সারসংক্ষেপ
- সরকারের পতনে ভেস্তে গেল ৪৪ বিলিয়ন ইউরোর ঘাটতি কমানোর পরিকল্পনা
- ঋণ নিতে এখন ফ্রান্সকে গ্রিস ও স্পেনের চেয়েও বেশি খরচ করতে হচ্ছে
- রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যবসা ও ভোক্তা ব্যয় স্থবির হয়ে পড়ছে
রাজনৈতিক সংকটে ডুবে যাওয়া ফ্রান্স
ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ফ্রান্স আবারও অচলাবস্থায় পড়ে গেছে। দুর্বল প্রবৃদ্ধি, উচ্চ ঋণ গ্রহণের খরচ এবং বিশাল ঋণের বোঝা দেশটিকে ইউরোপের অন্যতম সংকটাপন্ন অর্থনীতিতে পরিণত করছে।
প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরোর সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব সোমবার সংসদে পাস হয়। এর ফলে ইউরোজোনের সবচেয়ে বড় বাজেট ঘাটতি মোকাবেলার সুযোগ একেবারে হাতছাড়া হয়ে গেল।
বাইরো প্রস্তাব করেছিলেন ৪৪ বিলিয়ন ইউরোর কৃচ্ছ্রসাধন। কিন্তু বিরোধীরা তার সরকারের পতন ঘটায় সেই পরিকল্পনা এখন আর কার্যকর হওয়ার সুযোগ নেই। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিলেও সেই বাজেট কঠোরভাবে বাস্তবায়ন হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কর বৃদ্ধি নাকি ব্যয় সংকোচন?
অর্থমন্ত্রী এরিক লমবার্দ স্বীকার করেছেন যে আগামী সরকারকে ২০২৬ সালের বাজেট অক্টোবরের মধ্যে তৈরি করতে হবে। তবে সেটি বাইরোর পরিকল্পনার তুলনায় কম উচ্চাকাঙ্ক্ষী হবে।
সম্ভাব্য নতুন প্রধানমন্ত্রী যদি সমাজতান্ত্রিক দলের কেউ হন, তাহলে বাজেট ঘাটতি কমাতে ধনীদের ওপর কর বাড়ানোর দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। তারা ১৫ বিলিয়ন ইউরোর কর আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে।
তবে বাজার বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, কর বৃদ্ধি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি আরও কমিয়ে দিতে পারে। ইতিমধ্যেই ব্রিটেনে এমন দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।

ঋণের ফাঁদে ফ্রান্স
রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও দুর্বল আর্থিক ব্যবস্থাপনার কারণে ভোক্তা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান উভয়ই বিনিয়োগ ও ব্যয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে। রেনল্ট গাড়ি কোম্পানির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, অনিশ্চয়তা যত বাড়ে, খরচ ও বিনিয়োগের প্রবণতাও তত কমে যায়।
ফ্রান্সের মোট ঋণ জুন মাসে দাঁড়িয়েছে ৩.৩ ট্রিলিয়ন ইউরোতে, যা জিডিপির ১১৪ শতাংশ। যদিও এটি গ্রিস (১৫৩%) ও ইতালির (১৩৮%) তুলনায় কম, তবে তারা সুদ বাদ দিয়ে বাজেটে উদ্বৃত্ত রাখে। ফ্রান্স তা পারছে না।
২০২৯ সালের মধ্যে শুধু ঋণের সুদ পরিশোধেই ফ্রান্সকে ১০০ বিলিয়ন ইউরোর বেশি খরচ করতে হবে। ২০২৪ সালে এই অঙ্ক ছিল ৫৯ বিলিয়ন ইউরো। ফলে বাজেটের সবচেয়ে বড় খাতে পরিণত হতে পারে ঋণের সুদ।
ইতালিকে দীর্ঘদিন ইউরোপের সমস্যাগ্রস্ত দেশ হিসেবে দেখা হলেও এখন সেই জায়গায় ফ্রান্স চলে যাচ্ছে বলে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন।
বাজারের নজরদারি বাড়ছে
একসময় ফ্রান্সের বন্ড বাজারকে জার্মানির বিকল্প নিরাপদ বিনিয়োগক্ষেত্র হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু গত বছরের আকস্মিক নির্বাচনের পর ঝুলন্ত সংসদ গঠনের কারণে এখন ফ্রান্সকে ঋণের জন্য বেশি সুদ দিতে হচ্ছে।
বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেওয়ার খরচে ফ্রান্স গ্রিস ও স্পেনের চেয়েও পিছিয়ে পড়েছে। এমনকি ইতালির সঙ্গেও প্রায় সমান পর্যায়ে চলে এসেছে, যেখানে ২০২৪ সালের শুরুতে ইতালির ঋণ খরচ ফ্রান্সের তুলনায় অনেক বেশি ছিল।
ফিচ শুক্রবার ফ্রান্সের ঋণের মান নির্ধারণ করবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলতে থাকলে ফ্রান্সকে দীর্ঘ মেয়াদে উচ্চ সুদের বোঝা বইতে হবে, যা শিক্ষা, উদ্ভাবন ও ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে।
ফ্রান্স এখন এক জটিল ঋণ সংকটে ডুবে আছে। রাজনৈতিক স্থবিরতা ও বাজেট ঘাটতি কমানোর ব্যর্থতা দেশের অর্থনীতিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। ইউরোপে যেখানে অন্যান্য দেশ উন্নতির পথে, সেখানে ফ্রান্সকে ক্রমেই “অর্থনৈতিক কুৎসিত হাঁসের ছানা” বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 

























