অন্তর্বর্তীকালীন নেতৃত্ব ও প্রতিবাদের পটভূমি
গত সপ্তাহে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ক্ষুব্ধ তরুণরা সরকারি ভবনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায়, এমনকি সংসদ ভবনও আগুনে পুড়ে যায়। সরাসরি কারণ ছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কে.পি. শর্মা ওলির সরকারের স্বল্পস্থায়ী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞা। তবে গভীরে রয়েছে দুর্নীতি, বেকারত্ব ও সুযোগের অভাব নিয়ে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ।
ওলির পদত্যাগের পর সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। তিনি নেপালের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি দুর্নীতি দমনের অঙ্গীকার করেন। ভারত ও চীন দ্রুত অভিনন্দন জানালেও রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রতিবেশী দুই পরাশক্তি
ভারত ও চীনের মাঝে অবস্থান করায় নেপাল সবসময়ই কূটনৈতিক প্রতিযোগিতার কেন্দ্র। ভারত নেপালের প্রধান বাণিজ্য ও জ্বালানি যোগানদাতা। উন্মুক্ত সীমান্ত, ভিসামুক্ত চলাচল ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক ভারতের সঙ্গে গভীর বন্ধন তৈরি করেছে। তবে ২০১৫ সালের অবরোধে জ্বালানি ও ওষুধের ঘাটতি নেপালি জনগণের মনে ভারতের প্রতি ক্ষোভ তৈরি করেছে।
অন্যদিকে চীন নেপালকে তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখে। তিব্বত প্রশ্নে নেপালের ভূগোল বেইজিংয়ের জন্য সংবেদনশীল। তাই চীন নেপালে রাস্তা, সুড়ঙ্গ, জলবিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে বড় বিনিয়োগ করেছে। ওলির আমলে প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর ভারতে না গিয়ে চীনে করার ঘটনাও সেই প্রভাবের প্রতিফলন।
তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভ ও প্রত্যাশা
নেপালের নতুন প্রজন্ম দুর্নীতি ও বেকারত্বে ক্লান্ত। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সূচকে দেশটি দীর্ঘদিন ধরেই খারাপ অবস্থানে। যুব বেকারত্ব প্রায় ২০ শতাংশ। তরুণরা মনে করে বর্তমান ব্যবস্থা তাদের বিপক্ষে কাজ করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত ও চীন যদি নেপালকে শুধুই ভূরাজনৈতিক গুটি হিসেবে ব্যবহার করে, তবে তারা ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের আস্থা হারাবে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বদলে কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও প্রযুক্তিখাতে সরাসরি সহযোগিতা করা বেশি কার্যকর হবে।
ভারতের করণীয়
ভারতের জন্য মূল কৌশল হবে আস্থা ফিরিয়ে আনা। জ্বালানি ও খাদ্য সরবরাহের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, যুব প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও শিক্ষাবিনিময় বাড়ানো, এবং তরুণদের প্রত্যাশা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া ভারতের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে।
চীনের করণীয়
চীনের উচিত বড় অবকাঠামো প্রকল্পের বদলে ছোট ও কর্মসংস্থানমুখী উদ্যোগে মনোযোগ দেওয়া। প্রযুক্তি, চিকিৎসা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বৃত্তি ও শিক্ষাসহায়তা প্রদান তরুণদের আস্থা অর্জনে সহায়ক হবে।