ভূমিকা
৯৭ বছর বয়সী মার্কিন ঔপন্যাসিক ও প্রবন্ধকার সিনথিয়া ওজিক দীর্ঘ সাত দশকের সাহিত্যকর্মের জন্য খ্যাত। যুদ্ধ, ইহুদি জীবন, শেকসপিয়ার থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ের ইহুদিবিদ্বেষ—সবই তাঁর আলোচ্য বিষয়। সম্প্রতি তিনি তাঁর বয়স, অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান আমেরিকার সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবর্তন নিয়ে কথা বলেছেন।
বয়স ও দৈনন্দিন অভ্যাস
ওজিক বলেন, “আমার বয়স হাস্যকর মনে হয়। আমি কিছুই করিনি এটার জন্য—শুধু হার্শির চকলেট খেয়েছি।” প্রতিদিন তিনি দশ থেকে বারোটা চকলেট খান। অর্ধশতাব্দী ধরে একই বাড়িতে বাস করছেন এবং চকলেটের পাশাপাশি লিখে যাচ্ছেন গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক ও অনুবাদ।
সাহিত্যকর্ম ও পরিচয়
১৯৬৬ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘ট্রাস্ট’ প্রকাশিত হয়। এরপর আরও ছয়টি উপন্যাস, অসংখ্য ছোটগল্প, প্রবন্ধ ও সমালোচনা প্রকাশ করেছেন। ইয়িদ্দিশ কবিতার ইংরেজি অনুবাদও করেছেন। সাহিত্য সমালোচকরা মনে করেন, জীবিত আমেরিকান লেখকদের মধ্যে তাঁর কাজ অদ্বিতীয়। যদিও তিনি অর্থডক্স সিনাগগে যান, নিজেকে তিনি পরিচয় দেন “সাধারণ ইহুদি” হিসেবে।

ইহুদিবিদ্বেষ ও ৭ অক্টোবরের ধাক্কা
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলার পর তিনি গভীরভাবে বিচলিত হন। তাঁর মতে, সেই ঘটনার পর হঠাৎ যেন ইহুদিবিদ্বেষ প্রকাশের অনুমতি বিশ্বব্যাপী মেলে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, এতদিন দমন করা ঘৃণা কেন একদিনে এত প্রকাশ্যভাবে হয়ে উঠল।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নিউ ইয়র্কের সংকট
ওজিক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানির সম্ভাব্য জয়ের কারণে। মামদানি “গ্লোবালাইজ দ্য ইন্তিফাদা” স্লোগান প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করেছেন। ওজিক একে নিউ ইয়র্কের জন্য বড় সংকট হিসেবে দেখেন।
আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা
রাশিয়া থেকে আসা তাঁর ইহুদি পিতামাতা আমেরিকায় সুখী জীবন কাটিয়েছিলেন। কিন্তু ওজিক প্রশ্ন তুলছেন, আমেরিকায় কি এখন “জুডিও-খ্রিস্টান উত্তরাধিকারের” অবসান শুরু হলো? তিনি এ নিয়ে নিজেকে কখনও নৈরাশ্যবাদী ভাবেন, আবার বন্ধু রুথ উইসের পরামর্শে আশাবাদী হওয়ার চেষ্টা করেন।
সাহিত্য ও লেখকদের মূল্যায়ন
ওজিক লেখকদের ইহুদিদের চিত্রায়ন নিয়ে সমালোচনা করেছেন। হেনরি জেমসের রচনায় অ্যান্টি-সেমিটিক ইঙ্গিত পেলেও তিনি তাঁর মানবিক দিক তুলে ধরেছেন। চার্লস ডিকেন্সকে ফেগিন চরিত্রের জন্য ক্ষমা করেছেন, কারণ পরে তিনি “আওয়ার মিউচুয়াল ফ্রেন্ড”-এ এক মহৎ ইহুদি চরিত্র রিয়াহ উপস্থাপন করেছিলেন। তবে শেকসপিয়ারের ‘দ্য মার্চেন্ট অব ভেনিস’-এ শাইলকের ভাষণকে তিনি প্রাণহীন মনে করেন।

শৈশবস্মৃতি ও আমেরিকান বাস্তবতা
শৈশবে ব্রঙ্কসে তিনি পরিবারের ওষুধের দোকানে কাজ করতেন। এক বন্ধুর মুখে “ডার্টি জিউ” অপমান শুনে কেঁদে আসেন দাদীর কাছে। দাদী তাঁকে বলেন, “তুমি তোমার পথে, সে তার পথে”—যা ছিল সহিষ্ণু আমেরিকার প্রতিফলন।
আইরিশ ছেলেরা তখন হিব্রু স্কুল থেকে বের হওয়া ইহুদি ছেলেদের মারত, যা তিনি ‘রীতি’ বলেই বর্ণনা করেন। কিন্তু একই ছেলেরা পরবর্তীতে সেরা মার্কিন নাগরিক হয়ে ওঠে। তিনি মনে করেন, অতীতের সেই ভিন্নধর্মী সহাবস্থান আজকের বিভক্ত আমেরিকার সাথে সঙ্ঘর্ষিক।
যুদ্ধোত্তর অভিজ্ঞতা ও মিলন
১৯৪৭ সালে নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় তিনি এক সাবেক পরিচিতের সঙ্গে দেখা পান—বিলি হেইস, যিনি আগে তাঁর ভাইকে মারধর করেছিল। যুদ্ধ শেষে তিনি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প মুক্ত করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন, যা তাঁকে আমূল বদলে দিয়েছিল। ওজিক মনে করেন, এটি আমেরিকার শক্তিশালী মানবিক উত্তরাধিকারকেই প্রতিফলিত করে।
সিনথিয়া ওজিক মনে করেন, আমেরিকা একসময় ছিল মহান দেশ, কিন্তু এখন তা ভাঙনের মুখে। তবুও তিনি লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছেন, নতুন গল্প লিখছেন, এবং অতীত স্মৃতি থেকে আমেরিকার মহিমা পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















