আদালতের রায়ে ট্রাম্পের অপসারণ প্রচেষ্টা থেমে গেল
মার্কিন আপিল আদালত সোমবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) গভর্নর লিসা কুককে অপসারণের অনুমতি দেয়নি। ১৯১৩ সালে ফেড প্রতিষ্ঠার পর এ ধরনের প্রচেষ্টা এই প্রথম। আদালতের এই সিদ্ধান্ত ফেডের দীর্ঘদিনের স্বাধীনতা বজায় রাখার লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই রায়ের ফলে হোয়াইট হাউসের হাতে কয়েক ঘণ্টার সময় ছিল, যাতে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে কুককে মঙ্গলবার ও বুধবারের ফেড নীতিনির্ধারণী বৈঠকে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা যায়। ওই বৈঠকে সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়া
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তারা রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবে। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র কুশ দেশাই বলেন, “রাষ্ট্রপতি বৈধ কারণেই লিসা কুককে অপসারণ করেছেন। আমরা এ সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করব এবং শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করব।”
নিম্ন আদালতের পূর্ববর্তী রায়
গত ৯ সেপ্টেম্বর জেলা বিচারক জিয়া কব কুককে সাময়িকভাবে অপসারণে বাধা দেন। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, কুক অতীতে মর্টগেজ জালিয়াতি করেছিলেন, যা কুক অস্বীকার করেন। বিচারক বলেন, আইন অনুসারে এই অভিযোগ যথেষ্ট নয়।
ডি.সি. সার্কিট কোর্টে ২-১ ভোটে কুকের পক্ষে রায় আসে। বিচারপতি ব্রাডলি গার্সিয়া ও জে. মিশেল চাইল্ডস (দুজনেই বাইডেনের নিয়োগপ্রাপ্ত) সংখ্যাগরিষ্ঠ মত দেন। ট্রাম্পের নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারপতি গ্রেগরি ক্যাটসাস ভিন্নমত পোষণ করেন।
সাংবিধানিক প্রশ্ন ও ‘ডিউ প্রসেস’
গার্সিয়া তার রায়ে লিখেছেন, কুককে যথাযথ নোটিশ বা জবাব দেওয়ার সুযোগ না দেওয়ায় তার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। আদালতের মতে, কুকের দাবি যথেষ্ট জোরালো, ফলে এই পর্যায়ে ‘ফর কজ’ বা বৈধ কারণের সংজ্ঞায় প্রবেশ করার প্রয়োজন নেই।
ফেডের অবস্থান
ফেড এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তারা দ্রুত সমাধান চান এবং আদালতের যে কোনো রায় মেনে নেবে বলে জানিয়েছে।
সিনেটের ভোট ও নতুন নিয়োগ
এদিকে সোমবার রাতে সিনেট অল্প ব্যবধানে ট্রাম্পের মনোনীত প্রার্থী স্টিফেন মিরানকে ফেড বোর্ডে অনুমোদন দিয়েছে (ভোট ৪৮-৪৭)। তিনি কুকের পাশাপাশি এই সপ্তাহের বৈঠকে অংশ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফেডের স্বাধীনতা বনাম রাজনীতির হস্তক্ষেপ
ফেড প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই কংগ্রেস রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ঠেকাতে সুরক্ষা রেখেছিল। আইন অনুযায়ী গভর্নরকে কেবল “বৈধ কারণে” অপসারণ করা যায়, তবে এর সংজ্ঞা স্পষ্ট নয়। এখন পর্যন্ত কোনো প্রেসিডেন্ট ফেড গভর্নরকে অপসারণ করেননি।
ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি হলো, প্রেসিডেন্টের বিস্তৃত ক্ষমতা রয়েছে এবং আদালতের এতে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ ফেডের স্বাধীন নীতি গ্রহণ প্রক্রিয়াকে হুমকির মুখে ফেলবে।
কুকের মামলা ও তার অভিযোগ
মিশিগান থেকে আসা কুক, যিনি ফেডের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী গভর্নর, আগস্টের শেষ দিকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি দাবি করেন, অভিযোগগুলো তার অর্থনৈতিক নীতির কারণে রাজনৈতিক প্রতিশোধ ছাড়া আর কিছু নয়।
কুকের আইনজীবীরা বলেছেন, বৈঠকের আগে তাকে অপসারণ করা হলে যুক্তরাষ্ট্র ও বৈদেশিক বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে।
সুপ্রিম কোর্টের পূর্ববর্তী অবস্থান
এ বছর সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পকে কিছু স্বতন্ত্র সংস্থার কর্মকর্তাকে অপসারণের অনুমতি দিয়েছিল। তবে মে মাসে দেওয়া এক আদেশে আদালত জানায়, ফেড একটি বিশেষ কাঠামোর অধীন “আংশিকভাবে বেসরকারি” সংস্থা, যা অন্য সংস্থার তুলনায় আলাদা।
ভিন্নমত বিচারকের মন্তব্য
বিচারপতি ক্যাটসাস বলেন, কুককে বহাল রাখা প্রশাসনের জন্য বেশ ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি করে। তার মতে, ফেড বোর্ডের সদস্যরা দক্ষ ও বাজারে আস্থা জাগাতে সক্ষম হওয়া জরুরি।
অভিযোগ ও তদন্ত
ট্রাম্প ও তার এক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, কুক অতীতে তিনটি সম্পত্তির মর্টগেজ আবেদনে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন। তবে নথিপত্র ও কর কর্তৃপক্ষের তথ্যে এসব অভিযোগ দুর্বল প্রমাণিত হচ্ছে।
তবুও ট্রাম্প প্রশাসন কুকের বিরুদ্ধে মর্টগেজ জালিয়াতির অপরাধ তদন্ত শুরু করেছে এবং জর্জিয়া ও মিশিগানে গ্র্যান্ড জুরি তলব জারি করেছে।
এই মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে আরও জটিল আকার নিতে পারে। তবে আদালতের সর্বশেষ রায় স্পষ্ট করে দিয়েছে, ফেডের স্বাধীনতা যুক্তরাষ্ট্রে এখনো গুরুত্বপূর্ণ এক নীতি, এবং সেটি রাজনৈতিক চাপে ভাঙা সহজ নয়।