মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রথমবারের মতো জাপানে
মার্কিন সেনাবাহিনী প্রথমবারের মতো জাপানে এমন একটি মধ্যপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করছে, যা চীনের ভেতরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। এটি হবে যৌথ সামরিক মহড়া ‘রিজলিউট ড্রাগন’ মহড়ার অংশ, যা বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে। দুই সপ্তাহব্যাপী এ মহড়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের ১৯ হাজার সেনা অংশ নিচ্ছে। মহড়াটি অনুষ্ঠিত হবে হোক্কাইডো থেকে শুরু করে ওকিনাওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন ঘাঁটিতে।

টাইফন সিস্টেম ও টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র
মার্কিন বাহিনী হিরোশিমার দক্ষিণে ইওয়াকুনি মেরিন কোর এয়ার স্টেশনে “টাইফন” ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা প্রদর্শন করবে। এই প্ল্যাটফর্ম টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে, যার পাল্লা সর্বোচ্চ ১,৬০০ কিলোমিটার। তবে এটি শুধুমাত্র প্রশিক্ষণমূলক মহড়ার জন্য ব্যবহৃত হবে, কোনো বাস্তব ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হবে না। মহড়া শেষে সিস্টেমটি জাপানের বাইরে সরিয়ে নেওয়া হবে।
অন্যান্য অস্ত্র মোতায়েন
ওকিনাওয়া প্রদেশের ইশিগাকি ক্যাম্পে জাপান সেলফ-ডিফেন্স ফোর্স “নেভি-মেরিন এক্সপেডিশনারি শিপ ইন্টারডিকশন সিস্টেম” (NMESIS) স্থাপন করবে। পাশাপাশি থাকবে “মেরিন এয়ার ডিফেন্স ইন্টিগ্রেটেড সিস্টেম”। এগুলো ব্যবহার করা হবে জাহাজ ও বিমানবিধ্বংসী মহড়ায়, তবে বাস্তব গুলি ছোড়া হবে না।

চীনের প্রতি পরোক্ষ ইঙ্গিত
যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো দেশের নাম নেয়নি, তবে মহড়ার লক্ষ্য চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তির প্রতিই ইঙ্গিত করছে। ইওয়াকুনি ঘাঁটি থেকে বেইজিংয়ের দূরত্ব প্রায় ১,৬০০ কিলোমিটার—টাইফন ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লার মধ্যে। টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র জিপিএসের সাহায্যে শত্রুর প্রতিরক্ষা ভেদ করে সঠিকভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
ফিলিপাইনে পূর্ব অভিজ্ঞতা
গত বছর যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো ফিলিপাইনে টাইফন সিস্টেম নিয়ে আসে। উত্তর লুজনের একটি বিমানঘাঁটিতে এটি স্থাপন করা হয় যৌথ মহড়ার অংশ হিসেবে। চীন তীব্র সমালোচনা করলেও সিস্টেমটি এখনো ফিলিপাইনে রয়েছে। ফিলিপাইনের সেনাবাহিনী এটিকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
ইওয়াকুনির কৌশলগত গুরুত্ব
ইওয়াকুনি ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চীন ও উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এটি এফ-৩৫বি যুদ্ধবিমান বহর পরিচালনা করে। কোরিয়া যুদ্ধের সময় এখান থেকে উত্তর কোরিয়ায় বিমান সহায়তা দেওয়া হয়েছিল।
চুক্তি ভাঙন ও নতুন বাস্তবতা
দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০০ থেকে ৫,৫০০ কিলোমিটার পাল্লার ভূমি-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র ছিল না, কারণ রাশিয়ার সঙ্গে “ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (INF) চুক্তি” কার্যকর ছিল। ২০১৯ সালে এ চুক্তি শেষ হলে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের ন্যাসে দ্বীপপুঞ্জ থেকে ফিলিপাইন পর্যন্ত “প্রথম দ্বীপ চেইন”-এ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনা শুরু করে।
চীন ইতোমধ্যেই ডংফেং সিরিজের মধ্যপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে, যা জাপানের অধিকাংশ এলাকা আঘাত হানতে সক্ষম। উত্তর কোরিয়ার কাছেও ইওয়াকুনি লক্ষ্য বানানোর মতো ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। ফলে এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান তুলনামূলকভাবে দুর্বল অবস্থানে।

চীন-রাশিয়া-উত্তর কোরিয়ার ঘনিষ্ঠতা
সম্প্রতি বেইজিংয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন একসঙ্গে অংশ নেন। এ তিন দেশের সামরিক ঘনিষ্ঠতা জাপানের নিরাপত্তার জন্য নতুন হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
সাসাকাওয়া পিস ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ গবেষক সুনেও ওয়াতানাবে বলেছেন, “চীন বর্তমানে এমন মধ্যপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে, যার বিরুদ্ধে জাপান ও তাইওয়ান কার্যত অরক্ষিত।” তাঁর মতে, যৌথ মহড়ায় ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছে তাদের সক্ষমতা প্রদর্শন করছে।
জাপানের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা
সম্প্রতি জাপান তাদের নিজস্ব “টাইপ ১২ গাইডেড মিসাইল সিস্টেম” উন্নত সংস্করণ চালুর ঘোষণা দিয়েছে। এ বছরের মধ্যেই দেশীয় ঘাঁটিতে এর মোতায়েন শুরু হবে। পাশাপাশি, জাপান ২০২৭ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা বাজেট জিডিপির ২ শতাংশে উন্নীত করতে চায়। তবে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, এটি যথেষ্ট নয়।

প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোর বিষয়টি রাজনৈতিক বিতর্কে আটকে গেছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















