০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিরক্ষা ক্রয় নিয়ে তদন্ত বিস্তৃত করল দক্ষিণ কোরিয়া প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪০) শেক্‌সপিয়ারের নীরব স্ত্রীকে কেন্দ্র করে হ্যামনেট: শোকের গল্পে নতুন ভাষা ইভি আমদানি বাড়ায় মানদণ্ড কঠোর করছে ভিয়েতনাম মুদ্রাস্ফীতি কমলেও সুদহার নিয়ে সতর্ক শ্রীলঙ্কা মরুভূমিতে হঠাৎ বন্যা: ওমানে প্রাণঘাতী বৃষ্টির নতুন বাস্তবতা চীনের বিনিয়োগে ঐতিহাসিক মোড়, তিন দশকের ধারাবাহিকতা ভাঙার মুখে অর্থনীতি ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দিয়ে সেভেন সিস্টার্স আলাদা করে দেব সাংবাদিক আনিস আলমগীরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী মামলা প্রত্যাহারের দাবি সম্পাদক পরিষদের সিনিয়র সাংবাদিক আনিস আলমগীর পাঁচ দিনের রিমান্ডে

দেশে দেশে সমুদ্র বন্দরে চীনের প্রভাব কমাতে আমেরিকার নতুন নীতি

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সামুদ্রিক কৌশল

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বৈশ্বিক বন্দরগুলোতে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব কমাতে এবং কৌশলগত টার্মিনালগুলোকে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। ১৯৭০-এর দশকের পর এটিকে সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ওয়াশিংটনের শঙ্কা, যুদ্ধের পরিস্থিতিতে চীনের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে পড়তে পারে।

মার্কিন বহরের দুর্বলতা

প্রশাসনের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক জাহাজবহর যুদ্ধকালীন সময়ে লজিস্টিক সহায়তা দেওয়ার মতো শক্তিশালী নয়। বিদেশি জাহাজ ও বন্দরের ওপর নির্ভরশীলতা বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাই হোয়াইট হাউস ভাবছে, মার্কিন বা পশ্চিমা বেসরকারি কোম্পানিকে সহায়তা দিয়ে চীনের হাতে থাকা বন্দর শেয়ার কিনে নেওয়া যায় কিনা। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ব্ল্যাকরকের প্রস্তাবিত চুক্তি, যেখানে তারা হংকংয়ের সিকে হাচিসনের ২৩টি দেশে থাকা বন্দর সম্পদ কিনতে চায়।

ইউরোপক্যারিবিয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রে উদ্বেগ

চীন শুধু পানামা নয়, গ্রিস, স্পেন, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলেও বন্দর নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছে। ওয়াশিংটনের মতে, এই নিয়ন্ত্রণ গুপ্তচরবৃত্তি, সামরিক সুবিধা বা বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত করতে ব্যবহৃত হতে পারে।
চীন বলছে, তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনে সহযোগিতা করছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, এই কার্যক্রম জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

গ্রিসের পিরেয়াস বন্দর নিয়ে নজর

এথেন্সের কাছে অবস্থিত পিরেয়াস বন্দর ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার সংযোগের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। চীনের কসকো কোম্পানি বন্দরের ৬৭ শতাংশ শেয়ারের মালিক। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর ইতোমধ্যে কসকোকে চীনা সামরিক সম্পর্কিত কোম্পানির তালিকায় যুক্ত করেছে।
চীনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাল্টা অভিযোগ করেছে, যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছাকৃতভাবে ‘চীনা হুমকি তত্ত্ব’ প্রচার করছে, যাতে মিত্র দেশগুলোকে চাপের মুখে আনা যায়।

ভূমধ্যসাগরে প্রতিযোগিতা

মার্চে যুক্তরাষ্ট্র সাতটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথ পর্যালোচনা শুরু করে, যার মধ্যে জিব্রাল্টার প্রণালিও রয়েছে। স্পেন চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করায় ওয়াশিংটনের উদ্বেগ আরও বেড়েছে। চীনের কসকো বর্তমানে ভ্যালেন্সিয়া ও বিলবাওতে টার্মিনাল পরিচালনা করছে।
এপ্রিল মাসে ট্রাম্প জাহাজ নির্মাণ শিল্প পুনরুজ্জীবিত করার নির্দেশ দেন এবং নতুন মার্কিন রেজিস্ট্রি খোলার উদ্যোগ নেন। এমনকি মার্কিন বন্দরে চীনা পতাকাবাহী জাহাজ ঢুকলে অতিরিক্ত ফি আরোপের পরিকল্পনাও রয়েছে।

ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে চীনা বিনিয়োগ

জামাইকার কিংস্টন টার্মিনালে চীনের বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রকে বিশেষভাবে চিন্তিত করেছে। গভীর পানির অবস্থান ও ভৌগোলিক কারণে এই বন্দর ক্যারিবিয়ানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখানে চায়না মার্চেন্টস ও ফ্রান্সের সিএমএ সিজিএম যৌথভাবে টার্মিনাল পরিচালনা করছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মার্চে কিংস্টন সফরে চীনের কৌশলকে ‘শিকারি ধাঁচের’ বলে উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, সরকারি সাবসিডি পাওয়া চীনা কোম্পানিগুলো দাম কমিয়ে অন্যদের সম্পদ দখল করছে।

অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি

অস্ট্রেলিয়া উত্তরাঞ্চলের কৌশলগত ডারউইন বন্দর চীনা কোম্পানির কাছ থেকে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস ও লং বিচ বন্দরে চীনা বিনিয়োগ নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে।

কংগ্রেসের অবস্থান

মার্কিন কংগ্রেসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের আইনপ্রণেতারা চীনের বৈশ্বিক বন্দর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কংগ্রেসের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি উপকমিটির চেয়ারম্যান কার্লোস গিমেনেজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বসে থাকতে পারে না, যখন কমিউনিস্ট চীন বন্দরগুলোর মাধ্যমে মার্কিন স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করছে।

সারসংক্ষেপ

সব মিলিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন ১৯৭০-এর দশকের পর সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক কৌশল হাতে নিয়েছে। চীন ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের মাধ্যমে বন্দর ও জাহাজশিল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র মিত্রদের সঙ্গে জোট গড়ে চীনের প্রভাব ঠেকাতে এবং নিজেদের সামুদ্রিক শক্তি পুনর্গঠনে কাজ শুরু করেছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রতিরক্ষা ক্রয় নিয়ে তদন্ত বিস্তৃত করল দক্ষিণ কোরিয়া

দেশে দেশে সমুদ্র বন্দরে চীনের প্রভাব কমাতে আমেরিকার নতুন নীতি

১১:১২:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সামুদ্রিক কৌশল

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বৈশ্বিক বন্দরগুলোতে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব কমাতে এবং কৌশলগত টার্মিনালগুলোকে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। ১৯৭০-এর দশকের পর এটিকে সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ওয়াশিংটনের শঙ্কা, যুদ্ধের পরিস্থিতিতে চীনের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে পড়তে পারে।

মার্কিন বহরের দুর্বলতা

প্রশাসনের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক জাহাজবহর যুদ্ধকালীন সময়ে লজিস্টিক সহায়তা দেওয়ার মতো শক্তিশালী নয়। বিদেশি জাহাজ ও বন্দরের ওপর নির্ভরশীলতা বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাই হোয়াইট হাউস ভাবছে, মার্কিন বা পশ্চিমা বেসরকারি কোম্পানিকে সহায়তা দিয়ে চীনের হাতে থাকা বন্দর শেয়ার কিনে নেওয়া যায় কিনা। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ব্ল্যাকরকের প্রস্তাবিত চুক্তি, যেখানে তারা হংকংয়ের সিকে হাচিসনের ২৩টি দেশে থাকা বন্দর সম্পদ কিনতে চায়।

ইউরোপক্যারিবিয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রে উদ্বেগ

চীন শুধু পানামা নয়, গ্রিস, স্পেন, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলেও বন্দর নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছে। ওয়াশিংটনের মতে, এই নিয়ন্ত্রণ গুপ্তচরবৃত্তি, সামরিক সুবিধা বা বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত করতে ব্যবহৃত হতে পারে।
চীন বলছে, তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনে সহযোগিতা করছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, এই কার্যক্রম জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

গ্রিসের পিরেয়াস বন্দর নিয়ে নজর

এথেন্সের কাছে অবস্থিত পিরেয়াস বন্দর ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ার সংযোগের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। চীনের কসকো কোম্পানি বন্দরের ৬৭ শতাংশ শেয়ারের মালিক। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর ইতোমধ্যে কসকোকে চীনা সামরিক সম্পর্কিত কোম্পানির তালিকায় যুক্ত করেছে।
চীনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাল্টা অভিযোগ করেছে, যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছাকৃতভাবে ‘চীনা হুমকি তত্ত্ব’ প্রচার করছে, যাতে মিত্র দেশগুলোকে চাপের মুখে আনা যায়।

ভূমধ্যসাগরে প্রতিযোগিতা

মার্চে যুক্তরাষ্ট্র সাতটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথ পর্যালোচনা শুরু করে, যার মধ্যে জিব্রাল্টার প্রণালিও রয়েছে। স্পেন চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করায় ওয়াশিংটনের উদ্বেগ আরও বেড়েছে। চীনের কসকো বর্তমানে ভ্যালেন্সিয়া ও বিলবাওতে টার্মিনাল পরিচালনা করছে।
এপ্রিল মাসে ট্রাম্প জাহাজ নির্মাণ শিল্প পুনরুজ্জীবিত করার নির্দেশ দেন এবং নতুন মার্কিন রেজিস্ট্রি খোলার উদ্যোগ নেন। এমনকি মার্কিন বন্দরে চীনা পতাকাবাহী জাহাজ ঢুকলে অতিরিক্ত ফি আরোপের পরিকল্পনাও রয়েছে।

ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে চীনা বিনিয়োগ

জামাইকার কিংস্টন টার্মিনালে চীনের বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রকে বিশেষভাবে চিন্তিত করেছে। গভীর পানির অবস্থান ও ভৌগোলিক কারণে এই বন্দর ক্যারিবিয়ানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখানে চায়না মার্চেন্টস ও ফ্রান্সের সিএমএ সিজিএম যৌথভাবে টার্মিনাল পরিচালনা করছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মার্চে কিংস্টন সফরে চীনের কৌশলকে ‘শিকারি ধাঁচের’ বলে উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, সরকারি সাবসিডি পাওয়া চীনা কোম্পানিগুলো দাম কমিয়ে অন্যদের সম্পদ দখল করছে।

অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি

অস্ট্রেলিয়া উত্তরাঞ্চলের কৌশলগত ডারউইন বন্দর চীনা কোম্পানির কাছ থেকে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস ও লং বিচ বন্দরে চীনা বিনিয়োগ নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে।

কংগ্রেসের অবস্থান

মার্কিন কংগ্রেসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের আইনপ্রণেতারা চীনের বৈশ্বিক বন্দর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কংগ্রেসের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি উপকমিটির চেয়ারম্যান কার্লোস গিমেনেজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বসে থাকতে পারে না, যখন কমিউনিস্ট চীন বন্দরগুলোর মাধ্যমে মার্কিন স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করছে।

সারসংক্ষেপ

সব মিলিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন ১৯৭০-এর দশকের পর সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক কৌশল হাতে নিয়েছে। চীন ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের মাধ্যমে বন্দর ও জাহাজশিল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র মিত্রদের সঙ্গে জোট গড়ে চীনের প্রভাব ঠেকাতে এবং নিজেদের সামুদ্রিক শক্তি পুনর্গঠনে কাজ শুরু করেছে।