০১:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
মিয়ানমারের কালোবাজারি যুদ্ধ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করছে ফেড সুদের হার কমাল, আরও কমানোর ইঙ্গিত; নতুন গভর্নর মিরানের ভিন্ন মত এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনা: ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মামলা বোয়িং ও হানিওয়েলের বিরুদ্ধে “ভারতের আরবান কোম্পানির শেয়ার বাজারে অভিষেক: প্রথম দিনেই ৭৪% উল্লম্ফন, বাজারমূল্য ছুঁল ৩ বিলিয়ন ডলার” ভারতের চালের মজুত সর্বকালের সর্বোচ্চ, গমেও চার বছরের রেকর্ড ব্রিটেনের সিদ্ধান্ত: এই সপ্তাহান্তে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি জাপান ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে না যে সাক্ষাৎকারটি নেয়নি মোদির উত্তরসূরি নিয়ে জল্পনা সত্ত্বেও ক্ষমতায় দৃঢ় অবস্থান নেপালের নতুন ক্ষমতার সমীকরণে ভারত-চীনের শঙ্কা

সংস্কৃতি টিকলে আমরাও টিকে থাকব: ঘূর্ণিঝড়ের হুমকির মুখে ক্যারিবীয় দ্বীপ গ্রেনাডা

এক বছর আগে রেকর্ড ভাঙা ঘূর্ণিঝড় বেরিল আঘাত হানার পরও ক্যারিবীয় অঞ্চল এখনও বিপর্যস্ত। তবে গ্রেনাডার একটি দ্বীপে প্রাচীন ঐতিহ্যই জলবায়ু সহনশীলতার মূল শক্তি হয়ে উঠছে।

ভোরের অন্ধকারে রাজধানী সেন্ট জর্জের রাস্তায় জড়ো হয় হাজারো মানুষ। শেকলের ঘর্ষণের শব্দে কাঁপতে থাকে অ্যাসফল্ট, হেলমেটের শিং উঠে যায় আকাশমুখী। শামুকের শিঙের ডাক শোনামাত্র শুরু হয় জুভে সকাল—কার্নিভালের আনুষ্ঠানিক সূচনা, যা এখানে পরিচিত স্পাইসমাস নামে। ভোরের আলো ফুটতেই তেল আর কয়লার কালিতে মাখামাখি মানুষে ভরে যায় রাস্তাঘাট।

এটাই জ্যাব জ্যাব—গ্রেনাডার প্রাচীনতম কার্নিভাল ঐতিহ্য। এর জন্ম মুক্তি, প্রতিরোধ আর বিদ্রোহ থেকে। এখানে শেকল তুলে ধরা হয় স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে। মানুষ সাজে সেই রূপে, যেভাবে একসময় উপনিবেশবাদীরা তাদের অপমান করেছিল। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে অপমানকে শক্তিতে রূপান্তর করা হয়। এর বিশৃঙ্খল চরিত্র আসলে ঔপনিবেশিক শৃঙ্খলার প্রত্যাখ্যান।

আজ একই চেতনায় গ্রেনাডাবাসী লড়ছে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বেরিল আঘাত হেনে গ্রেনাডা ও আশেপাশের দ্বীপগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। গরম সাগরঘেরা এলাকায় এই ধরনের শক্তিশালী ঝড়গুলো আরও আগেভাগে তৈরি হচ্ছে এবং অস্বাভাবিক শক্তি নিয়ে আসছে।

 

ঝড়ের নতুন বাস্তবতা

ক্যারিবীয় আবহাওয়া ও জলবিদ্যা ইনস্টিটিউটের প্রধান ডেভিড এ ফারেল বলেন, বেরিল ছিল নজিরবিহীন। “এটি আটলান্টিকের ইতিহাসে সবচেয়ে আগে জন্ম নেওয়া ক্যাটাগরি-৫ ঝড়।” তার মতে, মৌসুমের শুরুটা এখন আরও আগেভাগে চলে আসছে এবং সময়ও দীর্ঘ হচ্ছে।

প্রবীণ অবকাঠামো, ক্ষয়প্রবণ মাটি, খাড়া পাহাড়ি ভূমি ও নিচু উপকূল মিলিয়ে ঝড়ের প্রভাব আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। গ্রেনাডা ও তার দুই ছোট দ্বীপ কারিয়াকু আর পেটিট মার্টিনিকেতে বেরিল ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে, ফসল নষ্ট করেছে, স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বিপর্যস্ত করেছে।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী টেভিন অ্যান্ড্রুজ বলেন, “ধনী দেশগুলো সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে কিছুই পাওয়া যায়নি।” আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি আটকে আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। ফলে গ্রেনাডার মতো দেশগুলো ঋণ আর বীমার উপর নির্ভর করছে, যা প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি সামলাতে পারে না।

ধ্বংসের পর ঘুরে দাঁড়ানো

কারিয়াকু ও পেটিট মার্টিনিকেতে বেরিল প্রায় সব ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে। অ্যান্ড্রুজ বলেন, “৯৮ শতাংশ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। পরিবারগুলো বাস্তুচ্যুত হয়েছে।” এক বছর পরও মাত্র ৬০ শতাংশ ঘরবাড়ি মেরামত বা পুনর্নির্মাণ হয়েছে।

তিনি জানান, শুধু অর্থনৈতিক নয়, সরবরাহও বড় সমস্যা। গুণগত নির্মাণসামগ্রী পাওয়া কঠিন, আর পুরো ক্যারিবীয় অঞ্চলে একসাথে পুনর্নির্মাণ চলায় খরচ বেড়ে গেছে।

তবে পুরোনো কিছু প্রথা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যেমন—বাড়ির সামনে বাতাস ঠেকাতে বড় গাছ লাগানো, যা একসময় প্রচলিত ছিল। আরেকটি হলো বেসমেন্ট বা নিচতলা ব্যবহার। “অনেকেই বেসমেন্টের কারণে বেঁচে গেছে,” বলেন অ্যান্ড্রুজ।

এখন নতুন ভবনগুলো সরকারি তত্ত্বাবধানে আরও কঠোর নিয়মে তৈরি হচ্ছে। “আমরা আর সরলভাবে ভাবতে পারি না যে এটি একবারের ঘটনা। প্রতি বছর ঝুঁকি আছে। আমাদের শক্তিশালী ও সহনশীল হয়ে নির্মাণ করতে হবে।”

জলবায়ু ন্যায়বিচারের প্রশ্ন

গ্রেনাডার পরিবেশ আইনজীবী রোজানা জন বলেন, বেরিল কেবল আবহাওয়ার ঘটনা নয়, এটি আইনি ও নৈতিক বিষয়ও বটে। একজন গ্রেনাডাবাসীর বার্ষিক গড় কার্বন নিঃসরণ মাত্র ২.৯ টন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের গড় ১৪.৩ টন। ইতিহাস জুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় গ্রেনাডার অবদান প্রায় শূন্য।

“আমরা যে সংকট সৃষ্টি করিনি, তার খেসারত দিচ্ছি,” বলেন জন। “আমরা প্রায় কিছুই নিঃসরণ করি না, অথচ আমাদের ঘরবাড়ি, জীবিকা, ঐতিহ্য ধ্বংস হচ্ছে।”

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক “ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণ তহবিল” এখনও কার্যকরভাবে কাজ শুরু করেনি। সিদ্ধান্ত হয়েছিল ২০১৩ সালে, কিন্তু বাস্তবায়ন ধীর। অর্থ যখন আসে, তা প্রায়শই ঋণ হিসেবে আসে, অনুদান নয়—যা গ্রেনাডার মতো দেশকে আরও ঋণে ফেলে দেয়।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালত ২০২৫ সালের জুলাইয়ে এক পরামর্শমূলক মত দিয়েছে—দেশগুলোর আইনি বাধ্যবাধকতা আছে জলবায়ুর ক্ষতি ঠেকাতে। যদিও এটি বাধ্যতামূলক নয়, তবে এটি জলবায়ু ন্যায়বিচারের দাবিতে আইনি ভিত্তি দিয়েছে।

সংস্কৃতি: বেঁচে থাকার শক্তি

রোজানা জন বলেন, প্রকৃত ন্যায়বিচার মানে হলো পরবর্তী ঝড়ের আগে পুনর্গঠনের সক্ষমতা অর্জন করা, পরে নয়।

কিন্তু গ্রেনাডার প্রতিরোধ শুধু আদালত বা বৈশ্বিক মঞ্চে নয়, বরং সংস্কৃতিতেও বেঁচে আছে। জ্যাব জ্যাব কেবল বিনোদন নয়। জাম্বালাসি গ্রেনাডার সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রধান ইয়ান চার্লস বলেন, “জ্যাব জ্যাব হলো প্রতিরোধ আর বিদ্রোহ। এটি পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সংযোগের শক্তি জাগায়।”

প্রশ্ন করলে, যদি জ্যাব জ্যাবের মুখোমুখি হতো ঘূর্ণিঝড় বেরিল, তারা কী বলত? চার্লস বলেন, “জ্যাব মানে শক্তি, জ্যাব মানে মুক্তি। তারা খারাপকে ভালোতে রূপ দিত।”

সংস্কৃতিই ভবিষ্যৎ

গ্রেনাডা ট্যুরিজম অথরিটির চেয়ারম্যান র‍্যান্ডাল ডল্যান্ড বলেন, “আগামী দশকগুলোতে হয়তো আমাদের সৈকত থাকবে না। কিন্তু সংস্কৃতি থাকবে চিরকাল।”

তার মতে, শুধু পর্যটনের ব্র্যান্ড নয়, টিকে থাকার জন্যও সংস্কৃতি জরুরি। সৈকত একদিন সাগরে হারিয়ে যেতে পারে, কিন্তু কার্নিভালের জ্যাব জ্যাব, কারিয়াকুর ঢাক-ঢোল, মসলার বাজার, খাবারের ঐতিহ্য, মারুন উৎসবগুলো ঝড়েও ধ্বংস হবে না।

“যদি আমাদের সংস্কৃতি টিকে থাকে, তবে আমরাও থাকব,” বলেন ডল্যান্ড।

কার্নিভাল আর জলবায়ু সহনশীলতা শুনতে ভিন্ন মনে হতে পারে, কিন্তু দুটোই একই ঐতিহ্যে শিকড় গেড়ে আছে—প্রতিরোধ, পুনর্গঠন আর টিকে থাকা।

মিয়ানমারের কালোবাজারি যুদ্ধ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করছে

সংস্কৃতি টিকলে আমরাও টিকে থাকব: ঘূর্ণিঝড়ের হুমকির মুখে ক্যারিবীয় দ্বীপ গ্রেনাডা

১১:২৪:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এক বছর আগে রেকর্ড ভাঙা ঘূর্ণিঝড় বেরিল আঘাত হানার পরও ক্যারিবীয় অঞ্চল এখনও বিপর্যস্ত। তবে গ্রেনাডার একটি দ্বীপে প্রাচীন ঐতিহ্যই জলবায়ু সহনশীলতার মূল শক্তি হয়ে উঠছে।

ভোরের অন্ধকারে রাজধানী সেন্ট জর্জের রাস্তায় জড়ো হয় হাজারো মানুষ। শেকলের ঘর্ষণের শব্দে কাঁপতে থাকে অ্যাসফল্ট, হেলমেটের শিং উঠে যায় আকাশমুখী। শামুকের শিঙের ডাক শোনামাত্র শুরু হয় জুভে সকাল—কার্নিভালের আনুষ্ঠানিক সূচনা, যা এখানে পরিচিত স্পাইসমাস নামে। ভোরের আলো ফুটতেই তেল আর কয়লার কালিতে মাখামাখি মানুষে ভরে যায় রাস্তাঘাট।

এটাই জ্যাব জ্যাব—গ্রেনাডার প্রাচীনতম কার্নিভাল ঐতিহ্য। এর জন্ম মুক্তি, প্রতিরোধ আর বিদ্রোহ থেকে। এখানে শেকল তুলে ধরা হয় স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে। মানুষ সাজে সেই রূপে, যেভাবে একসময় উপনিবেশবাদীরা তাদের অপমান করেছিল। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে অপমানকে শক্তিতে রূপান্তর করা হয়। এর বিশৃঙ্খল চরিত্র আসলে ঔপনিবেশিক শৃঙ্খলার প্রত্যাখ্যান।

আজ একই চেতনায় গ্রেনাডাবাসী লড়ছে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বেরিল আঘাত হেনে গ্রেনাডা ও আশেপাশের দ্বীপগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। গরম সাগরঘেরা এলাকায় এই ধরনের শক্তিশালী ঝড়গুলো আরও আগেভাগে তৈরি হচ্ছে এবং অস্বাভাবিক শক্তি নিয়ে আসছে।

 

ঝড়ের নতুন বাস্তবতা

ক্যারিবীয় আবহাওয়া ও জলবিদ্যা ইনস্টিটিউটের প্রধান ডেভিড এ ফারেল বলেন, বেরিল ছিল নজিরবিহীন। “এটি আটলান্টিকের ইতিহাসে সবচেয়ে আগে জন্ম নেওয়া ক্যাটাগরি-৫ ঝড়।” তার মতে, মৌসুমের শুরুটা এখন আরও আগেভাগে চলে আসছে এবং সময়ও দীর্ঘ হচ্ছে।

প্রবীণ অবকাঠামো, ক্ষয়প্রবণ মাটি, খাড়া পাহাড়ি ভূমি ও নিচু উপকূল মিলিয়ে ঝড়ের প্রভাব আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। গ্রেনাডা ও তার দুই ছোট দ্বীপ কারিয়াকু আর পেটিট মার্টিনিকেতে বেরিল ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে, ফসল নষ্ট করেছে, স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বিপর্যস্ত করেছে।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী টেভিন অ্যান্ড্রুজ বলেন, “ধনী দেশগুলো সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে কিছুই পাওয়া যায়নি।” আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি আটকে আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। ফলে গ্রেনাডার মতো দেশগুলো ঋণ আর বীমার উপর নির্ভর করছে, যা প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি সামলাতে পারে না।

ধ্বংসের পর ঘুরে দাঁড়ানো

কারিয়াকু ও পেটিট মার্টিনিকেতে বেরিল প্রায় সব ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে। অ্যান্ড্রুজ বলেন, “৯৮ শতাংশ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। পরিবারগুলো বাস্তুচ্যুত হয়েছে।” এক বছর পরও মাত্র ৬০ শতাংশ ঘরবাড়ি মেরামত বা পুনর্নির্মাণ হয়েছে।

তিনি জানান, শুধু অর্থনৈতিক নয়, সরবরাহও বড় সমস্যা। গুণগত নির্মাণসামগ্রী পাওয়া কঠিন, আর পুরো ক্যারিবীয় অঞ্চলে একসাথে পুনর্নির্মাণ চলায় খরচ বেড়ে গেছে।

তবে পুরোনো কিছু প্রথা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যেমন—বাড়ির সামনে বাতাস ঠেকাতে বড় গাছ লাগানো, যা একসময় প্রচলিত ছিল। আরেকটি হলো বেসমেন্ট বা নিচতলা ব্যবহার। “অনেকেই বেসমেন্টের কারণে বেঁচে গেছে,” বলেন অ্যান্ড্রুজ।

এখন নতুন ভবনগুলো সরকারি তত্ত্বাবধানে আরও কঠোর নিয়মে তৈরি হচ্ছে। “আমরা আর সরলভাবে ভাবতে পারি না যে এটি একবারের ঘটনা। প্রতি বছর ঝুঁকি আছে। আমাদের শক্তিশালী ও সহনশীল হয়ে নির্মাণ করতে হবে।”

জলবায়ু ন্যায়বিচারের প্রশ্ন

গ্রেনাডার পরিবেশ আইনজীবী রোজানা জন বলেন, বেরিল কেবল আবহাওয়ার ঘটনা নয়, এটি আইনি ও নৈতিক বিষয়ও বটে। একজন গ্রেনাডাবাসীর বার্ষিক গড় কার্বন নিঃসরণ মাত্র ২.৯ টন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের গড় ১৪.৩ টন। ইতিহাস জুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় গ্রেনাডার অবদান প্রায় শূন্য।

“আমরা যে সংকট সৃষ্টি করিনি, তার খেসারত দিচ্ছি,” বলেন জন। “আমরা প্রায় কিছুই নিঃসরণ করি না, অথচ আমাদের ঘরবাড়ি, জীবিকা, ঐতিহ্য ধ্বংস হচ্ছে।”

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক “ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণ তহবিল” এখনও কার্যকরভাবে কাজ শুরু করেনি। সিদ্ধান্ত হয়েছিল ২০১৩ সালে, কিন্তু বাস্তবায়ন ধীর। অর্থ যখন আসে, তা প্রায়শই ঋণ হিসেবে আসে, অনুদান নয়—যা গ্রেনাডার মতো দেশকে আরও ঋণে ফেলে দেয়।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালত ২০২৫ সালের জুলাইয়ে এক পরামর্শমূলক মত দিয়েছে—দেশগুলোর আইনি বাধ্যবাধকতা আছে জলবায়ুর ক্ষতি ঠেকাতে। যদিও এটি বাধ্যতামূলক নয়, তবে এটি জলবায়ু ন্যায়বিচারের দাবিতে আইনি ভিত্তি দিয়েছে।

সংস্কৃতি: বেঁচে থাকার শক্তি

রোজানা জন বলেন, প্রকৃত ন্যায়বিচার মানে হলো পরবর্তী ঝড়ের আগে পুনর্গঠনের সক্ষমতা অর্জন করা, পরে নয়।

কিন্তু গ্রেনাডার প্রতিরোধ শুধু আদালত বা বৈশ্বিক মঞ্চে নয়, বরং সংস্কৃতিতেও বেঁচে আছে। জ্যাব জ্যাব কেবল বিনোদন নয়। জাম্বালাসি গ্রেনাডার সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রধান ইয়ান চার্লস বলেন, “জ্যাব জ্যাব হলো প্রতিরোধ আর বিদ্রোহ। এটি পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সংযোগের শক্তি জাগায়।”

প্রশ্ন করলে, যদি জ্যাব জ্যাবের মুখোমুখি হতো ঘূর্ণিঝড় বেরিল, তারা কী বলত? চার্লস বলেন, “জ্যাব মানে শক্তি, জ্যাব মানে মুক্তি। তারা খারাপকে ভালোতে রূপ দিত।”

সংস্কৃতিই ভবিষ্যৎ

গ্রেনাডা ট্যুরিজম অথরিটির চেয়ারম্যান র‍্যান্ডাল ডল্যান্ড বলেন, “আগামী দশকগুলোতে হয়তো আমাদের সৈকত থাকবে না। কিন্তু সংস্কৃতি থাকবে চিরকাল।”

তার মতে, শুধু পর্যটনের ব্র্যান্ড নয়, টিকে থাকার জন্যও সংস্কৃতি জরুরি। সৈকত একদিন সাগরে হারিয়ে যেতে পারে, কিন্তু কার্নিভালের জ্যাব জ্যাব, কারিয়াকুর ঢাক-ঢোল, মসলার বাজার, খাবারের ঐতিহ্য, মারুন উৎসবগুলো ঝড়েও ধ্বংস হবে না।

“যদি আমাদের সংস্কৃতি টিকে থাকে, তবে আমরাও থাকব,” বলেন ডল্যান্ড।

কার্নিভাল আর জলবায়ু সহনশীলতা শুনতে ভিন্ন মনে হতে পারে, কিন্তু দুটোই একই ঐতিহ্যে শিকড় গেড়ে আছে—প্রতিরোধ, পুনর্গঠন আর টিকে থাকা।