১০:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
আলিবাবা প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা’এর অ্যান্ট গ্রুপ সফর ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উদ্যোগ জোরদার এক দিনে সংসদ ও গণভোটের কর্মপরিকল্পনা চায় দলগুলো পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১২৯) বিশ্বের অর্থনীতি ও স্থিতিশীলতা ধ্বংসে এগিয়ে চলেছে হোয়াইট কলার টেরোরিজম স্যাম্পলের সিম্ফনি: ড্যানিয়েল লোপাটিনের পরীক্ষামূলক সাউন্ডস্কেপের নতুন বিস্তার এআই ভিডিও কমাতে ‘টোন ডাউন’ অপশন আনছে টিকটক রেকর্ড-নতুন ফল: চীনের জুনো ‘ঘোস্ট পার্টিকল’ ডিটেক্টরের অভাবনীয় সাফল্য ডেভনে আবার ফিরতে পারে বন্য বিড়াল: দুই বছরের গবেষণায় নতুন সম্ভাবনা প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩২৭) নন-প্রফিট কাঠামোতে যাচ্ছে মাষ্টডন, সিইও পদ ছাড়ছেন প্রতিষ্ঠাতা ইউজেন রখকো”

তেলের দামের আন্তর্জাতিক অস্থিরতা ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় দুই শতাংশ বেড়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে চলমান সংঘাতই এই মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ। বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে যেকোনো ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের মতো আমদানিনির্ভর দেশের জন্য বড় সংকট তৈরি করে। তাই সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে বাংলাদেশকে এখন থেকেই জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কৌশল নিতে হবে।

আমদানিনির্ভরতার ঝুঁকি

বাংলাদেশ তার জ্বালানি চাহিদার বড় অংশ আমদানির ওপর নির্ভর করে। অপরিশোধিত তেল, এলএনজি এবং বিদ্যুতের জন্য ব্যবহৃত কয়লার একটি বড় অংশ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আসে। দামের সামান্য পরিবর্তনও দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ, জ্বালানি ভর্তুকি ও অভ্যন্তরীণ মুদ্রাস্ফীতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে তা সরাসরি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করে।

কৌশলগত মজুত গড়ে তোলা

বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো কৌশলগত তেল মজুত (স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ) তৈরি করা। অনেক দেশ কয়েক মাসের জ্বালানি ব্যবহার মজুত রাখে, যাতে বৈশ্বিক অস্থিরতার সময় সরবরাহ বজায় থাকে। বাংলাদেশেও সরকারকে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি মজুত পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।

বিকল্প জ্বালানি উৎসের দিকে মনোযোগ

প্রচলিত জ্বালানির পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি। সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করলে আমদানিনির্ভরতা কিছুটা হলেও কমবে। একইসঙ্গে প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান এবং নিজস্ব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবহারও দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি নিরাপত্তায় সহায়ক হতে পারে।

আঞ্চলিক সহযোগিতা

জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানো জরুরি। ভারত, নেপাল, ভুটানসহ আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বাণিজ্য ও গ্যাস পাইপলাইন সংযোগের উদ্যোগ গ্রহণ করলে ঝুঁকি অনেকাংশে কমবে। বহুপাক্ষিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ বিকল্প সরবরাহ উৎসও নিশ্চিত করতে পারবে।

জ্বালানি দক্ষতা ও সাশ্রয়

শুধু আমদানি ও বিকল্প উৎসই নয়, বরং জ্বালানি ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি করাও জরুরি। শিল্প, পরিবহন ও বিদ্যুৎ খাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ালে খরচ কমানো সম্ভব। একইসঙ্গে জনগণের মধ্যে সাশ্রয়ী ব্যবহারের সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

রাশিয়া-ন্যাটো সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশকে তাই এখনই সমন্বিত নীতি গ্রহণ করতে হবে: কৌশলগত মজুত, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া বিকল্প নেই।

জনপ্রিয় সংবাদ

আলিবাবা প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা’এর অ্যান্ট গ্রুপ সফর ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উদ্যোগ জোরদার

তেলের দামের আন্তর্জাতিক অস্থিরতা ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ

০৬:০০:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় দুই শতাংশ বেড়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে চলমান সংঘাতই এই মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ। বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে যেকোনো ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের মতো আমদানিনির্ভর দেশের জন্য বড় সংকট তৈরি করে। তাই সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে বাংলাদেশকে এখন থেকেই জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কৌশল নিতে হবে।

আমদানিনির্ভরতার ঝুঁকি

বাংলাদেশ তার জ্বালানি চাহিদার বড় অংশ আমদানির ওপর নির্ভর করে। অপরিশোধিত তেল, এলএনজি এবং বিদ্যুতের জন্য ব্যবহৃত কয়লার একটি বড় অংশ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আসে। দামের সামান্য পরিবর্তনও দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ, জ্বালানি ভর্তুকি ও অভ্যন্তরীণ মুদ্রাস্ফীতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে তা সরাসরি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করে।

কৌশলগত মজুত গড়ে তোলা

বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো কৌশলগত তেল মজুত (স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ) তৈরি করা। অনেক দেশ কয়েক মাসের জ্বালানি ব্যবহার মজুত রাখে, যাতে বৈশ্বিক অস্থিরতার সময় সরবরাহ বজায় থাকে। বাংলাদেশেও সরকারকে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি মজুত পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।

বিকল্প জ্বালানি উৎসের দিকে মনোযোগ

প্রচলিত জ্বালানির পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি। সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করলে আমদানিনির্ভরতা কিছুটা হলেও কমবে। একইসঙ্গে প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান এবং নিজস্ব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবহারও দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি নিরাপত্তায় সহায়ক হতে পারে।

আঞ্চলিক সহযোগিতা

জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানো জরুরি। ভারত, নেপাল, ভুটানসহ আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বাণিজ্য ও গ্যাস পাইপলাইন সংযোগের উদ্যোগ গ্রহণ করলে ঝুঁকি অনেকাংশে কমবে। বহুপাক্ষিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ বিকল্প সরবরাহ উৎসও নিশ্চিত করতে পারবে।

জ্বালানি দক্ষতা ও সাশ্রয়

শুধু আমদানি ও বিকল্প উৎসই নয়, বরং জ্বালানি ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি করাও জরুরি। শিল্প, পরিবহন ও বিদ্যুৎ খাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ালে খরচ কমানো সম্ভব। একইসঙ্গে জনগণের মধ্যে সাশ্রয়ী ব্যবহারের সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

রাশিয়া-ন্যাটো সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশকে তাই এখনই সমন্বিত নীতি গ্রহণ করতে হবে: কৌশলগত মজুত, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া বিকল্প নেই।