যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রতিবেদন
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের সব ধরনের কেনাকাটা ও চুক্তি পুরোপুরি খোলামেলা ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করার পদক্ষেপ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে আগের সরকারের সময়কার সব সরাসরি দরকষাকষি ও চলমান আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে।
এই তথ্য উঠে এসেছে ২০২৫ অর্থবছরের কংগ্রেস-নির্ধারিত ফিসক্যাল ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্টে, যা ১৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ আরও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে।
চুক্তি ও নিরীক্ষা প্রক্রিয়া
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরকার আইন ও বিধিমালায় প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের চুক্তি ও লাইসেন্স প্রদানের মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে এবং তা কিছু ক্ষেত্রে অনুসরণও করা হয়েছে। তবে সরকারি কেনাকাটার বিষয়ে সীমিত তথ্যই জনসমক্ষে আনা হয়েছিল।
সরকার পরিবর্তনের কারণে সর্বোচ্চ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান (সুপ্রিম অডিট ইনস্টিটিউশন) পূর্ণাঙ্গ সরকারি হিসাব পর্যালোচনা করতে পারেনি, যদিও কিছু সংক্ষিপ্ত ফলাফল যুক্তিসঙ্গত সময়ে প্রকাশ করা হয়। তবে প্রতিবেদন বলছে, প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সুপারিশ
বাংলাদেশকে আর্থিক স্বচ্ছতা বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে:
- অর্থবছর শেষে দ্রুত প্রতিবেদন প্রকাশ করা।
- বাজেট দলিল আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী তৈরি করা।
- বাজেটে নির্বাহী দপ্তরের ব্যয় আলাদা করে উল্লেখ করা।
- সরকারের রাজস্ব ও ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ চিত্র বাজেটে তুলে ধরা।
- নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে পর্যাপ্ত সম্পদ ও স্বাধীনতা দেওয়া।
- সময়মতো নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করা, যাতে সুপারিশ ও বিশ্লেষণ থাকে।
- প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের চুক্তি ও লাইসেন্স সংক্রান্ত মৌলিক তথ্য প্রকাশ করা।
- সরকারি কেনাকাটার তথ্য প্রকাশ করা।
অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা
প্রতিবেদন বলছে, পর্যালোচনাকালীন সময়ে অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। তারা আগের সরকারের বাজেট প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে এবং আর্থিক স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে বড় সংস্কার শুরু করেছে।
আগের সরকার বাজেট প্রস্তাব ও গৃহীত বাজেট জনসমক্ষে এনেছিল, তবে বছরের শেষে প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। বাজেটে তথ্য মোটামুটি নির্ভরযোগ্য হলেও আন্তর্জাতিক মানে তা তৈরি হয়নি। সরকারি ঋণের তথ্য জনসমক্ষে ছিল এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের আয়ের বিবরণ বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে নির্বাহী দপ্তরের ব্যয় আলাদা করে দেখানো হয়নি এবং পূর্ণাঙ্গ রাজস্ব-ব্যয়ের চিত্রও দেওয়া হয়নি।
ফিসক্যাল ট্রান্সপারেন্সির গুরুত্ব
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেছেন, আর্থিক স্বচ্ছতা কার্যকর সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি বাজারে আস্থা তৈরি করে, বৈশ্বিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখে এবং মার্কিন কোম্পানির জন্য সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করে।
এটি সরকারের দায়বদ্ধতা বাড়ায় এবং জনগণকে বাজেট ও ব্যয়ের বিষয়ে ধারণা দেয়। প্রতিবছর এই ধরনের মূল্যায়ন যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় হচ্ছে কি না, সেটিও নিশ্চিত করে।
বৈশ্বিক চিত্র
২০২৫ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট ১৪০টি দেশ ও সংস্থার মধ্যে ৭১টি ন্যূনতম আর্থিক স্বচ্ছতার মানদণ্ড পূরণ করেছে। অন্যদিকে ৬৯টি দেশ তা পূরণ করতে পারেনি। তবে এদের মধ্যে ২৬টি দেশ ন্যূনতম মান পূরণের পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে।
প্রতিবেদনটি জানায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালে সরকারগুলো বাজেট দলিল, চুক্তি ও লাইসেন্স কতটা প্রকাশ করেছে এবং প্রক্রিয়াগুলো কতটা স্বচ্ছ ছিল, তা মূল্যায়ন করা হয়েছে। একই সঙ্গে যেসব সরকার ন্যূনতম মান পূরণ করেনি, তারা কতটা অগ্রগতি করেছে তাও পর্যালোচনা করা হয়েছে।