০৪:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
চীনের জলসীমায় স্টারলিংক ব্যবহার: বিদেশি জাহাজকে জরিমানা প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪২) সংযুক্ত আরব আমিরাতে অস্থির আবহাওয়া: বৃষ্টি ও দুর্ঘটনায় দুবাই–শারজাহজুড়ে সন্ধ্যায় তীব্র যানজট অসম্ভবকে সম্ভব মনে করা অভিনেত্রী মিনি ড্রাইভার, পঞ্চান্নেও ব্যস্ত ও আত্মবিশ্বাসী জীবন যে সিনেমাটি দেখতে আমি ভয় পেয়েছিলাম অস্ট্রেলিয়ার ক্ষত সারাতে লড়াই: বন্ডি বিচ হত্যাযজ্ঞের পর ঐক্য আর বিভাজনের সন্ধিক্ষণ ঢাকায় উদীচী কার্যালয়ে হামলার পর অগ্নিকাণ্ড প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের তীব্র নিন্দা, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি প্রথম আলোর কারওয়ান বাজার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় বিচার দাবি নিক্কেই এশিয়া প্রতিবেদন: বাংলাদেশ –ভারত সম্পর্কের অবনতি

মোবাইল ফোন নিষিদ্ধে শিক্ষার ফলাফল

ফোনবিহীন শ্রেণিকক্ষের পক্ষে নতুন গবেষণা

আমেরিকায় বিরলভাবে দুই দলের ঐক্যমত্য তৈরি হয়েছে একটি বিষয়ে—স্কুলে ফোন নিষিদ্ধ করা। নতুন শিক্ষাবর্ষে ১৭টি অঙ্গরাজ্যের কোটি কোটি শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে আর ফোন নিয়ে যেতে পারবে না। এর ফলে মোট ৩৫টি অঙ্গরাজ্যে এ ধরনের আইন বা নিয়ম কার্যকর হলো। শুধু আমেরিকাই নয়, বিশ্বজুড়েই অন্তত ৪০ শতাংশ জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় ফোন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর বা আলোচনায় আছে। উদ্দেশ্য একটাই—শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বাড়ানো। তবে এতদিন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ খুব শক্ত ছিল না। ছোট ছোট গবেষণা হয়েছে, কিন্তু ফল মিশ্র।

ভারতের এক বড়সড় গবেষণা

পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়ারটন স্কুলের অধ্যাপক আলপ সুনগুর নেতৃত্বে একটি নতুন র‌্যান্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়াল (আরসিটি) গবেষণা স্পষ্ট প্রমাণ দিয়েছে। উত্তর ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিশোর বিকাশ বিশেষজ্ঞ আন মাহু এই গবেষণাকে যুগান্তকারী বলেছেন। তার মতে, এটি শক্ত প্রমাণ দেয় যে শ্রেণিকক্ষে ফোন নিষিদ্ধ করলে শিক্ষার মান উন্নত হয়।

গবেষণায় ভারতের ১০টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৬৯৫৫ জন শিক্ষার্থী এবং ২,০০০ কোর্স অন্তর্ভুক্ত ছিল। শিক্ষার্থীদের একাংশকে ফোন জমা দিতে বাধ্য করা হয়, অন্যরা ফোন রেখেছিল। ফলাফল দেখায়—ফোন জমা দেওয়া শিক্ষার্থীদের ফল ভালো হয়। সবচেয়ে বেশি উন্নতি দেখা গেছে প্রথম বর্ষের দুর্বল শিক্ষার্থীদের মধ্যে এবং বিজ্ঞান ও গণিত ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে। গড়-পরতা উন্নতির হার ছিল ০.০৮৬ স্ট্যান্ডার্ড ডিভিয়েশন, যা ছোট মনে হলেও শিক্ষাব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সুনগুর ভাষায়, এটি এক সেমিস্টারের জন্য মাঝারি মানের শিক্ষক বদলে একজন উৎকৃষ্ট শিক্ষক দেওয়ার সমান।

ফলাফলের তাৎপর্য

অর্থনীতিবিদ লুই-ফিলিপ বেল্যান্ড বলেন, দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য এমন সামান্য উন্নতিও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি পাস-ফেল, ড্রপআউট কমানো ও গ্র্যাজুয়েশন হার বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য ফোন রাখায় তেমন প্রভাব পড়েনি, বরং কিছু ক্ষেত্রে সামান্য ইতিবাচক ছিল।

গবেষণার সীমাবদ্ধতা ও বৈচিত্র্য

তবুও বিতর্ক থামছে না। বিভিন্ন দেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট আলাদা। ভারতীয় প্রেক্ষাপটের ফলাফল সব জায়গায় একইভাবে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। পাশাপাশি, দেখা গেছে, ফোন নিষিদ্ধের সুফল বিজ্ঞান-গণিতের বাইরে অন্যান্য বিষয়ে বেশি দৃশ্যমান। এর কারণ গবেষকেরা কেবল অনুমান করতে পেরেছেন।

আগের কিছু গবেষণার সঙ্গেও এ ফল মিল খুঁজে পাওয়া গেছে। যেমন—নরওয়ের কিশোর ও ব্রিটেনের স্কুলশিক্ষার্থীদের ওপর হওয়া গবেষণায়ও দেখা গেছে, ফোন নিষিদ্ধ করা দরিদ্র ও দুর্বল শিক্ষার্থীদের ফল ভালো করেছে।

অতিরিক্ত সুফল

সুনগুর গবেষণা আরও দেখিয়েছে, ফোনবিহীন শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনার পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে অনর্থক আলাপ ও বিশৃঙ্খলা কমেছে। শিক্ষকরা নিজেরাও ফোন কম ব্যবহার করেছেন এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেশি সম্পৃক্ত হয়েছেন। ফোন না থাকায় নকলের সুযোগও কমেছে। ২০১৭ সালের এক জরিপে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী স্বীকার করেছিল তারা ফোন ব্যবহার করে পরীক্ষায় নকল করেছে।

শিক্ষার্থীদের সমর্থন

ফোন নিষিদ্ধকরণ সহজে কার্যকর করা যায়, এতে আলাদা প্রশিক্ষণ বা বিনিয়োগ লাগে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—শিক্ষার্থীরাও এর সুফল বুঝতে শুরু করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এক সেমিস্টার ফোনবিহীন ক্লাস করার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিষেধাজ্ঞার পক্ষে সমর্থন ২০ শতাংশ বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি সমর্থন এসেছে পুরোপুরি ফোনমুক্ত স্কুল ব্যবস্থার পক্ষে।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—ট্যাবলেট ও ল্যাপটপ নিয়ে কী হবে? এগুলো শিক্ষাসাহায্য হিসেবে ব্যবহার হলেও মনোযোগ নষ্টের সুযোগ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কলেজ গবেষণায় দেখা গেছে, শ্রেণিকক্ষে কম্পিউটার ব্যবহার করলে পরীক্ষার ফল খারাপ হয়েছে। সুইডেনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফোন নিষিদ্ধ করেও কোনো প্রভাব পড়েনি, কারণ সেখানে ডিজিটাল প্রযুক্তি শিক্ষার সঙ্গে এতটাই যুক্ত যে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়নি।

শিক্ষা খাতে ফোন নিষিদ্ধকরণ এখন প্রমাণভিত্তিক নীতিতে রূপ নিচ্ছে। তবে এর কার্যকারিতা কতটুকু হবে, তা নির্ভর করবে প্রতিটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও সংস্কৃতির ওপর।

জনপ্রিয় সংবাদ

চীনের জলসীমায় স্টারলিংক ব্যবহার: বিদেশি জাহাজকে জরিমানা

মোবাইল ফোন নিষিদ্ধে শিক্ষার ফলাফল

০১:৩৫:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফোনবিহীন শ্রেণিকক্ষের পক্ষে নতুন গবেষণা

আমেরিকায় বিরলভাবে দুই দলের ঐক্যমত্য তৈরি হয়েছে একটি বিষয়ে—স্কুলে ফোন নিষিদ্ধ করা। নতুন শিক্ষাবর্ষে ১৭টি অঙ্গরাজ্যের কোটি কোটি শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে আর ফোন নিয়ে যেতে পারবে না। এর ফলে মোট ৩৫টি অঙ্গরাজ্যে এ ধরনের আইন বা নিয়ম কার্যকর হলো। শুধু আমেরিকাই নয়, বিশ্বজুড়েই অন্তত ৪০ শতাংশ জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় ফোন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর বা আলোচনায় আছে। উদ্দেশ্য একটাই—শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বাড়ানো। তবে এতদিন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ খুব শক্ত ছিল না। ছোট ছোট গবেষণা হয়েছে, কিন্তু ফল মিশ্র।

ভারতের এক বড়সড় গবেষণা

পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়ারটন স্কুলের অধ্যাপক আলপ সুনগুর নেতৃত্বে একটি নতুন র‌্যান্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়াল (আরসিটি) গবেষণা স্পষ্ট প্রমাণ দিয়েছে। উত্তর ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিশোর বিকাশ বিশেষজ্ঞ আন মাহু এই গবেষণাকে যুগান্তকারী বলেছেন। তার মতে, এটি শক্ত প্রমাণ দেয় যে শ্রেণিকক্ষে ফোন নিষিদ্ধ করলে শিক্ষার মান উন্নত হয়।

গবেষণায় ভারতের ১০টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৬৯৫৫ জন শিক্ষার্থী এবং ২,০০০ কোর্স অন্তর্ভুক্ত ছিল। শিক্ষার্থীদের একাংশকে ফোন জমা দিতে বাধ্য করা হয়, অন্যরা ফোন রেখেছিল। ফলাফল দেখায়—ফোন জমা দেওয়া শিক্ষার্থীদের ফল ভালো হয়। সবচেয়ে বেশি উন্নতি দেখা গেছে প্রথম বর্ষের দুর্বল শিক্ষার্থীদের মধ্যে এবং বিজ্ঞান ও গণিত ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে। গড়-পরতা উন্নতির হার ছিল ০.০৮৬ স্ট্যান্ডার্ড ডিভিয়েশন, যা ছোট মনে হলেও শিক্ষাব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সুনগুর ভাষায়, এটি এক সেমিস্টারের জন্য মাঝারি মানের শিক্ষক বদলে একজন উৎকৃষ্ট শিক্ষক দেওয়ার সমান।

ফলাফলের তাৎপর্য

অর্থনীতিবিদ লুই-ফিলিপ বেল্যান্ড বলেন, দুর্বল শিক্ষার্থীদের জন্য এমন সামান্য উন্নতিও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি পাস-ফেল, ড্রপআউট কমানো ও গ্র্যাজুয়েশন হার বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য ফোন রাখায় তেমন প্রভাব পড়েনি, বরং কিছু ক্ষেত্রে সামান্য ইতিবাচক ছিল।

গবেষণার সীমাবদ্ধতা ও বৈচিত্র্য

তবুও বিতর্ক থামছে না। বিভিন্ন দেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট আলাদা। ভারতীয় প্রেক্ষাপটের ফলাফল সব জায়গায় একইভাবে প্রযোজ্য নাও হতে পারে। পাশাপাশি, দেখা গেছে, ফোন নিষিদ্ধের সুফল বিজ্ঞান-গণিতের বাইরে অন্যান্য বিষয়ে বেশি দৃশ্যমান। এর কারণ গবেষকেরা কেবল অনুমান করতে পেরেছেন।

আগের কিছু গবেষণার সঙ্গেও এ ফল মিল খুঁজে পাওয়া গেছে। যেমন—নরওয়ের কিশোর ও ব্রিটেনের স্কুলশিক্ষার্থীদের ওপর হওয়া গবেষণায়ও দেখা গেছে, ফোন নিষিদ্ধ করা দরিদ্র ও দুর্বল শিক্ষার্থীদের ফল ভালো করেছে।

অতিরিক্ত সুফল

সুনগুর গবেষণা আরও দেখিয়েছে, ফোনবিহীন শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনার পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে অনর্থক আলাপ ও বিশৃঙ্খলা কমেছে। শিক্ষকরা নিজেরাও ফোন কম ব্যবহার করেছেন এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেশি সম্পৃক্ত হয়েছেন। ফোন না থাকায় নকলের সুযোগও কমেছে। ২০১৭ সালের এক জরিপে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী স্বীকার করেছিল তারা ফোন ব্যবহার করে পরীক্ষায় নকল করেছে।

শিক্ষার্থীদের সমর্থন

ফোন নিষিদ্ধকরণ সহজে কার্যকর করা যায়, এতে আলাদা প্রশিক্ষণ বা বিনিয়োগ লাগে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—শিক্ষার্থীরাও এর সুফল বুঝতে শুরু করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এক সেমিস্টার ফোনবিহীন ক্লাস করার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিষেধাজ্ঞার পক্ষে সমর্থন ২০ শতাংশ বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি সমর্থন এসেছে পুরোপুরি ফোনমুক্ত স্কুল ব্যবস্থার পক্ষে।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—ট্যাবলেট ও ল্যাপটপ নিয়ে কী হবে? এগুলো শিক্ষাসাহায্য হিসেবে ব্যবহার হলেও মনোযোগ নষ্টের সুযোগ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কলেজ গবেষণায় দেখা গেছে, শ্রেণিকক্ষে কম্পিউটার ব্যবহার করলে পরীক্ষার ফল খারাপ হয়েছে। সুইডেনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফোন নিষিদ্ধ করেও কোনো প্রভাব পড়েনি, কারণ সেখানে ডিজিটাল প্রযুক্তি শিক্ষার সঙ্গে এতটাই যুক্ত যে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়নি।

শিক্ষা খাতে ফোন নিষিদ্ধকরণ এখন প্রমাণভিত্তিক নীতিতে রূপ নিচ্ছে। তবে এর কার্যকারিতা কতটুকু হবে, তা নির্ভর করবে প্রতিটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও সংস্কৃতির ওপর।