০৬:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
এআই ভিডিও কমাতে ‘টোন ডাউন’ অপশন আনছে টিকটক রেকর্ড-নতুন ফল: চীনের জুনো ‘ঘোস্ট পার্টিকল’ ডিটেক্টরের অভাবনীয় সাফল্য ডেভনে আবার ফিরতে পারে বন্য বিড়াল: দুই বছরের গবেষণায় নতুন সম্ভাবনা প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩২৭) নন-প্রফিট কাঠামোতে যাচ্ছে মাষ্টডন, সিইও পদ ছাড়ছেন প্রতিষ্ঠাতা ইউজেন রখকো” ইউটিউবে রেকর্ড ভিউ, তবু ‘বেবি শার্ক’ নির্মাতার আয় সীমিত কেন” চীনের এআই দৌড়ে তীব্র প্রতিযোগিতা, লোকসানে কেঁপে উঠল বাইদু গোপন সসের নিরাপত্তায় নতুন জোর দিচ্ছে রেইজিং কেইন’স  সিডনিতে জমজমাট ২০২৫ এআরআইএ অ্যাওয়ার্ড, এগিয়ে নিনাজারাচি ও ডম ডোলা তাইওয়ানের স্যাটেলাইট যুগের সূচনা: স্পেসএক্স উৎক্ষেপণে বড় অগ্রগতি

গত ছয় মাসে নারী শ্রমিকদের চাকরি হারানোর চিত্র

সামগ্রিক প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশের শ্রমবাজার সবসময়ই নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণে সমৃদ্ধ হয়েছে। বিশেষ করে পোশাক শিল্প, গৃহপরিচারিকা খাত, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও সেবা খাতগুলোতে নারীর উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য। কিন্তু সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকট, মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় শ্রমবাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এর ফলে গত ছয় মাসে চাকরি হারিয়েছেন বিপুল সংখ্যক নারী শ্রমিক।

চাকরি হারানোর পরিসংখ্যান

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) ও জাতিসংঘ নারী সংস্থা (UN Women)-এর যৌথ এক জরিপ অনুযায়ী, ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত) প্রায় ২১ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ১৮ লাখ নারী শ্রমিক, যা মোট চাকরি হারানোর প্রায় ৮৫ শতাংশ
এই সংখ্যা শুধু এক পরিসংখ্যান নয়—এটি নারীদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা, পারিবারিক স্থিতি ও সামাজিক মর্যাদার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে।

পোশাক শিল্পে নারীদের সংকট

সমকালের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় ৭৯ শতাংশ নারী শ্রমিক পারিবারিক দায়িত্ব—বিশেষ করে সন্তান লালনপালন ও সংসারের কাজে জড়িত থাকার কারণে—চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
এই খাতে চাকরি হারানোর ফলে কেবল ব্যক্তিগত আয়ের ঘাটতিই তৈরি হচ্ছে না, বরং দেশের অন্যতম রপ্তানি নির্ভর খাতেও শ্রম সংকটের ছায়া পড়ছে।

গৃহপরিচারিকা ও অদক্ষ শ্রমিকদের অবস্থা

PPRC ও BIGD-এর গবেষণা তুলে ধরছে, বিশেষ করে গৃহপরিচারিকা (গৃহকর্মী)—যাদের প্রায় শতভাগ নারী—তারা চাকরি হারানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন। কোভিড-১৯ সময় থেকে শুরু হওয়া এই সংকট এখনও বহাল রয়েছে।
এছাড়াও অদক্ষ শ্রমিক (Unskilled labor) যেমন হোটেল-রেস্টুরেন্ট কর্মী, ক্ষুদ্র ব্যবসার নারী সহকারীরা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছেন। অনেক পরিবার এখন খরচ কমানোর জন্য গৃহকর্মী বাদ দিচ্ছে, যার সরাসরি শিকার হচ্ছেন নিম্নবিত্ত নারী শ্রমিকরা।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব

চাকরি হারানো এই বিপুল সংখ্যক নারী শ্রমিকের অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি সামাজিক ও মানসিক প্রভাবও গভীর।

  • অর্থনৈতিক দিক:পরিবারের আয়ে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। অনেক নারী যাদের আয়ে সংসার চলত, তারা বেকার হয়ে পড়ায় পরিবারগুলো দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে যাচ্ছে।
  • সামাজিক দিক:চাকরি হারানো নারীরা সহজে পুনরায় কর্মসংস্থানে ফিরতে পারছেন না। অনেক ক্ষেত্রে পরিবার তাদের পুনরায় কাজে যেতে বাধা দিচ্ছে।
  • মানসিক দিক:দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফল হারিয়ে নারী শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা ও অনিশ্চয়তা বাড়ছে, যা সমাজে লিঙ্গ বৈষম্যকে আরও তীব্র করতে পারে।

গত ছয় মাসে নারী শ্রমিকদের চাকরি হারানো একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা। ১৮ লাখ নারী শ্রমিকের চাকরি হারানো শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ও সামাজিক ভারসাম্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি।
পোশাক খাত থেকে শুরু করে গৃহপরিচারিকা ও অদক্ষ শ্রমিক—সব ক্ষেত্রেই নারীরা ঝুঁকিতে আছেন। এই সংকট মোকাবিলায় সরকার, উদ্যোক্তা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রশিক্ষণ এবং পুনর্বাসনমূলক কর্মসূচি ছাড়া এই বিপুল সংখ্যক নারী শ্রমিককে পুনরায় অর্থনৈতিক ধারায় ফেরানো সম্ভব হবে না।

জনপ্রিয় সংবাদ

এআই ভিডিও কমাতে ‘টোন ডাউন’ অপশন আনছে টিকটক

গত ছয় মাসে নারী শ্রমিকদের চাকরি হারানোর চিত্র

০৬:২০:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সামগ্রিক প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশের শ্রমবাজার সবসময়ই নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণে সমৃদ্ধ হয়েছে। বিশেষ করে পোশাক শিল্প, গৃহপরিচারিকা খাত, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও সেবা খাতগুলোতে নারীর উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য। কিন্তু সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকট, মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় শ্রমবাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এর ফলে গত ছয় মাসে চাকরি হারিয়েছেন বিপুল সংখ্যক নারী শ্রমিক।

চাকরি হারানোর পরিসংখ্যান

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) ও জাতিসংঘ নারী সংস্থা (UN Women)-এর যৌথ এক জরিপ অনুযায়ী, ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত) প্রায় ২১ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ১৮ লাখ নারী শ্রমিক, যা মোট চাকরি হারানোর প্রায় ৮৫ শতাংশ
এই সংখ্যা শুধু এক পরিসংখ্যান নয়—এটি নারীদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা, পারিবারিক স্থিতি ও সামাজিক মর্যাদার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে।

পোশাক শিল্পে নারীদের সংকট

সমকালের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় ৭৯ শতাংশ নারী শ্রমিক পারিবারিক দায়িত্ব—বিশেষ করে সন্তান লালনপালন ও সংসারের কাজে জড়িত থাকার কারণে—চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
এই খাতে চাকরি হারানোর ফলে কেবল ব্যক্তিগত আয়ের ঘাটতিই তৈরি হচ্ছে না, বরং দেশের অন্যতম রপ্তানি নির্ভর খাতেও শ্রম সংকটের ছায়া পড়ছে।

গৃহপরিচারিকা ও অদক্ষ শ্রমিকদের অবস্থা

PPRC ও BIGD-এর গবেষণা তুলে ধরছে, বিশেষ করে গৃহপরিচারিকা (গৃহকর্মী)—যাদের প্রায় শতভাগ নারী—তারা চাকরি হারানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন। কোভিড-১৯ সময় থেকে শুরু হওয়া এই সংকট এখনও বহাল রয়েছে।
এছাড়াও অদক্ষ শ্রমিক (Unskilled labor) যেমন হোটেল-রেস্টুরেন্ট কর্মী, ক্ষুদ্র ব্যবসার নারী সহকারীরা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছেন। অনেক পরিবার এখন খরচ কমানোর জন্য গৃহকর্মী বাদ দিচ্ছে, যার সরাসরি শিকার হচ্ছেন নিম্নবিত্ত নারী শ্রমিকরা।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব

চাকরি হারানো এই বিপুল সংখ্যক নারী শ্রমিকের অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি সামাজিক ও মানসিক প্রভাবও গভীর।

  • অর্থনৈতিক দিক:পরিবারের আয়ে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। অনেক নারী যাদের আয়ে সংসার চলত, তারা বেকার হয়ে পড়ায় পরিবারগুলো দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে যাচ্ছে।
  • সামাজিক দিক:চাকরি হারানো নারীরা সহজে পুনরায় কর্মসংস্থানে ফিরতে পারছেন না। অনেক ক্ষেত্রে পরিবার তাদের পুনরায় কাজে যেতে বাধা দিচ্ছে।
  • মানসিক দিক:দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফল হারিয়ে নারী শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা ও অনিশ্চয়তা বাড়ছে, যা সমাজে লিঙ্গ বৈষম্যকে আরও তীব্র করতে পারে।

গত ছয় মাসে নারী শ্রমিকদের চাকরি হারানো একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা। ১৮ লাখ নারী শ্রমিকের চাকরি হারানো শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ও সামাজিক ভারসাম্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি।
পোশাক খাত থেকে শুরু করে গৃহপরিচারিকা ও অদক্ষ শ্রমিক—সব ক্ষেত্রেই নারীরা ঝুঁকিতে আছেন। এই সংকট মোকাবিলায় সরকার, উদ্যোক্তা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রশিক্ষণ এবং পুনর্বাসনমূলক কর্মসূচি ছাড়া এই বিপুল সংখ্যক নারী শ্রমিককে পুনরায় অর্থনৈতিক ধারায় ফেরানো সম্ভব হবে না।