১০:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
দিয়াসোনা দ্বীপ: ইতিহাস, অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য বাড়ছে নগর-দরিদ্র, খাবার নিশ্চিত করা সাধ্যের বাইরে রণক্ষেত্রে (পর্ব-৯৮) সিলেটে বিদ্যুৎ সংকটে বিপর্যস্ত: বিদ্যুৎ কেন্দ্র নষ্ট ও ভারী বর্ষন রহস্যময় ‘ডার্ক ডিএনএ’ আর নাচের মাকড়সার বৈচিত্র্যের গোপন রহস্য নতুন প্রজন্মের তারকা সোম্বর: ভক্তদের ভালোবাসায় ভর করে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী পাঠানোর সম্ভাবনা: আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু গাজা শহরে আশ্রয়ের অভাবে মানুষ: বোমার ঝুঁকিতে সবাই প্যারামাউন্টের নতুন চিফ প্রোডাক্ট অফিসার মেটার শীর্ষ নির্বাহী ডেন গ্লাসগো এক রাতের সহিংসতার পর আলোচনার ভরসা সামরিক বাহিনী

এক রাতের সহিংসতার পর আলোচনার ভরসা সামরিক বাহিনী

ভেঙে পড়া ক্ষমতার কাঠামো

নেপালে টানা দুই দিনের সহিংস বিক্ষোভে বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে যান, শীর্ষ কর্মকর্তারা পদত্যাগ করেন, আর রাষ্ট্রপতি ছিলেন কার্যত অদৃশ্য। মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট, সুপ্রিম কোর্ট এবং পাঁচজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে আগুন দিলে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অরাজকতায় পরিণত হয়।

সেই রাতে নেপালি সেনাবাহিনীর প্রধান ভিডিও বার্তায় জনগণকে শান্ত থাকতে আহ্বান জানান। রাত ১০টার মধ্যে সেনারা রাজধানী কাঠমান্ডুর নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং ধীরে ধীরে সহিংসতা স্তিমিত হতে থাকে। একই রাতে সেনা কর্মকর্তারা নতুন প্রজন্মের স্বঘোষিত জেন-জি আন্দোলনের তরুণ নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে। এই মুহূর্তে সেনাবাহিনীই ছিল একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যারা জনতার সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিতে সক্ষম।

বিক্ষোভকারীদের দাবিঅন্তর্বর্তী সরকার

পূর্ব নেপালের এক ছোট শহরের মেয়র ও সামাজিক কর্মী হরকা সাম্পাং জানান, হাজারো মানুষের অনুরোধে তিনি সেনাপ্রধানের সঙ্গে আলোচনার জন্য কাঠমান্ডুতে গিয়েছিলেন। আন্দোলনের নেতারা সেনাপ্রধানকে জানান, তারা চান সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দেখতে।

এই পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে—একদিকে ক্ষুব্ধ তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনকারীরা এবং অন্যদিকে সামরিক নেতৃত্ব—দুই পক্ষের সমঝোতায় গঠিত একটি নতুন কাঠামো। এর আগে বাংলাদেশেও ছাত্র আন্দোলন ও সেনাবাহিনী একসঙ্গে নোবেল জয়ী মুহাম্মদ ইউনুসকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে বসিয়েছিল।

সেনাবাহিনীর আস্থাইতিহাস

অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল বিনোজ বসনেত বলেন, নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনী অবশ্যই নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করবে। ২০২২ সালে এশিয়া ফাউন্ডেশনের এক জরিপে দেখা যায়, ৯১ শতাংশ নেপালি সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখেন।

তিনি মনে করেন, সেনাবাহিনীকে মানুষ বিশ্বাস করে কারণ তারা নাগরিক কর্তৃপক্ষের অধীন থাকার প্রতিশ্রুতি পালন করে। সোমবারের ঘটনায় অন্তত ১৯ জন নিহত হলেও গুলি চালায় সশস্ত্র পুলিশ, সেনারা নয়।

প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো নেপালি সেনাবাহিনী মূলত রাজতন্ত্রের অধীন ছিল। ১৯৯০ সালে বহুদলীয় গণতন্ত্র আসার পরও তারা ঐতিহ্যগতভাবে রাজাকে কেন্দ্র করেই আনুগত্য দেখিয়েছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মাওবাদীদের বিদ্রোহে সেনারা রাজপরিবারের প্রতি অনুগত ছিল, জনগণের প্রতি নয়।

১৮শ শতকের শেষ দিকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকরা সাহসী গুর্খা সেনাদের নিজেদের বাহিনীতে যুক্ত করে। আজও যুক্তরাজ্য ও ভারত গর্বের সঙ্গে গুর্খা ইউনিট বজায় রেখেছে। ভারতের কিংবদন্তি জেনারেল স্যাম মানেকশো একসময় বলেছিলেন, “যদি কেউ বলে সে মৃত্যুকে ভয় পায় না, তবে সে হয় মিথ্যা বলছে অথবা সে একজন গুর্খা।”

বর্তমানে নেপালি সেনারা আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর অপরিহার্য অংশ।

পরিবর্তনশীল সেনাবাহিনী

অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় জেনারেল অশোক কে. মেহতা জানান, নেপালের গৃহযুদ্ধকালে সেনাবাহিনীর আকার দ্বিগুণ হয়। তবে সেনাবাহিনী এখনও গণতন্ত্রের প্রাকৃতিক রক্ষক হয়ে উঠতে পারেনি।

তার মতে, গত কয়েক দিনের অরাজকতা সেনাবাহিনীকে এমন এক অবস্থায় দাঁড় করিয়েছে, যেটির জন্য তারা প্রস্তুত ছিল না। প্রথমবারের মতো তারা রাজনৈতিক ক্ষমতার শীর্ষস্থানে।

জেনারেল মেহতা বলেন, সেনাবাহিনী ক্ষমতালোভী নয়, বরং দ্বিধায় ভুগছে। তাদের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল মঙ্গলবারের সহিংসতা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া। তা হলে প্রাণহানি ও বিপুল আর্থিক ক্ষতি এড়ানো যেত।

সেনাপ্রধানের সামনে চ্যালেঞ্জ

বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজসিগদেলকে অনেকেই রহস্যময় ব্যক্তি বলে মনে করেন। মেহতার ভাষায়, তিনি ব্যক্তিত্বসম্পন্ন বা আকর্ষণীয় বক্তা নন, আর কার্যকর যোগাযোগেও দুর্বল।

দীর্ঘ ইতিহাসে এসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কিন্তু আজকের ক্ষমতাবান তরুণ প্রজন্মের মুখোমুখি হয়ে নেপালি সেনারা হয়তো নতুন কৌশল শিখতে বাধ্য হবে।

দিয়াসোনা দ্বীপ: ইতিহাস, অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য

এক রাতের সহিংসতার পর আলোচনার ভরসা সামরিক বাহিনী

০৬:১৮:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভেঙে পড়া ক্ষমতার কাঠামো

নেপালে টানা দুই দিনের সহিংস বিক্ষোভে বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে যান, শীর্ষ কর্মকর্তারা পদত্যাগ করেন, আর রাষ্ট্রপতি ছিলেন কার্যত অদৃশ্য। মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট, সুপ্রিম কোর্ট এবং পাঁচজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে আগুন দিলে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অরাজকতায় পরিণত হয়।

সেই রাতে নেপালি সেনাবাহিনীর প্রধান ভিডিও বার্তায় জনগণকে শান্ত থাকতে আহ্বান জানান। রাত ১০টার মধ্যে সেনারা রাজধানী কাঠমান্ডুর নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং ধীরে ধীরে সহিংসতা স্তিমিত হতে থাকে। একই রাতে সেনা কর্মকর্তারা নতুন প্রজন্মের স্বঘোষিত জেন-জি আন্দোলনের তরুণ নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে। এই মুহূর্তে সেনাবাহিনীই ছিল একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যারা জনতার সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিতে সক্ষম।

বিক্ষোভকারীদের দাবিঅন্তর্বর্তী সরকার

পূর্ব নেপালের এক ছোট শহরের মেয়র ও সামাজিক কর্মী হরকা সাম্পাং জানান, হাজারো মানুষের অনুরোধে তিনি সেনাপ্রধানের সঙ্গে আলোচনার জন্য কাঠমান্ডুতে গিয়েছিলেন। আন্দোলনের নেতারা সেনাপ্রধানকে জানান, তারা চান সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দেখতে।

এই পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে—একদিকে ক্ষুব্ধ তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনকারীরা এবং অন্যদিকে সামরিক নেতৃত্ব—দুই পক্ষের সমঝোতায় গঠিত একটি নতুন কাঠামো। এর আগে বাংলাদেশেও ছাত্র আন্দোলন ও সেনাবাহিনী একসঙ্গে নোবেল জয়ী মুহাম্মদ ইউনুসকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে বসিয়েছিল।

সেনাবাহিনীর আস্থাইতিহাস

অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল বিনোজ বসনেত বলেন, নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনী অবশ্যই নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করবে। ২০২২ সালে এশিয়া ফাউন্ডেশনের এক জরিপে দেখা যায়, ৯১ শতাংশ নেপালি সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখেন।

তিনি মনে করেন, সেনাবাহিনীকে মানুষ বিশ্বাস করে কারণ তারা নাগরিক কর্তৃপক্ষের অধীন থাকার প্রতিশ্রুতি পালন করে। সোমবারের ঘটনায় অন্তত ১৯ জন নিহত হলেও গুলি চালায় সশস্ত্র পুলিশ, সেনারা নয়।

প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো নেপালি সেনাবাহিনী মূলত রাজতন্ত্রের অধীন ছিল। ১৯৯০ সালে বহুদলীয় গণতন্ত্র আসার পরও তারা ঐতিহ্যগতভাবে রাজাকে কেন্দ্র করেই আনুগত্য দেখিয়েছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মাওবাদীদের বিদ্রোহে সেনারা রাজপরিবারের প্রতি অনুগত ছিল, জনগণের প্রতি নয়।

১৮শ শতকের শেষ দিকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকরা সাহসী গুর্খা সেনাদের নিজেদের বাহিনীতে যুক্ত করে। আজও যুক্তরাজ্য ও ভারত গর্বের সঙ্গে গুর্খা ইউনিট বজায় রেখেছে। ভারতের কিংবদন্তি জেনারেল স্যাম মানেকশো একসময় বলেছিলেন, “যদি কেউ বলে সে মৃত্যুকে ভয় পায় না, তবে সে হয় মিথ্যা বলছে অথবা সে একজন গুর্খা।”

বর্তমানে নেপালি সেনারা আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর অপরিহার্য অংশ।

পরিবর্তনশীল সেনাবাহিনী

অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় জেনারেল অশোক কে. মেহতা জানান, নেপালের গৃহযুদ্ধকালে সেনাবাহিনীর আকার দ্বিগুণ হয়। তবে সেনাবাহিনী এখনও গণতন্ত্রের প্রাকৃতিক রক্ষক হয়ে উঠতে পারেনি।

তার মতে, গত কয়েক দিনের অরাজকতা সেনাবাহিনীকে এমন এক অবস্থায় দাঁড় করিয়েছে, যেটির জন্য তারা প্রস্তুত ছিল না। প্রথমবারের মতো তারা রাজনৈতিক ক্ষমতার শীর্ষস্থানে।

জেনারেল মেহতা বলেন, সেনাবাহিনী ক্ষমতালোভী নয়, বরং দ্বিধায় ভুগছে। তাদের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল মঙ্গলবারের সহিংসতা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া। তা হলে প্রাণহানি ও বিপুল আর্থিক ক্ষতি এড়ানো যেত।

সেনাপ্রধানের সামনে চ্যালেঞ্জ

বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজসিগদেলকে অনেকেই রহস্যময় ব্যক্তি বলে মনে করেন। মেহতার ভাষায়, তিনি ব্যক্তিত্বসম্পন্ন বা আকর্ষণীয় বক্তা নন, আর কার্যকর যোগাযোগেও দুর্বল।

দীর্ঘ ইতিহাসে এসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কিন্তু আজকের ক্ষমতাবান তরুণ প্রজন্মের মুখোমুখি হয়ে নেপালি সেনারা হয়তো নতুন কৌশল শিখতে বাধ্য হবে।