০৬:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
পান্থকুঞ্জ ও হাতিরঝিল অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত করেননি চেম্বার আদালত ইইউর ১৯তম রাশিয়া নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ স্থগিত—পরিধি নিয়ে মতভেদ অ্যামাজনের হার্ডওয়্যার ইভেন্ট ৩০ সেপ্টেম্বর—ইকো, ফায়ার টিভি, কিন্ডলে চমক টিকটক সমাধানে ‘ফ্রেমওয়ার্ক’—যুক্তরাষ্ট্রে চালু রাখতে অরাকলসহ কনসোর্টিয়াম স্কারবরো শোলে ফিলিপাইনি জাহাজে চীনের ওয়াটার ক্যানন রুশ হামলায় জাপোরিঝিয়ায় একজন নিহত, বহু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত ফেড সুদ কমাতে পারে—এশিয়া শেয়ারে নতুন উত্থান চীনের বৈশ্বিক বন্দর প্রভাব কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের বড়সড় সামুদ্রিক উদ্যোগ মিথ্যা মামলাবাজদের দাপটে অসহায়দের কথা বাংলাদেশে গাজায় নতুন স্থল অভিযান—তীব্র বোমাবর্ষণে নগর কাঁপছে

মোগলদের পছন্দের বিরিয়ানি: ইতিহাস ও রান্নার রীতিনীতি

মোগলদের খাদ্যাভ্যাসে মাংসের আধিপত্য

মোগল সাম্রাজ্যের রাজপ্রাসাদে খাবার মানেই ছিল এক রাজকীয় ভোজ। যদিও মোগলরা সবজি খেতেন, তবে তাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা কখনোই মাংস ছাড়া পূর্ণ হতো না। ভেড়া, খাসি, গরু, মুরগি এমনকি হরিণ ও নীলগাই জাতীয় বন্যপ্রাণীর মাংসও মোগল রান্নাঘরের পরিচিত উপকরণ ছিল। রাজকীয় উৎসবে বা যেকোনো পার্বণ উপলক্ষে নানা ধরনের মাংসের পদের ছড়াছড়ি থাকত।

সবজি থাকলেও কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মাংস

বিভিন্ন মৌসুমী সবজি যেমন বেগুন, শিম, পটল, করলা, লাউ প্রভৃতি রান্না করা হতো। তবে সবজি ছিল সাধারণত সাইড ডিশ হিসেবে। মূল পদে বরাবরই আধিপত্য ছিল মাংসের। মোগল রান্নায় মশলার ব্যবহার ছিল ভারসাম্যপূর্ণ এবং শিল্পসুলভ। তারা ঘন ও গাঢ় গ্রেভির মধ্যে রান্না করত, যাতে প্রতিটি উপাদান গভীরভাবে মিশে যায়।

বিরিয়ানি: মোগলদের হৃদয়ের রান্না

মোগল রান্নাঘরের অন্যতম গর্বের পদ ছিল বিরিয়ানি। এটা শুধু খাবার নয়, বরং এক ধরনের শিল্প ছিল। বিরিয়ানি মোগলদের কাছে শুধু স্বাদ নয়, সৌন্দর্য, সুবাস ও রাজকীয়তার প্রতীকও ছিল।

মোগল স্টাইলে বিরিয়ানি রান্নার রীতিনীতি

১. মাংসের প্রস্তুতি:
বিরিয়ানির জন্য সাধারণত খাসির মাংস ব্যবহৃত হতো। মাংসকে দই, আদা-রসুন বাটা, লবণ, গোলমরিচ, এলাচ, দারুচিনি, জায়ফল-জয়ত্রি এবং ঘি দিয়ে দীর্ঘক্ষণ মেরিনেট করে রাখা হতো। কখনো কখনো কাঁচা পেঁপের রস দিয়ে মাংসকে নরম করাও হতো।

২. চালের প্রস্তুতি:
বাসমতি চাল ধুয়ে কিছুকাল ভিজিয়ে রাখা হতো। এরপর গরম পানি, তেজপাতা, এলাচ, দারুচিনি দিয়ে আধা সেদ্ধ করে ফেলা হতো। মোগলরা চালের প্রতিটি দানাই যেন ঝরঝরে থাকে, সে বিষয়ে খুব যত্ন নিত।

৩. দমে রান্না:
বিরিয়ানির আসল সৌন্দর্য ছিল এর দমে রান্নায়। একটি বড় কাঁসার হাঁড়িতে প্রথমে ঘি মাখানো হতো, তারপর এক স্তর মেরিনেট করা মাংস, তার ওপর এক স্তর সেদ্ধ চাল, তারপর কেওড়া ও গোলাপ জল, জাফরান ভেজানো দুধ, ঘি, ভাজা পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, পুদিনা ও ধনেপাতা দিয়ে স্তরে স্তরে সাজানো হতো। হাঁড়ির মুখ ভালোভাবে ময়দা দিয়ে আটকে দিয়ে কয়লার আগুনে বা মাটির নিচে দাফন করে ‘দম’ দেওয়া হতো।

৪. সুবাস ও পরিবেশন:
বিরিয়ানি প্রস্তুত হলে ঢাকনা খোলার পর এক রাজকীয় সুবাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ত। মোগলরা সাধারণত এটি খেতেন ঘন দই, কিসমিস-পেঁয়াজ ভাজা দিয়ে তৈরি বিরিয়ানি রায়তা বা মিষ্টি বোরানির সঙ্গে।

বিরিয়ানি ছিল মোগলদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির অংশ। এটি কেবলমাত্র খাবার নয়, বরং ইতিহাস, সৃজনশীলতা ও স্বাদের সংমিশ্রণ। আজকের দিনেও মোগলাই বিরিয়ানি বাংলাদেশের সহ উপমহাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে মানুষের প্রিয় খাবারে পরিণত হয়েছে। তবে তার শিকড় গভীরভাবে জড়িয়ে আছে মোগল রান্নাঘরের সেই দমে রান্না করা সুগন্ধি, সমৃদ্ধ এবং চমকপ্রদ বিরিয়ানির ঐতিহ্যে।

পান্থকুঞ্জ ও হাতিরঝিল অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত করেননি চেম্বার আদালত

মোগলদের পছন্দের বিরিয়ানি: ইতিহাস ও রান্নার রীতিনীতি

০৩:১৮:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মোগলদের খাদ্যাভ্যাসে মাংসের আধিপত্য

মোগল সাম্রাজ্যের রাজপ্রাসাদে খাবার মানেই ছিল এক রাজকীয় ভোজ। যদিও মোগলরা সবজি খেতেন, তবে তাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা কখনোই মাংস ছাড়া পূর্ণ হতো না। ভেড়া, খাসি, গরু, মুরগি এমনকি হরিণ ও নীলগাই জাতীয় বন্যপ্রাণীর মাংসও মোগল রান্নাঘরের পরিচিত উপকরণ ছিল। রাজকীয় উৎসবে বা যেকোনো পার্বণ উপলক্ষে নানা ধরনের মাংসের পদের ছড়াছড়ি থাকত।

সবজি থাকলেও কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মাংস

বিভিন্ন মৌসুমী সবজি যেমন বেগুন, শিম, পটল, করলা, লাউ প্রভৃতি রান্না করা হতো। তবে সবজি ছিল সাধারণত সাইড ডিশ হিসেবে। মূল পদে বরাবরই আধিপত্য ছিল মাংসের। মোগল রান্নায় মশলার ব্যবহার ছিল ভারসাম্যপূর্ণ এবং শিল্পসুলভ। তারা ঘন ও গাঢ় গ্রেভির মধ্যে রান্না করত, যাতে প্রতিটি উপাদান গভীরভাবে মিশে যায়।

বিরিয়ানি: মোগলদের হৃদয়ের রান্না

মোগল রান্নাঘরের অন্যতম গর্বের পদ ছিল বিরিয়ানি। এটা শুধু খাবার নয়, বরং এক ধরনের শিল্প ছিল। বিরিয়ানি মোগলদের কাছে শুধু স্বাদ নয়, সৌন্দর্য, সুবাস ও রাজকীয়তার প্রতীকও ছিল।

মোগল স্টাইলে বিরিয়ানি রান্নার রীতিনীতি

১. মাংসের প্রস্তুতি:
বিরিয়ানির জন্য সাধারণত খাসির মাংস ব্যবহৃত হতো। মাংসকে দই, আদা-রসুন বাটা, লবণ, গোলমরিচ, এলাচ, দারুচিনি, জায়ফল-জয়ত্রি এবং ঘি দিয়ে দীর্ঘক্ষণ মেরিনেট করে রাখা হতো। কখনো কখনো কাঁচা পেঁপের রস দিয়ে মাংসকে নরম করাও হতো।

২. চালের প্রস্তুতি:
বাসমতি চাল ধুয়ে কিছুকাল ভিজিয়ে রাখা হতো। এরপর গরম পানি, তেজপাতা, এলাচ, দারুচিনি দিয়ে আধা সেদ্ধ করে ফেলা হতো। মোগলরা চালের প্রতিটি দানাই যেন ঝরঝরে থাকে, সে বিষয়ে খুব যত্ন নিত।

৩. দমে রান্না:
বিরিয়ানির আসল সৌন্দর্য ছিল এর দমে রান্নায়। একটি বড় কাঁসার হাঁড়িতে প্রথমে ঘি মাখানো হতো, তারপর এক স্তর মেরিনেট করা মাংস, তার ওপর এক স্তর সেদ্ধ চাল, তারপর কেওড়া ও গোলাপ জল, জাফরান ভেজানো দুধ, ঘি, ভাজা পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, পুদিনা ও ধনেপাতা দিয়ে স্তরে স্তরে সাজানো হতো। হাঁড়ির মুখ ভালোভাবে ময়দা দিয়ে আটকে দিয়ে কয়লার আগুনে বা মাটির নিচে দাফন করে ‘দম’ দেওয়া হতো।

৪. সুবাস ও পরিবেশন:
বিরিয়ানি প্রস্তুত হলে ঢাকনা খোলার পর এক রাজকীয় সুবাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ত। মোগলরা সাধারণত এটি খেতেন ঘন দই, কিসমিস-পেঁয়াজ ভাজা দিয়ে তৈরি বিরিয়ানি রায়তা বা মিষ্টি বোরানির সঙ্গে।

বিরিয়ানি ছিল মোগলদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির অংশ। এটি কেবলমাত্র খাবার নয়, বরং ইতিহাস, সৃজনশীলতা ও স্বাদের সংমিশ্রণ। আজকের দিনেও মোগলাই বিরিয়ানি বাংলাদেশের সহ উপমহাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে মানুষের প্রিয় খাবারে পরিণত হয়েছে। তবে তার শিকড় গভীরভাবে জড়িয়ে আছে মোগল রান্নাঘরের সেই দমে রান্না করা সুগন্ধি, সমৃদ্ধ এবং চমকপ্রদ বিরিয়ানির ঐতিহ্যে।