১১:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
মালয়েশিয়ায় নজিরবিহীন মাদক অভিযান, দেড় বিলিয়ন রিঙ্গিতের বেশি মাদক জব্দ স্কোয়াশে ঘুরে দাঁড়ানো এক কিশোরের গল্প: ভুলের অতীত ছাপিয়ে স্বপ্নের নতুন পথ স্তনে ব্যথা ও গাঁট, ক্যানসার নয় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার আঘাতেই ভুগছিলেন তিনি নয়াদিল্লিতে বিক্ষোভে বাংলাদেশ হাইকমিশনার হুমকির মুখে পড়েছিলেন: ঢাকার দাবি টেকনাফে পাহাড়ি জমি থেকে চাকমা যুবক অপহরণ মেটার ‘বিশ্বস্ত’ সংস্থার সহায়তায় আমি নিজেই একটি প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন চালিয়েছি কক্সবাজারে পর্যটকের চাপ, সেবা ব্যবস্থায় চাপ বাড়ছে রাজবংশের হাতে গড়া লিংইন মন্দির শুধু দর্শনের জন্য জন্য নয় সরাসরি ইতিহাস পাঠ বন্য প্রাণীর চলাচলে জীবনরেখা ক্যানোপি সেতু, সুনগাই পিনে নতুন আশার গল্প ঘূর্ণিঝড় দিত্বাহর ধ্বংসযজ্ঞের পর শ্রীলঙ্কার পাশে বিশ্বব্যাংক গ্রুপ

মোগলদের পছন্দের বিরিয়ানি: ইতিহাস ও রান্নার রীতিনীতি

মোগলদের খাদ্যাভ্যাসে মাংসের আধিপত্য

মোগল সাম্রাজ্যের রাজপ্রাসাদে খাবার মানেই ছিল এক রাজকীয় ভোজ। যদিও মোগলরা সবজি খেতেন, তবে তাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা কখনোই মাংস ছাড়া পূর্ণ হতো না। ভেড়া, খাসি, গরু, মুরগি এমনকি হরিণ ও নীলগাই জাতীয় বন্যপ্রাণীর মাংসও মোগল রান্নাঘরের পরিচিত উপকরণ ছিল। রাজকীয় উৎসবে বা যেকোনো পার্বণ উপলক্ষে নানা ধরনের মাংসের পদের ছড়াছড়ি থাকত।

সবজি থাকলেও কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মাংস

বিভিন্ন মৌসুমী সবজি যেমন বেগুন, শিম, পটল, করলা, লাউ প্রভৃতি রান্না করা হতো। তবে সবজি ছিল সাধারণত সাইড ডিশ হিসেবে। মূল পদে বরাবরই আধিপত্য ছিল মাংসের। মোগল রান্নায় মশলার ব্যবহার ছিল ভারসাম্যপূর্ণ এবং শিল্পসুলভ। তারা ঘন ও গাঢ় গ্রেভির মধ্যে রান্না করত, যাতে প্রতিটি উপাদান গভীরভাবে মিশে যায়।

বিরিয়ানি: মোগলদের হৃদয়ের রান্না

মোগল রান্নাঘরের অন্যতম গর্বের পদ ছিল বিরিয়ানি। এটা শুধু খাবার নয়, বরং এক ধরনের শিল্প ছিল। বিরিয়ানি মোগলদের কাছে শুধু স্বাদ নয়, সৌন্দর্য, সুবাস ও রাজকীয়তার প্রতীকও ছিল।

মোগল স্টাইলে বিরিয়ানি রান্নার রীতিনীতি

১. মাংসের প্রস্তুতি:
বিরিয়ানির জন্য সাধারণত খাসির মাংস ব্যবহৃত হতো। মাংসকে দই, আদা-রসুন বাটা, লবণ, গোলমরিচ, এলাচ, দারুচিনি, জায়ফল-জয়ত্রি এবং ঘি দিয়ে দীর্ঘক্ষণ মেরিনেট করে রাখা হতো। কখনো কখনো কাঁচা পেঁপের রস দিয়ে মাংসকে নরম করাও হতো।

২. চালের প্রস্তুতি:
বাসমতি চাল ধুয়ে কিছুকাল ভিজিয়ে রাখা হতো। এরপর গরম পানি, তেজপাতা, এলাচ, দারুচিনি দিয়ে আধা সেদ্ধ করে ফেলা হতো। মোগলরা চালের প্রতিটি দানাই যেন ঝরঝরে থাকে, সে বিষয়ে খুব যত্ন নিত।

৩. দমে রান্না:
বিরিয়ানির আসল সৌন্দর্য ছিল এর দমে রান্নায়। একটি বড় কাঁসার হাঁড়িতে প্রথমে ঘি মাখানো হতো, তারপর এক স্তর মেরিনেট করা মাংস, তার ওপর এক স্তর সেদ্ধ চাল, তারপর কেওড়া ও গোলাপ জল, জাফরান ভেজানো দুধ, ঘি, ভাজা পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, পুদিনা ও ধনেপাতা দিয়ে স্তরে স্তরে সাজানো হতো। হাঁড়ির মুখ ভালোভাবে ময়দা দিয়ে আটকে দিয়ে কয়লার আগুনে বা মাটির নিচে দাফন করে ‘দম’ দেওয়া হতো।

৪. সুবাস ও পরিবেশন:
বিরিয়ানি প্রস্তুত হলে ঢাকনা খোলার পর এক রাজকীয় সুবাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ত। মোগলরা সাধারণত এটি খেতেন ঘন দই, কিসমিস-পেঁয়াজ ভাজা দিয়ে তৈরি বিরিয়ানি রায়তা বা মিষ্টি বোরানির সঙ্গে।

বিরিয়ানি ছিল মোগলদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির অংশ। এটি কেবলমাত্র খাবার নয়, বরং ইতিহাস, সৃজনশীলতা ও স্বাদের সংমিশ্রণ। আজকের দিনেও মোগলাই বিরিয়ানি বাংলাদেশের সহ উপমহাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে মানুষের প্রিয় খাবারে পরিণত হয়েছে। তবে তার শিকড় গভীরভাবে জড়িয়ে আছে মোগল রান্নাঘরের সেই দমে রান্না করা সুগন্ধি, সমৃদ্ধ এবং চমকপ্রদ বিরিয়ানির ঐতিহ্যে।

জনপ্রিয় সংবাদ

মালয়েশিয়ায় নজিরবিহীন মাদক অভিযান, দেড় বিলিয়ন রিঙ্গিতের বেশি মাদক জব্দ

মোগলদের পছন্দের বিরিয়ানি: ইতিহাস ও রান্নার রীতিনীতি

০৩:১৮:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মোগলদের খাদ্যাভ্যাসে মাংসের আধিপত্য

মোগল সাম্রাজ্যের রাজপ্রাসাদে খাবার মানেই ছিল এক রাজকীয় ভোজ। যদিও মোগলরা সবজি খেতেন, তবে তাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা কখনোই মাংস ছাড়া পূর্ণ হতো না। ভেড়া, খাসি, গরু, মুরগি এমনকি হরিণ ও নীলগাই জাতীয় বন্যপ্রাণীর মাংসও মোগল রান্নাঘরের পরিচিত উপকরণ ছিল। রাজকীয় উৎসবে বা যেকোনো পার্বণ উপলক্ষে নানা ধরনের মাংসের পদের ছড়াছড়ি থাকত।

সবজি থাকলেও কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মাংস

বিভিন্ন মৌসুমী সবজি যেমন বেগুন, শিম, পটল, করলা, লাউ প্রভৃতি রান্না করা হতো। তবে সবজি ছিল সাধারণত সাইড ডিশ হিসেবে। মূল পদে বরাবরই আধিপত্য ছিল মাংসের। মোগল রান্নায় মশলার ব্যবহার ছিল ভারসাম্যপূর্ণ এবং শিল্পসুলভ। তারা ঘন ও গাঢ় গ্রেভির মধ্যে রান্না করত, যাতে প্রতিটি উপাদান গভীরভাবে মিশে যায়।

বিরিয়ানি: মোগলদের হৃদয়ের রান্না

মোগল রান্নাঘরের অন্যতম গর্বের পদ ছিল বিরিয়ানি। এটা শুধু খাবার নয়, বরং এক ধরনের শিল্প ছিল। বিরিয়ানি মোগলদের কাছে শুধু স্বাদ নয়, সৌন্দর্য, সুবাস ও রাজকীয়তার প্রতীকও ছিল।

মোগল স্টাইলে বিরিয়ানি রান্নার রীতিনীতি

১. মাংসের প্রস্তুতি:
বিরিয়ানির জন্য সাধারণত খাসির মাংস ব্যবহৃত হতো। মাংসকে দই, আদা-রসুন বাটা, লবণ, গোলমরিচ, এলাচ, দারুচিনি, জায়ফল-জয়ত্রি এবং ঘি দিয়ে দীর্ঘক্ষণ মেরিনেট করে রাখা হতো। কখনো কখনো কাঁচা পেঁপের রস দিয়ে মাংসকে নরম করাও হতো।

২. চালের প্রস্তুতি:
বাসমতি চাল ধুয়ে কিছুকাল ভিজিয়ে রাখা হতো। এরপর গরম পানি, তেজপাতা, এলাচ, দারুচিনি দিয়ে আধা সেদ্ধ করে ফেলা হতো। মোগলরা চালের প্রতিটি দানাই যেন ঝরঝরে থাকে, সে বিষয়ে খুব যত্ন নিত।

৩. দমে রান্না:
বিরিয়ানির আসল সৌন্দর্য ছিল এর দমে রান্নায়। একটি বড় কাঁসার হাঁড়িতে প্রথমে ঘি মাখানো হতো, তারপর এক স্তর মেরিনেট করা মাংস, তার ওপর এক স্তর সেদ্ধ চাল, তারপর কেওড়া ও গোলাপ জল, জাফরান ভেজানো দুধ, ঘি, ভাজা পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, পুদিনা ও ধনেপাতা দিয়ে স্তরে স্তরে সাজানো হতো। হাঁড়ির মুখ ভালোভাবে ময়দা দিয়ে আটকে দিয়ে কয়লার আগুনে বা মাটির নিচে দাফন করে ‘দম’ দেওয়া হতো।

৪. সুবাস ও পরিবেশন:
বিরিয়ানি প্রস্তুত হলে ঢাকনা খোলার পর এক রাজকীয় সুবাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ত। মোগলরা সাধারণত এটি খেতেন ঘন দই, কিসমিস-পেঁয়াজ ভাজা দিয়ে তৈরি বিরিয়ানি রায়তা বা মিষ্টি বোরানির সঙ্গে।

বিরিয়ানি ছিল মোগলদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির অংশ। এটি কেবলমাত্র খাবার নয়, বরং ইতিহাস, সৃজনশীলতা ও স্বাদের সংমিশ্রণ। আজকের দিনেও মোগলাই বিরিয়ানি বাংলাদেশের সহ উপমহাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে মানুষের প্রিয় খাবারে পরিণত হয়েছে। তবে তার শিকড় গভীরভাবে জড়িয়ে আছে মোগল রান্নাঘরের সেই দমে রান্না করা সুগন্ধি, সমৃদ্ধ এবং চমকপ্রদ বিরিয়ানির ঐতিহ্যে।