০২:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বিমানবন্দরের জন্য নতুন বাহিনী ‘এয়ার গার্ড’ মিয়ানমারের কালোবাজারি যুদ্ধ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করছে ফেড সুদের হার কমাল, আরও কমানোর ইঙ্গিত; নতুন গভর্নর মিরানের ভিন্ন মত এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনা: ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মামলা বোয়িং ও হানিওয়েলের বিরুদ্ধে “ভারতের আরবান কোম্পানির শেয়ার বাজারে অভিষেক: প্রথম দিনেই ৭৪% উল্লম্ফন, বাজারমূল্য ছুঁল ৩ বিলিয়ন ডলার” ভারতের চালের মজুত সর্বকালের সর্বোচ্চ, গমেও চার বছরের রেকর্ড ব্রিটেনের সিদ্ধান্ত: এই সপ্তাহান্তে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি জাপান ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে না যে সাক্ষাৎকারটি নেয়নি মোদির উত্তরসূরি নিয়ে জল্পনা সত্ত্বেও ক্ষমতায় দৃঢ় অবস্থান

মিয়ানমারের কালোবাজারি যুদ্ধ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করছে

মিয়ানমারের সামরিক একনায়কতন্ত্রবিরোধী জনপ্রিয় সশস্ত্র আন্দোলন এখন বড় সংকটে পড়েছে। অস্ত্র ও গুলির মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই ঘাটতি দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিরোধ আন্দোলনের বড় সমস্যা হলেও আগস্টে তা আরও তীব্র হয়। তখন ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি (ইউডব্লিউএসএ) ঘোষণা করে যে তারা আর অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দেবে না মিত্র বাহিনী—মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তাআং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং শান স্টেট প্রোগ্রেস পার্টিকে (এসএসপিপি)। ধারণা করা হয়, চীনের চাপেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে লাভজনক অস্ত্র বাজার

গৃহযুদ্ধ সারা দেশে অস্ত্রের চাহিদা বাড়িয়ে তুলেছে। এর ফলে একটি বিশাল কালোবাজারি অস্ত্র ব্যবসা গড়ে উঠেছে, যা এখন অত্যন্ত লাভজনক।

সামরিকবিরোধী গোষ্ঠীগুলো অস্ত্র সংগ্রহ করছে নানা উৎস থেকে—নিজস্ব উৎপাদন, দখল করা অস্ত্র এবং কালোবাজার থেকে কেনার মাধ্যমে। এতটাই চাহিদা বেড়েছে যে সেনা পরিবারের সদস্যরাও লাভের আশায় গুলি বিক্রি করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন মিয়ানমারের কালোবাজার বিশ্বের অন্যতম বড় ও ব্যয়বহুল। একটি স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের দাম ২ থেকে ৩ কোটি কিয়াত (৪,৫০০ থেকে ৬,৮০০ মার্কিন ডলার), আর একটি ছোট আগ্নেয়াস্ত্রের গুলির দাম প্রায় ১২ হাজার কিয়াত। এই বিশাল চাহিদা ও লাভজনক বাণিজ্য মিয়ানমারকে বিশ্বের অন্যতম বড় অবৈধ অস্ত্র বাজারে পরিণত করেছে, যেখানে দালাল ও চোরাকারবারিরা সুযোগ নিতে ঝুঁকে পড়ছে।

মিয়ানমারের কালোবাজারের সূচনা হয়েছিল ১৯৬২ সালের প্রথম সামরিক অভ্যুত্থানের পর। অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও ভুল নীতির কারণে ঘাটতি তৈরি হয়েছিল, যা কালোবাজারকে জন্ম দেয়। তখন থেকে দুর্নীতির কারণে এটি আরও বিস্তৃত হয়েছে। ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে এই চোরাচালান নেটওয়ার্ক বিস্তৃত আকার নিয়েছে।

দুর্নীতির বিস্তার

মিয়ানমারে দুর্নীতি এতটাই প্রাতিষ্ঠানিক যে তা শুধু সেনাবাহিনীতেই সীমাবদ্ধ নয়। জান্তা-ঘনিষ্ঠ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিএফ), বিভিন্ন মিলিশিয়া এবং কিছু জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনও অস্ত্র চোরাচালান থেকে লাভ করছে। জান্তার দেশজুড়ে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই, তাই তারা এসব বাহিনীর ওপর নির্ভর করে এলাকা দখলে রাখার জন্য। বিনিময়ে এসব গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে কালোবাজারি ব্যবসা চালানোর সুযোগ পাচ্ছে।

চীনের চাপের কারণে অস্ত্র সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় দাম আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। বেশি চাহিদা ও মুনাফা থাকায় নতুন খেলোয়াড়রাও বাজারে ঢুকতে চাইবে।

চীনা অপরাধ চক্রের ভূমিকা

মিয়ানমারের বাজারে প্রায় সবকিছুই আসে চীন থেকে—খাদ্য, সার, খেলনা, জলবন্দুক, এমনকি ড্রোনও। ২০১৮ সাল থেকে চীনা অপরাধ চক্রগুলো সীমান্ত অঞ্চলে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। আগে তারা মূলত মাদক ও আর্থিক জালিয়াতিতে সক্রিয় ছিল। এখন তারা দুর্বল শাসনব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে কার্যক্রম বাড়াচ্ছে।

তাদের ব্যবসায়িক কৌশল খুবই বাস্তববাদী। প্রযুক্তিগত দক্ষতা, বৈশ্বিক লজিস্টিক নেটওয়ার্ক এবং অস্থিতিশীলতাকে কাজে লাগানোর মানসিকতা নিয়ে তারা অস্ত্র ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রস্তুত। তাদের মূলনীতি হলো—“ক্ষুধাকে ভয় করো, মৃত্যুকে নয়”—যা তাদের যেকোনো লাভজনক বাজারে ঢুকে পড়ার মানসিকতা প্রকাশ করে।

চীনের এই একই গোষ্ঠীগুলো, যারা সবচেয়ে বড় মাদক সাম্রাজ্য ও অনলাইন প্রতারণার নেপথ্যে আছে, তারাই শিগগির অস্ত্র ব্যবসায় প্রবেশ করতে পারে।

চীন নিষেধাজ্ঞা দিলেও বিশাল মুনাফার কারণে অস্ত্র চোরাচালান থামবে না। দুর্নীতিগ্রস্ত জান্তা ও তাদের সামরিক কাঠামোই এই কালোবাজারের প্রধান আশ্রয়স্থল।

সরবরাহ বন্ধ করে কি হবে?

অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ হলেও প্রতিরোধ আন্দোলন থেমে থাকবে না। বসন্ত বিপ্লব অস্ত্র ভাণ্ডারের কারণে নয়, বরং রাজনৈতিক হতাশা থেকে জন্ম নিয়েছে—সামরিক একনায়কতন্ত্রবিরোধী এক গণআন্দোলন হিসেবে।

মিয়ানমারের বর্তমান সংকট আসলে রাজনৈতিক। তাই সমাধানও রাজনৈতিক হতে হবে। অস্ত্রের প্রবাহ বন্ধ করেই সমস্যার সমাধান হবে না। দুর্নীতি ও স্বৈরশাসন বজায় থাকা পর্যন্ত কালোবাজারও টিকে থাকবে, আর প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো অস্ত্র সংগ্রহের পথ খুঁজে নেবে।

বিমানবন্দরের জন্য নতুন বাহিনী ‘এয়ার গার্ড’

মিয়ানমারের কালোবাজারি যুদ্ধ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করছে

১২:৪৮:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মিয়ানমারের সামরিক একনায়কতন্ত্রবিরোধী জনপ্রিয় সশস্ত্র আন্দোলন এখন বড় সংকটে পড়েছে। অস্ত্র ও গুলির মারাত্মক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই ঘাটতি দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিরোধ আন্দোলনের বড় সমস্যা হলেও আগস্টে তা আরও তীব্র হয়। তখন ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি (ইউডব্লিউএসএ) ঘোষণা করে যে তারা আর অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দেবে না মিত্র বাহিনী—মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তাআং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং শান স্টেট প্রোগ্রেস পার্টিকে (এসএসপিপি)। ধারণা করা হয়, চীনের চাপেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে লাভজনক অস্ত্র বাজার

গৃহযুদ্ধ সারা দেশে অস্ত্রের চাহিদা বাড়িয়ে তুলেছে। এর ফলে একটি বিশাল কালোবাজারি অস্ত্র ব্যবসা গড়ে উঠেছে, যা এখন অত্যন্ত লাভজনক।

সামরিকবিরোধী গোষ্ঠীগুলো অস্ত্র সংগ্রহ করছে নানা উৎস থেকে—নিজস্ব উৎপাদন, দখল করা অস্ত্র এবং কালোবাজার থেকে কেনার মাধ্যমে। এতটাই চাহিদা বেড়েছে যে সেনা পরিবারের সদস্যরাও লাভের আশায় গুলি বিক্রি করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন মিয়ানমারের কালোবাজার বিশ্বের অন্যতম বড় ও ব্যয়বহুল। একটি স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের দাম ২ থেকে ৩ কোটি কিয়াত (৪,৫০০ থেকে ৬,৮০০ মার্কিন ডলার), আর একটি ছোট আগ্নেয়াস্ত্রের গুলির দাম প্রায় ১২ হাজার কিয়াত। এই বিশাল চাহিদা ও লাভজনক বাণিজ্য মিয়ানমারকে বিশ্বের অন্যতম বড় অবৈধ অস্ত্র বাজারে পরিণত করেছে, যেখানে দালাল ও চোরাকারবারিরা সুযোগ নিতে ঝুঁকে পড়ছে।

মিয়ানমারের কালোবাজারের সূচনা হয়েছিল ১৯৬২ সালের প্রথম সামরিক অভ্যুত্থানের পর। অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও ভুল নীতির কারণে ঘাটতি তৈরি হয়েছিল, যা কালোবাজারকে জন্ম দেয়। তখন থেকে দুর্নীতির কারণে এটি আরও বিস্তৃত হয়েছে। ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে এই চোরাচালান নেটওয়ার্ক বিস্তৃত আকার নিয়েছে।

দুর্নীতির বিস্তার

মিয়ানমারে দুর্নীতি এতটাই প্রাতিষ্ঠানিক যে তা শুধু সেনাবাহিনীতেই সীমাবদ্ধ নয়। জান্তা-ঘনিষ্ঠ সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিএফ), বিভিন্ন মিলিশিয়া এবং কিছু জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনও অস্ত্র চোরাচালান থেকে লাভ করছে। জান্তার দেশজুড়ে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই, তাই তারা এসব বাহিনীর ওপর নির্ভর করে এলাকা দখলে রাখার জন্য। বিনিময়ে এসব গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে কালোবাজারি ব্যবসা চালানোর সুযোগ পাচ্ছে।

চীনের চাপের কারণে অস্ত্র সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় দাম আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। বেশি চাহিদা ও মুনাফা থাকায় নতুন খেলোয়াড়রাও বাজারে ঢুকতে চাইবে।

চীনা অপরাধ চক্রের ভূমিকা

মিয়ানমারের বাজারে প্রায় সবকিছুই আসে চীন থেকে—খাদ্য, সার, খেলনা, জলবন্দুক, এমনকি ড্রোনও। ২০১৮ সাল থেকে চীনা অপরাধ চক্রগুলো সীমান্ত অঞ্চলে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। আগে তারা মূলত মাদক ও আর্থিক জালিয়াতিতে সক্রিয় ছিল। এখন তারা দুর্বল শাসনব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে কার্যক্রম বাড়াচ্ছে।

তাদের ব্যবসায়িক কৌশল খুবই বাস্তববাদী। প্রযুক্তিগত দক্ষতা, বৈশ্বিক লজিস্টিক নেটওয়ার্ক এবং অস্থিতিশীলতাকে কাজে লাগানোর মানসিকতা নিয়ে তারা অস্ত্র ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রস্তুত। তাদের মূলনীতি হলো—“ক্ষুধাকে ভয় করো, মৃত্যুকে নয়”—যা তাদের যেকোনো লাভজনক বাজারে ঢুকে পড়ার মানসিকতা প্রকাশ করে।

চীনের এই একই গোষ্ঠীগুলো, যারা সবচেয়ে বড় মাদক সাম্রাজ্য ও অনলাইন প্রতারণার নেপথ্যে আছে, তারাই শিগগির অস্ত্র ব্যবসায় প্রবেশ করতে পারে।

চীন নিষেধাজ্ঞা দিলেও বিশাল মুনাফার কারণে অস্ত্র চোরাচালান থামবে না। দুর্নীতিগ্রস্ত জান্তা ও তাদের সামরিক কাঠামোই এই কালোবাজারের প্রধান আশ্রয়স্থল।

সরবরাহ বন্ধ করে কি হবে?

অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ হলেও প্রতিরোধ আন্দোলন থেমে থাকবে না। বসন্ত বিপ্লব অস্ত্র ভাণ্ডারের কারণে নয়, বরং রাজনৈতিক হতাশা থেকে জন্ম নিয়েছে—সামরিক একনায়কতন্ত্রবিরোধী এক গণআন্দোলন হিসেবে।

মিয়ানমারের বর্তমান সংকট আসলে রাজনৈতিক। তাই সমাধানও রাজনৈতিক হতে হবে। অস্ত্রের প্রবাহ বন্ধ করেই সমস্যার সমাধান হবে না। দুর্নীতি ও স্বৈরশাসন বজায় থাকা পর্যন্ত কালোবাজারও টিকে থাকবে, আর প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো অস্ত্র সংগ্রহের পথ খুঁজে নেবে।