বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা সম্প্রতি জানিয়েছেন, প্রয়োজনে রাশিয়া–ইউক্রেন সীমান্তবর্তী বাফার জোনে শান্তিরক্ষী পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে। এই বক্তব্যকে অনেকেই গুরুতর কূটনৈতিক ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। বর্তমানে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে, আর এ প্রেক্ষাপটে ন্যাটো ইতিমধ্যেই সরাসরি ও পরোক্ষভাবে সংঘাতে যুক্ত রয়েছে।
দীর্ঘ অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের
বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী কার্যক্রমে দীর্ঘদিন ধরে সফল ভূমিকা পালন করছে। আফ্রিকা থেকে মধ্যপ্রাচ্য—বিভিন্ন অঞ্চলে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের উপস্থিতি বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। এ কারণে নতুন কোনো আন্তর্জাতিক উদ্যোগে বাংলাদেশের অংশগ্রহণকে স্বাভাবিক ভাবেই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ও কূটনৈতিক সুবিধা
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া–ইউক্রেন সীমান্তে শান্তিরক্ষী পাঠানো হলে বাংলাদেশকে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মহলে আরও দৃঢ় শান্তিপ্রিয় রাষ্ট্র হিসেবে দেখা হবে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক শক্তিগুলোর কাছে বাংলাদেশের কূটনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। অর্থনৈতিক দিক থেকেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হতে পারে।
তবে রয়েছে ঝুঁকিও
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। রাশিয়া ও ন্যাটো উভয় পক্ষই সংঘাতে সক্রিয় থাকায় শান্তিরক্ষীরা সরাসরি হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠতে পারেন। আবার এক পক্ষ শান্তিরক্ষীদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে বাংলাদেশ কূটনৈতিক চাপে পড়তে পারে। পাশাপাশি যুদ্ধক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির প্রভাব দেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে।
ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা
বর্তমানে রাশিয়া কেবল ইউক্রেন নয়, বরং ন্যাটোর সঙ্গেও এক ধরনের প্রক্সি-যুদ্ধে জড়িয়ে আছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশ যদি শান্তিরক্ষী পাঠায়, তবে ন্যাটো-পন্থী ও রাশিয়া-পন্থী উভয় পক্ষের কাছেই অবস্থান ব্যাখ্যা করতে হবে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি নিছক শান্তিরক্ষা নয়; বরং বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের ভূরাজনৈতিক পরীক্ষার শামিল হবে।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের উচিত সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা। জাতিসংঘের ছত্রছায়ায় এবং বৃহৎ আন্তর্জাতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতেই শান্তিরক্ষী প্রেরণ করা যেতে পারে। অন্যথায় বাংলাদেশ অযথা একটি সুপারপাওয়ার–সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়বে, যা জাতীয় স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।