাড়ি পরিবেশে দাঁড়িয়ে থাকা এই প্রতিষ্ঠান দ্রুত দেশের অন্যতম প্রধান উচ্চশিক্ষা কেন্দ্রে পরিণত হয়। তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এখানে রাজনীতি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে।
১৯৮০ ও ৯০–এর দশকে একাধিকবার ছাত্রসংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। কখনো ছাত্রশিবির, কখনো ছাত্রলীগ, আবার কখনো ছাত্রদল—প্রতিটি সংগঠনই এখানে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে। শিক্ষার্থীরা তাই অভ্যস্ত রাজনীতির উত্তাপের সঙ্গে। তবুও “জমিদারি” শব্দটি তাদের কানে লেগেছে ভিন্নরকম দুঃসাহস হিসেবে।

শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা: ভয় আর প্রতিরোধ

বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র বলেন, আমরা প্রায়ই সংঘর্ষ দেখিকিন্তু এবার বিষয়টা অন্যরকম। এখানে আমাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে কেউ নিজের সম্পত্তি বলবেএটা মেনে নেওয়া যায় না।
একজন ছাত্রী যোগ করলেন, চবি কারও জমিদারি নয়এটা আমাদের সবার। এখানে আমরা স্বাধীনভাবে পড়াশোনা করতে চাই।
শিক্ষার্থীদের বক্তব্যে বোঝা যায়, তারা শুধু ক্ষুব্ধ নন, বরং নিজেদের অধিকার রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

প্রশাসনের নীরবতা

এত বড় উত্তেজনা ও বিক্ষোভের পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের হতাশা আরও বেড়েছে।
তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র বলেন, প্রশাসন সব সময় চুপ থাকে। অথচ যখন আমাদের আন্দোলন হয়তখনই তারা কঠোর হয়ে ওঠে। প্রশাসনের এই নিরব ভূমিকা শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন নয়, তবে বারবার তা হতাশার জন্ম দিচ্ছে।

রাজনৈতিক দখলদারির দীর্ঘ ইতিহাস

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শুধু নয়, দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্ররাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দখলদারি আর সংঘর্ষের সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতির ছায়ায় শিক্ষার্থীরা যেমন নিজেদের অধিকার রক্ষায় দাঁড়ায়, তেমনি প্রায়ই তারা রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক দখলদারি অব্যাহত থাকলে একদিকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, অন্যদিকে গবেষণা ও শিক্ষার পরিবেশও নষ্ট হয়ে যায়।

ভবিষ্যতের প্রশ্ন

এই ঘটনাই আবার সামনে এনে দিল সেই পুরোনো প্রশ্ন—বিশ্ববিদ্যালয় কি সত্যিই শিক্ষার স্বাধীন জায়গা, নাকি রাজনীতির নিয়ন্ত্রণকক্ষ? শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে যে ক্ষোভ শোনা গেল, তা হয়তো এক নতুন প্রতিরোধের সূচনা। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব কি এই ক্ষোভ বুঝতে পারবে?

বিশ্ববিদ্যালয় কার?

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্নপূরণের জায়গা। এ বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ব্যক্তির, কোনো দলের, কিংবা কোনো গোষ্ঠীর সম্পত্তি নয়। এটি বাংলাদেশের মানুষের।
শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত বার্তাই তাই স্পষ্ট—চবি কোনো জমিদারি নয়, এটি জ্ঞানচর্চা ও মুক্ত চিন্তার জায়গা। আর সেই জায়গা রক্ষায় তরুণরা প্রস্তুত সব সময়।