আমি যখন আমার মেয়েকে সামার ক্যাম্প থেকে নিয়ে এলাম, তখন আমরা নর্থ ক্যারোলাইনা থেকে কেন্টাকির দাদা-দাদির বাড়ি পর্যন্ত অ্যাপালাচিয়ান পর্বতমালা পেরিয়ে আট ঘণ্টার দীর্ঘ ড্রাইভে রওনা দিলাম। যাত্রার বেশিরভাগ সময়েই মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল না বললেই চলে। ফলে আমরা ডিভাইসের ব্যাঘাত ছাড়াই এক বিরল, দীর্ঘ এবং চিন্তাশীল আলাপচারিতার সুযোগ পেলাম। আলোচনার বিষয়, স্বাভাবিকভাবেই, এআই।
আমার মেয়ের মতে, তার হাইস্কুল বয়সী সহপাঠীরা কেউই এআই চায় না, কেউই এ নিয়ে উত্তেজিত নয়। কেন? আমি জিজ্ঞেস করলাম। সে উত্তর দিল, “কারণ আমরা যে চাকরিগুলো করতে চেয়েছিলাম, সেগুলো সবই চলে যাবে।”
তার হতাশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি আমাকে ভাবিয়ে তুলল। সে জানাল, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে জর্জিয়া, নিউ হ্যাম্পশায়ার—সব জায়গায়ই তার বন্ধুদের একই অনুভূতি। এমনিতেই ভঙ্গুর এই পৃথিবী জলবায়ু পরিবর্তন আর আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার ভাঙনের সঙ্গে লড়ছে। সেই প্রেক্ষাপটে এআই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কর্মসংস্থান ও নিরাপদ জীবনের ওপর অশনি সংকেত হয়ে দেখা দিয়েছে।
এই উদ্বেগ অমূলক নয়। আমাদের যাত্রার কয়েক দিন আগে ওপেনএআই প্রধান স্যাম অল্টম্যান মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের বোর্ড অব গভর্নরদের বলেছিলেন, এআই এজেন্টরা পুরো চাকরির ক্ষেত্রকে মুছে দেবে, “সম্পূর্ণভাবে বিলীন হয়ে যাবে।” অ্যানথ্রপিক প্রধান ডারিও আমোদেই অ্যাক্সিওসকে বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এআই এন্ট্রি-লেভেল সাদা-কালার চাকরির অর্ধেক বিলুপ্ত করবে। অ্যামাজনের প্রধান অ্যান্ডি জ্যাসি বলেছেন, প্রতিষ্ঠানটি আগামী বছরগুলোতে এআই এজেন্টের পক্ষে চাকরি বাদ দেবে। শপিফাইয়ের প্রধান টবি ল্যুটকে কর্মীদের জানিয়েছেন, নতুন পদে নিয়োগের আগে প্রমাণ করতে হবে কাজটি এআই দিয়ে সম্ভব নয়। শুধু প্রযুক্তি খাত নয়, ফোর্ডের প্রধান জিম ফার্লিও বলেছেন, তিনি আশা করছেন এআই যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক সাদা-কালার চাকরি প্রতিস্থাপন করবে।
এগুলো আর কেবল তত্ত্ব নয়। ইতিমধ্যেই প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে এআই কর্মসংস্থানের ওপর প্রভাব ফেলছে। যেমন, প্রযুক্তি ও অর্থনীতির মতো খাতে নতুন স্নাতকদের নিয়োগ কমে গেছে। যদিও একমাত্র এআই দায়ী নয়, তবে এর প্রভাব যে রয়েছে, তা স্পষ্ট।
জেনারেশন জেড-এর জন্য সমস্যা কেবল চাকরি নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৃহৎ প্রজন্মগত চ্যালেঞ্জও। এআই অত্যন্ত কম্পিউটেশন-নির্ভর এবং বিশাল ডেটা সেন্টারের প্রয়োজন হয়। ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে বিশাল কমপ্লেক্স গড়ে উঠছে—পূর্বে ভার্জিনিয়া থেকে পশ্চিমে নেভাদা পর্যন্ত। সুপারইন্টেলিজেন্স তৈরির প্রতিযোগিতা যত তীব্র হচ্ছে, এ নির্মাণ তত দ্রুত হবে। মেটা ও ওপেনএআই ঘোষণা করেছে, তাদের ডেটা সেন্টার কেবল কম্পিউটিংয়ের জন্যই পাঁচ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন করবে—যা গ্রীষ্মকালে পুরো মেইন অঙ্গরাজ্য চালানোর সমান।
অনেক ক্ষেত্রেই এই বিদ্যুৎ প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে উৎপাদিত হবে—যা বাড়াবে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যখন পানি সংকট আরও প্রকট, তখন ডেটা সেন্টারের জন্য বিপুল পানি টেনে নেওয়ায় অনেক সম্প্রদায় সরাসরি পানিশূন্য হয়ে পড়ছে।
সমর্থকদের যুক্তি, এআই বিদ্যুৎ গ্রিডকে আরও দক্ষ করবে, পরিচ্ছন্ন জ্বালানির দিকে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ঘটাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—এ মুহূর্তেই মেমফিসে xAI-এর মিথেনচালিত জেনারেটর কার্বন ছড়াচ্ছে। গুগলের বিদ্যুৎ ব্যবহার ও নির্গমন দ্রুত বেড়ে চলেছে।
আমার মেয়ে বলল, পরিস্থিতি ভিন্ন হতো যদি এটি সত্যিই উপকারী হতো। কিন্তু তার মতে, তাদের প্রজন্মের কাছে এটি এক আসন্ন হুমকি—যার খরচ স্পষ্ট, কিন্তু উপকারিতা অদৃশ্য। “গবেষণার জন্য ভালো নয় কারণ এটি যথেষ্ট সঠিক নয়। লেখার কাজে ব্যবহার করা যায় না কারণ এটি নিষিদ্ধ—এমনকি যারা ব্যবহারই করেনি, তারাও এআই ডিটেক্টরের কারণে শূন্য পেয়ে যাচ্ছে। আর এটি ভালো চাকরি কেড়ে নেবে। এক শিক্ষক বলেছেন, আমরা সবাই একদিন ঝাড়ুদার হয়ে যাব।”
এআইবিহীন পৃথিবীতে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়—আমরা ফিরবও না। তবুও আগামী প্রজন্মের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে আরও জরুরি সমস্যার সমাধান প্রয়োজন।