অনুপস্থিত সরকারের ছায়া
অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। কাগজে-কলমে এটি গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি পদক্ষেপ হলেও বাস্তবতায় একধরনের ‘অনুপস্থিত সরকার সিনড্রোম’ তৈরি হয়েছে। সরকার প্রতিদিন দৃশ্যমান হলেও কার্যকর শাসনের জায়গায় শূন্যতা বাড়ছে। সহিংসতা ও অসহিষ্ণুতা বাড়তে থাকলেও রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সরকারি উদ্যোগ অকার্যকর রয়ে গেছে। এর ফলে নির্বাচনের আগে সহিংসতা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

দারিদ্র্যের উল্টো স্রোত
পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)-এর সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ শতাংশে। অথচ ২০২২ সালে সরকারি হিসাবে এ হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ দারিদ্র্য হ্রাসের বদলে উল্টো বেড়েছে। অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা থাকলেও গতি কমছে, কর্মসংস্থানে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, বেকারত্ব মহাদুর্যোগের রূপ নিয়েছে।
সরকারি সমীক্ষাতেও ধরা পড়েছে প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়ার হার বেড়েছে। সব মিলিয়ে সংকট শুধু অর্থনীতিতেই নয়, সমাজের ভিত্তিতেও গভীর হচ্ছে। এভাবে দেশ যেন উল্টো পথে হাঁটছে।

গণতান্ত্রিক উত্তরণে অচলাবস্থা
রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো সংকীর্ণ স্বার্থের খেলায় মেতে আছে। জাতীয় ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে প্রাণহানি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। এখন দরকার ছিল কার্যকর শাসন ও অধিকারভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন, কিন্তু সেই নিশ্চয়তা অনুপস্থিত।
সামাজিক উদ্যোগের ডাক
বর্তমান আলোচনায় সরকার, কমিশন ও রাজনৈতিক দল থাকলেও তা থেকে আশাবাদ জন্মাচ্ছে না। অনিশ্চয়তা মুখের কথায় দূর হবে না। তাই সামাজিক উদ্যোগে নতুন প্রক্রিয়ার আহ্বান উঠেছে। এ জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে পাঁচটি নীতি সংলাপ—
১. অর্থনীতির পুরোনো অলিগার্কিক মডেল ভাঙা
২. শিক্ষা খাত পুনর্গঠন
৩. স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার
৪. বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ
৫. ভূরাজনীতি ও ভূকৌশল নিয়ে বাস্তব সংলাপ

হোসেন জিল্লুর রহমান মনে করিয়ে দেন, হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই। দারিদ্র্যের কষ্ট বাড়লেও মানুষ হাল ছাড়ছে না। কাগুজে প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থা না থাকলেও নতুন সামাজিক উদ্যোগ এবং গুণগত গণতান্ত্রিক উত্তরণে এগোতে হবে। নইলে অনুপস্থিত সরকারের এই ছায়া দেশকে আরও পেছনের দিকে ঠেলে দেবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















