খাদ্য বর্জ্যের নতুন ব্যবহার
তরমুজের খোসা, তৈলাক্ত পিৎজা বাক্স, কিংবা বাগানের আগাছা—অধিকাংশ শহরে এসব সরাসরি ল্যান্ডফিলে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু নিউইয়র্কে এগুলোকে রূপান্তর করা হচ্ছে মূল্যবান সম্পদে, যাকে বলা হচ্ছে ‘কালো সোনা’।
নিউইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অব স্যানিটেশনের সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের ডেপুটি কমিশনার জেনিফার ম্যাকডোনেল বলেন, “আমরা দারুণ মানের কম্পোস্ট তৈরি করছি, যা শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যবহার করে মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করা হচ্ছে।”
স্ট্যাটেন আইল্যান্ড কম্পোস্ট সুবিধা
ডেনালি ওয়াটার সলিউশনস পরিচালিত স্ট্যাটেন আইল্যান্ড কম্পোস্ট সুবিধাটি বহুদিন ধরেই ল্যান্ডস্কেপিং বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করত। তবে এখন এটি বাসাবাড়ি থেকে আসা জৈব বর্জ্যও গ্রহণ করছে। প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ টন বর্জ্য এখানে পৌঁছায়, আর পাতাঝরা মৌসুমে তা বেড়ে ২৫০ টন পর্যন্ত হয়।
বর্জ্য প্রথমে কেটে ও ছেঁকে করা হয়, তারপর তা ‘অ্যারেটেড স্ট্যাটিক পাইলে’ রাখা হয়, যেখানে কম্পোস্ট তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। স্তূপের ভেতরে তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এর বেশি ওঠে, যা ক্ষতিকর জীবাণু ও আগাছার বীজ ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট।
জৈব প্রক্রিয়ার ভূমিকা
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও কীটপতঙ্গ একসাথে বর্জ্য ভেঙে ফেলে। তারপর মজবুত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়ে তৈরি হয় গাঢ় রঙের পুষ্টিসমৃদ্ধ কম্পোস্ট।
এই কম্পোস্টের কিছু অংশ ল্যান্ডস্কেপারদের কাছে বিক্রি করা হয়, আর বাকিটা বিনামূল্যে দেওয়া হয় শহরের বাসিন্দা, স্কুল ও কমিউনিটি গার্ডেনগুলোতে। ম্যাকডোনেল বলেন, “এই বছর আমরা নিউইয়র্ক সিটির বাসিন্দাদের কাছে প্রায় ৬ মিলিয়ন পাউন্ড কম্পোস্ট বিতরণ করেছি।” এটি মাটির গুণগত মান উন্নত করে, বৃষ্টির পানি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং সবুজ এলাকা প্রাণবন্ত রাখে।
জলবায়ু সংকটে ভূমিকা
ন্যাশনাল রিসোর্সেস ডিফেন্স কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, খাদ্য বর্জ্য ও বাগানের আবর্জনাই দেশের গৃহস্থালি বর্জ্যের সবচেয়ে বড় অংশ। এসব যদি ল্যান্ডফিলে ফেলা হয়, তাহলে তা থেকে তৈরি হয় মিথেন গ্যাস, যা শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস।
এনআরডিসির নিউইয়র্ক সিটি এনভায়রনমেন্ট ডিরেক্টর এরিক গোল্ডস্টেইন বলেন, “জলবায়ু সংকট কমাতে চাইলে আমাদের অবশ্যই খাদ্য বর্জ্য ল্যান্ডফিল থেকে সরিয়ে কম্পোস্টে রূপান্তর করতে হবে।”
বাসিন্দাদের অংশগ্রহণ
নিউইয়র্ক সিটির জৈব বর্জ্য সংগ্রহ কর্মসূচি অনুযায়ী, সব বাসিন্দাকে আলাদা করে রাখতে হয় খাবারের উচ্ছিষ্ট, খাবার দাগ লাগানো কাগজ এবং বাগানের বর্জ্য। যদিও এ বছরের শুরুতে এই নিয়ম কার্যকরে স্থগিত দেওয়া হয়েছিল, তবে ২০২৬ সালে আবার তা চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।