১০:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
ছয় বছর পরও কি আমরা পরবর্তী মহামারির জন্য প্রস্তুত? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৫) একীভূত আইনি চুক্তির মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক বিচার চীনের জলসীমায় স্টারলিংক ব্যবহার: বিদেশি জাহাজকে জরিমানা প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪২) সংযুক্ত আরব আমিরাতে অস্থির আবহাওয়া: বৃষ্টি ও দুর্ঘটনায় দুবাই–শারজাহজুড়ে সন্ধ্যায় তীব্র যানজট অসম্ভবকে সম্ভব মনে করা অভিনেত্রী মিনি ড্রাইভার, পঞ্চান্নেও ব্যস্ত ও আত্মবিশ্বাসী জীবন যে সিনেমাটি দেখতে আমি ভয় পেয়েছিলাম অস্ট্রেলিয়ার ক্ষত সারাতে লড়াই: বন্ডি বিচ হত্যাযজ্ঞের পর ঐক্য আর বিভাজনের সন্ধিক্ষণ ঢাকায় উদীচী কার্যালয়ে হামলার পর অগ্নিকাণ্ড

দশানি নদী: এখনো শেরপুরের অনন্য প্রাণ রেখা

বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনে নদীর ভূমিকা শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, বরং জীবন ও জীবিকার অবিচ্ছেদ্য অংশ। শেরপুর জেলার দশানি নদী সেই ধরনেরই একটি নদী, যা দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের কৃষি, অর্থনীতি, পরিবহন এবং সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে আসছে। যদিও নদীটি বর্তমানে নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তবুও স্থানীয় মানুষের কাছে দশানি এখনো এক অনন্য প্রাণরেখা।

নদীর ভৌগোলিক পরিচয়

দশানি নদী শেরপুর জেলার ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে। বর্ষায় এটি পূর্ণতা পায়, আর শুষ্ক মৌসুমে পানি অনেকটা কমে আসে। নদীর দু’পাড় ঘেঁষে রয়েছে অসংখ্য গ্রাম, চরাঞ্চল আর বিস্তৃত ফসলি জমি। এই নদী থেকেই সেচের পানি নিয়ে কৃষকরা ধান, পাট ও নানা শস্য চাষ করেন। নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ একসময় এতটাই শক্তিশালী ছিল যে বর্ষাকালে আশপাশের গ্রাম প্লাবিত হয়ে যেত।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব

ঐতিহাসিকভাবে দশানি নদী শুধু একটি প্রাকৃতিক জলধারা ছিল না, এটি ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি মাধ্যম। পুরনো শেরপুরের কৃষিপণ্য, বিশেষত ধান, পাট ও সরিষা, এই নদীপথে নৌকা ভরে বাজারে যেত। বহু দিন আগে নৌ-যোগাযোগই ছিল গ্রামীণ মানুষের প্রধান ভরসা। ফলে দাশানি নদী স্থানীয় অর্থনীতির প্রবাহকে সচল রেখেছিল।

কৃষি নির্ভরতা

দশানি নদীর পানি শেরপুরের কৃষকদের কাছে আশীর্বাদের মতো। ধান উৎপাদনের জন্য সেচব্যবস্থা মূলত এই নদীর উপর নির্ভর করে এসেছে। এছাড়া শীতকালীন সবজি যেমন বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো ও শসার আবাদ নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে হয়। এর ফলে কৃষকদের বাড়তি আয় হয়, যা তাদের পরিবারের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।

মৎস্যসম্পদ ও খাদ্যসংস্কৃতি

নদী মানেই মাছ, আর দাশানি নদীও এর ব্যতিক্রম নয়। বর্ষাকালে নদীর পানিতে নানা প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যায়। শিং, কই, টেংরা, বোয়াল, রুই, কাতলা ইত্যাদি মাছ স্থানীয় খাদ্যসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। নদীর মাছ শুধু বাজারেই জনপ্রিয় নয়, গ্রামীণ রান্নাঘরেও এর আলাদা স্বাদ রয়েছে। অনেক পরিবার সরাসরি নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। ফলে দশানি নদীকে কেন্দ্র করে একটি জীবন্ত মৎস্যসম্পদ নির্ভর অর্থনীতি গড়ে উঠেছে।

পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা

আধুনিক সড়কপথের আগের সময়ে দশানি নদীই ছিল প্রধান যোগাযোগমাধ্যম। পণ্যবাহী নৌকা, ডিঙি ও যাত্রীবাহী ছোট নৌযান এই নদীতে নিয়মিত চলাচল করত। কৃষকরা তাদের ফসল বাজারে পৌঁছে দিত নদীপথে, আবার ব্যবসায়ীরাও পণ্য কিনে আনত একই পথে। বর্তমানে সড়কপথের কারণে নদীপথের ব্যবহার অনেক কমেছে, কিন্তু বর্ষাকালে এখনও কিছু এলাকায় নৌপথই মানুষের একমাত্র ভরসা।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব

নদী শুধু অর্থনীতির সঙ্গে নয়, সংস্কৃতির সঙ্গেও যুক্ত। দশানি নদীকে ঘিরে স্থানীয় মানুষের অনেক আচার-অনুষ্ঠান, গান ও কাহিনি গড়ে উঠেছে। বিশেষত বর্ষাকালে নৌকা বাইচ ও নদীঘেঁষা মেলার আয়োজন ছিল একসময় খুবই জনপ্রিয়। নদীর পাড়ে গ্রামীণ বৈঠকি সভা, কবিগান বা পালাগানের মতো অনুষ্ঠানও হতো। ফলে দশানি নদী মানুষের সামাজিক জীবনকেও সমৃদ্ধ করেছে।

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একটি সমৃদ্ধ পরিবেশব্যবস্থা। নদীর পানিতে জলজ প্রাণী যেমন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, কাঁকড়া, শামুক পাওয়া যায়, আবার নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চল অভিবাসী পাখিদের জন্য আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে। শীতকালে এখানে নানা বিদেশি পাখি অবস্থান করে, যা পরিবেশ ও পর্যটন উভয় দিক থেকেই মূল্যবান। কিন্তু বর্তমানে নদী সংকুচিত হওয়ার কারণে এই জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে।

নদীর সংকট

দশানি নদী বর্তমানে নানা সংকটে ভুগছে।

দখল ও ভরাট: নদীর তীর ভরাট করে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট নির্মাণ করা হচ্ছে।

দূষণ: বর্জ্য ফেলা, রাসায়নিক ব্যবহার ইত্যাদির কারণে পানি দূষিত হচ্ছে।

প্রবাহ কমে যাওয়া: শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় সেচ ও মাছ ধরা ব্যাহত হচ্ছে।

বালু উত্তোলন: অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনে নদীর গভীরতা কমছে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিজ্ঞতা

স্থানীয় কৃষকদের মতে, নদীতে পানি কমে যাওয়ায় তাদের কৃষিকাজে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। আগে বর্ষায় যে জমিতে ধান চাষ হতো, এখন সেখানে পানি না থাকায় ফসল নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে জেলেরা অভিযোগ করছেন, মাছের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। অনেক পরিবার বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করছে।

সরকার ও স্থানীয় উদ্যোগ

নদী রক্ষায় কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে দখল উচ্ছেদ অভিযান চালায়, কিন্তু টেকসই সমাধান হয় না। নদীর প্রবাহ সচল রাখতে ড্রেজিং, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, দূষণ নিয়ন্ত্রণের মতো পদক্ষেপ প্রয়োজন। এছাড়া নদীকে কেন্দ্র করে ইকোট্যুরিজম গড়ে তোলার সম্ভাবনাও রয়েছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে নতুন মাত্রা দিতে পারে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

যদি দশানি নদীকে পরিকল্পিতভাবে সংরক্ষণ করা যায়, তবে এটি আবারও শেরপুরের মানুষের প্রধান ভরসা হয়ে উঠতে পারে। কৃষি, মৎস্য, পরিবহন ও পর্যটন—সবকিছুর উন্নয়নে নদীর ভূমিকা অপরিসীম। এজন্য দরকার সমন্বিত উদ্যোগ, যেখানে সরকার, স্থানীয় জনগণ ও পরিবেশবাদী সংগঠন একসঙ্গে কাজ করবে।

শেরপুরের দশানি নদী শুধুমাত্র একটি প্রাকৃতিক জলাধার নয়, বরং মানুষের জীবন, জীবিকা ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই নদীকে রক্ষা করা মানে কেবল একটি নদী বাঁচানো নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ভবিষ্যৎকে বাঁচানো।

জনপ্রিয় সংবাদ

ছয় বছর পরও কি আমরা পরবর্তী মহামারির জন্য প্রস্তুত?

দশানি নদী: এখনো শেরপুরের অনন্য প্রাণ রেখা

০৬:৫৭:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনে নদীর ভূমিকা শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, বরং জীবন ও জীবিকার অবিচ্ছেদ্য অংশ। শেরপুর জেলার দশানি নদী সেই ধরনেরই একটি নদী, যা দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের কৃষি, অর্থনীতি, পরিবহন এবং সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে আসছে। যদিও নদীটি বর্তমানে নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তবুও স্থানীয় মানুষের কাছে দশানি এখনো এক অনন্য প্রাণরেখা।

নদীর ভৌগোলিক পরিচয়

দশানি নদী শেরপুর জেলার ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে। বর্ষায় এটি পূর্ণতা পায়, আর শুষ্ক মৌসুমে পানি অনেকটা কমে আসে। নদীর দু’পাড় ঘেঁষে রয়েছে অসংখ্য গ্রাম, চরাঞ্চল আর বিস্তৃত ফসলি জমি। এই নদী থেকেই সেচের পানি নিয়ে কৃষকরা ধান, পাট ও নানা শস্য চাষ করেন। নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ একসময় এতটাই শক্তিশালী ছিল যে বর্ষাকালে আশপাশের গ্রাম প্লাবিত হয়ে যেত।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব

ঐতিহাসিকভাবে দশানি নদী শুধু একটি প্রাকৃতিক জলধারা ছিল না, এটি ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি মাধ্যম। পুরনো শেরপুরের কৃষিপণ্য, বিশেষত ধান, পাট ও সরিষা, এই নদীপথে নৌকা ভরে বাজারে যেত। বহু দিন আগে নৌ-যোগাযোগই ছিল গ্রামীণ মানুষের প্রধান ভরসা। ফলে দাশানি নদী স্থানীয় অর্থনীতির প্রবাহকে সচল রেখেছিল।

কৃষি নির্ভরতা

দশানি নদীর পানি শেরপুরের কৃষকদের কাছে আশীর্বাদের মতো। ধান উৎপাদনের জন্য সেচব্যবস্থা মূলত এই নদীর উপর নির্ভর করে এসেছে। এছাড়া শীতকালীন সবজি যেমন বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো ও শসার আবাদ নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে হয়। এর ফলে কৃষকদের বাড়তি আয় হয়, যা তাদের পরিবারের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।

মৎস্যসম্পদ ও খাদ্যসংস্কৃতি

নদী মানেই মাছ, আর দাশানি নদীও এর ব্যতিক্রম নয়। বর্ষাকালে নদীর পানিতে নানা প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যায়। শিং, কই, টেংরা, বোয়াল, রুই, কাতলা ইত্যাদি মাছ স্থানীয় খাদ্যসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। নদীর মাছ শুধু বাজারেই জনপ্রিয় নয়, গ্রামীণ রান্নাঘরেও এর আলাদা স্বাদ রয়েছে। অনেক পরিবার সরাসরি নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। ফলে দশানি নদীকে কেন্দ্র করে একটি জীবন্ত মৎস্যসম্পদ নির্ভর অর্থনীতি গড়ে উঠেছে।

পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা

আধুনিক সড়কপথের আগের সময়ে দশানি নদীই ছিল প্রধান যোগাযোগমাধ্যম। পণ্যবাহী নৌকা, ডিঙি ও যাত্রীবাহী ছোট নৌযান এই নদীতে নিয়মিত চলাচল করত। কৃষকরা তাদের ফসল বাজারে পৌঁছে দিত নদীপথে, আবার ব্যবসায়ীরাও পণ্য কিনে আনত একই পথে। বর্তমানে সড়কপথের কারণে নদীপথের ব্যবহার অনেক কমেছে, কিন্তু বর্ষাকালে এখনও কিছু এলাকায় নৌপথই মানুষের একমাত্র ভরসা।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব

নদী শুধু অর্থনীতির সঙ্গে নয়, সংস্কৃতির সঙ্গেও যুক্ত। দশানি নদীকে ঘিরে স্থানীয় মানুষের অনেক আচার-অনুষ্ঠান, গান ও কাহিনি গড়ে উঠেছে। বিশেষত বর্ষাকালে নৌকা বাইচ ও নদীঘেঁষা মেলার আয়োজন ছিল একসময় খুবই জনপ্রিয়। নদীর পাড়ে গ্রামীণ বৈঠকি সভা, কবিগান বা পালাগানের মতো অনুষ্ঠানও হতো। ফলে দশানি নদী মানুষের সামাজিক জীবনকেও সমৃদ্ধ করেছে।

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একটি সমৃদ্ধ পরিবেশব্যবস্থা। নদীর পানিতে জলজ প্রাণী যেমন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, কাঁকড়া, শামুক পাওয়া যায়, আবার নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চল অভিবাসী পাখিদের জন্য আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠে। শীতকালে এখানে নানা বিদেশি পাখি অবস্থান করে, যা পরিবেশ ও পর্যটন উভয় দিক থেকেই মূল্যবান। কিন্তু বর্তমানে নদী সংকুচিত হওয়ার কারণে এই জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে।

নদীর সংকট

দশানি নদী বর্তমানে নানা সংকটে ভুগছে।

দখল ও ভরাট: নদীর তীর ভরাট করে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট নির্মাণ করা হচ্ছে।

দূষণ: বর্জ্য ফেলা, রাসায়নিক ব্যবহার ইত্যাদির কারণে পানি দূষিত হচ্ছে।

প্রবাহ কমে যাওয়া: শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় সেচ ও মাছ ধরা ব্যাহত হচ্ছে।

বালু উত্তোলন: অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনে নদীর গভীরতা কমছে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিজ্ঞতা

স্থানীয় কৃষকদের মতে, নদীতে পানি কমে যাওয়ায় তাদের কৃষিকাজে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। আগে বর্ষায় যে জমিতে ধান চাষ হতো, এখন সেখানে পানি না থাকায় ফসল নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে জেলেরা অভিযোগ করছেন, মাছের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। অনেক পরিবার বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করছে।

সরকার ও স্থানীয় উদ্যোগ

নদী রক্ষায় কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে দখল উচ্ছেদ অভিযান চালায়, কিন্তু টেকসই সমাধান হয় না। নদীর প্রবাহ সচল রাখতে ড্রেজিং, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, দূষণ নিয়ন্ত্রণের মতো পদক্ষেপ প্রয়োজন। এছাড়া নদীকে কেন্দ্র করে ইকোট্যুরিজম গড়ে তোলার সম্ভাবনাও রয়েছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে নতুন মাত্রা দিতে পারে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

যদি দশানি নদীকে পরিকল্পিতভাবে সংরক্ষণ করা যায়, তবে এটি আবারও শেরপুরের মানুষের প্রধান ভরসা হয়ে উঠতে পারে। কৃষি, মৎস্য, পরিবহন ও পর্যটন—সবকিছুর উন্নয়নে নদীর ভূমিকা অপরিসীম। এজন্য দরকার সমন্বিত উদ্যোগ, যেখানে সরকার, স্থানীয় জনগণ ও পরিবেশবাদী সংগঠন একসঙ্গে কাজ করবে।

শেরপুরের দশানি নদী শুধুমাত্র একটি প্রাকৃতিক জলাধার নয়, বরং মানুষের জীবন, জীবিকা ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই নদীকে রক্ষা করা মানে কেবল একটি নদী বাঁচানো নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ভবিষ্যৎকে বাঁচানো।