উদ্বেগের মুহূর্ত
সামাজিক উদ্বেগে আক্রান্ত হলে মানুষের ভিড়ের মধ্যে ঢুকলেই মনে হতে পারে, সবাই আপনার দিকে তাকিয়ে আছে এবং আপনি কিছুই যথেষ্ট বুদ্ধিদীপ্ত বা মজারভাবে বলতে পারবেন না। এতে শারীরিক, মানসিক ও আবেগীয় নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
শিকাগোর পরামর্শদাতা কিরস্টেন হল-বাল্ডউইন জানান, কারও ক্ষেত্রে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, মাথা ঘোরে বা মুখ লাল হয়ে যায়। আবার অনেকে বারবার একই চিন্তায় ঘুরপাক খেতে থাকেন, কিংবা মনে হয় মাথা একেবারে ফাঁকা হয়ে গেছে।
তিনি তাঁর রোগীদের পরামর্শ দেন একটি ‘কোপিং প্ল্যান’ তৈরি করতে—যেখানে থাকবে আগে থেকে ঠিক করা কিছু কৌশল ও অভ্যাস, যা তাদের উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
১. সহজ পরিবেশে অনুশীলন করুন
কোনো নেটওয়ার্কিং অনুষ্ঠান বা পুনর্মিলনীতে যাওয়ার আগে ক্যাফের বারিস্তা, পাশের বাড়ির প্রতিবেশী, সহকর্মী বা দোকানের কর্মচারীর সঙ্গে ছোটখাটো আলাপের চেষ্টা করুন। এসব সংক্ষিপ্ত আলাপ কম চাপের পরিবেশ তৈরি করে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে।
হল-বাল্ডউইনের মতে, ছোট সামাজিক যোগাযোগের মধ্যে তেমন আবেগীয় চাপ থাকে না। ধীরে ধীরে এভাবে অভ্যস্ত হলে বড় অনুষ্ঠানে কথোপকথনে অংশ নেওয়াও সহজ মনে হবে।
২. আগে থেকে কিছু বাক্য প্রস্তুত রাখুন
মাথা কাজ না করলে ব্যবহার করার মতো কয়েকটি ছোট বাক্য অনুশীলন করে রাখুন। এতে আপনি কথোপকথন চালিয়ে যেতে পারবেন, হঠাৎ থেমে যেতে হবে না।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ক্যারোলিন ফেনকেল বলেন, তাঁর প্রিয় একটি লাইন হলো—“এটা সত্যিই মজার শোনাচ্ছে, আরও বলুন।”
যদি ভ্রমণ ভালোবাসেন, জিজ্ঞেস করতে পারেন, কেউ সম্প্রতি কোথাও ঘুরতে গেছেন কি না। আর যদি খাবারে আগ্রহ থাকে, নতুন কোনো রেস্টুরেন্টে খাওয়ার অভিজ্ঞতা জানতে চাইতে পারেন।
৩. প্রতিধ্বনি কৌশল ব্যবহার করুন
অন্যজন যা বলছে সেটিকে সামান্য পরিবর্তন করে প্রশ্ন আকারে ফিরিয়ে দিন। যেমন, কেউ যদি বলে তিনি কাজে সমস্যায় আছেন, তখন জিজ্ঞেস করুন—“সমস্যায়?”
এতে তিনি বিস্তারিত বলার সুযোগ পাবেন এবং আপনি নতুন কিছু ভাবার চাপ থেকে মুক্তি পাবেন।
হল-বাল্ডউইন বলেন, মানুষ চায় তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা হোক। কেবল মনোযোগ দেখালেই অনেক সময় অন্যজন আলাপ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত হন।
৪. একটি ‘অ্যাঙ্কর’ খুঁজে নিন
ঠান্ডা পানীয় হাতে রাখা, ফিজেট খেলনা স্পর্শ করা, কিংবা মেঝেতে পা চেপে ধরা—এসব ছোট কাজ উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। গবেষণা বলছে, এতে মস্তিষ্ক বর্তমান মুহূর্তে ফিরে আসে এবং নিরাপত্তার অনুভূতি জাগে।
ফেনকেল জনসমক্ষে বক্তৃতা করার সময় পকেটে একটি ‘ওয়ারি স্টোন’ রাখেন। প্রতিবার নার্ভাস হলে সেটি স্পর্শ করেন। এটি তাঁকে নিরাপত্তার অনুভূতি দেয় এবং কাজ শেষ করার আত্মবিশ্বাস জোগায়।
৫. বের হওয়ার কৌশল প্রস্তুত রাখুন
সব সামাজিক অনুষ্ঠানই একসময় শেষ হয়, আর চাইলে আপনি আগেই সরে যেতে পারেন। শুরুতেই বন্ধুদের জানিয়ে দিন আপনার সকালে কাজ আছে বা বিকেলে অন্য কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট রয়েছে। এতে চাপ কমবে।
এছাড়া বিনয়ীভাবে আলাপ শেষ করার কিছু বাক্য আগে থেকে ভেবে রাখা ভালো। যেমন—“আপনার সঙ্গে কথা বলে খুব ভালো লাগলো, এখন আমি জেনের সঙ্গে একটু দেখা করব।”
হল-বাল্ডউইন বলেন, এতে আলাপে আটকে পড়ার ভয় কমবে এবং স্বস্তি অনুভব করবেন।