০৩:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফিলিস্তিন স্বীকৃতি নিয়ে বিশ্বশক্তির টানাপোড়েন

যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সিদ্ধান্ত

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশ আগামী দিনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ সিদ্ধান্তের কঠোর বিরোধিতা করেছেন। তাঁর দাবি, এটি “হামাসের ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করার” সমান। যুক্তরাষ্ট্রও এ উদ্যোগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

স্বীকৃতি মানে কী?

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র আংশিকভাবে বিদ্যমান।

  • এটি বহু দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে, বিদেশে কূটনৈতিক মিশন রয়েছে এবং অলিম্পিকসহ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
  • তবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্ত নেই, রাজধানী নেই, সেনাবাহিনী নেই।
  • পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের কারণে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পুরো নিয়ন্ত্রণে নেই। গাজা উপত্যকা ভয়াবহ যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে।

তাই স্বীকৃতি মূলত প্রতীকী। এটি শক্তিশালী নৈতিক ও রাজনৈতিক বার্তা দিলেও মাটিতে বাস্তব পরিস্থিতি তেমন বদলাবে না।

ব্রিটেনের ঐতিহাসিক দায়

সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘে বলেন, “দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে ব্রিটেনের বিশেষ দায়বদ্ধতা রয়েছে।” তিনি ১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণা স্মরণ করিয়ে দেন, যেখানে ব্রিটেন ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য জাতীয় আবাস প্রতিষ্ঠার সমর্থন জানিয়েছিল। তবে সেখানে স্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনিদের জাতীয় অধিকারের কথা বলা হয়নি।

১৯২২ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনের অধীনে থাকা ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে আন্তর্জাতিকভাবে এখনো “অসমাপ্ত কাজ” হিসেবে দেখা হয়। ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলেও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান

এই ধারণা অনুযায়ী পশ্চিম তীর ও গাজায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হবে, রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম। কিন্তু আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ইসরায়েলের দখলদারিত্বে পশ্চিম তীরের অনেক এলাকা বসতি স্থাপনের মাধ্যমে পূর্ণ হয়ে গেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ। ফলে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান এখন প্রায় ফাঁপা স্লোগানে পরিণত।

কারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে?

জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রায় ৭৫ শতাংশ ইতিমধ্যেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘে ফিলিস্তিন স্থায়ী পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে, তবে ভোটাধিকার নেই।

চীন ও রাশিয়া ১৯৮৮ সালেই স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স যোগ হলে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের মধ্যে চারজন সমর্থন করবে। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী অবস্থানে থাকবে।

কেন এখন এই পদক্ষেপ?

ব্রিটিশ সরকার আগে বলেছিল, স্বীকৃতি শুধুমাত্র শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আসা উচিত। শুধু প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে তা অর্থহীন। কিন্তু গাজার দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতি ও বিশ্বজনমতের চাপ এখন দেশগুলোকে বাধ্য করেছে।

কানাডা স্বীকৃতি শর্তসাপেক্ষে দিচ্ছে: ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে সংস্কার, ২০২৬ সালে নির্বাচন এবং রাষ্ট্রকে নিরস্ত্র করার শর্তে। ব্রিটেন ঘোষণা দিয়েছে, ইসরায়েল যদি যুদ্ধ থামানো, পশ্চিম তীরে দখল না করা এবং শান্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার মতো পদক্ষেপ না নেয়, তবে তারা জাতিসংঘ অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর বিরোধিতা

মার্কিন প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিরোধী।

  • বর্তমান রাষ্ট্রদূত জুন মাসে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সৃষ্টিকে সমর্থন করে না।
  • পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেপ্টেম্বরের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির চাপে হামাস আরও উৎসাহিত হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের আশঙ্কা, স্বীকৃতি ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর দখল করতে উসকে দেবে এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি আরও কঠিন হয়ে উঠবে।

ফিলিস্তিন স্বীকৃতি নিয়ে বিশ্বশক্তির টানাপোড়েন

১২:১২:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সিদ্ধান্ত

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশ আগামী দিনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ সিদ্ধান্তের কঠোর বিরোধিতা করেছেন। তাঁর দাবি, এটি “হামাসের ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করার” সমান। যুক্তরাষ্ট্রও এ উদ্যোগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

স্বীকৃতি মানে কী?

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র আংশিকভাবে বিদ্যমান।

  • এটি বহু দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে, বিদেশে কূটনৈতিক মিশন রয়েছে এবং অলিম্পিকসহ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
  • তবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্ত নেই, রাজধানী নেই, সেনাবাহিনী নেই।
  • পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের কারণে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পুরো নিয়ন্ত্রণে নেই। গাজা উপত্যকা ভয়াবহ যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে।

তাই স্বীকৃতি মূলত প্রতীকী। এটি শক্তিশালী নৈতিক ও রাজনৈতিক বার্তা দিলেও মাটিতে বাস্তব পরিস্থিতি তেমন বদলাবে না।

ব্রিটেনের ঐতিহাসিক দায়

সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘে বলেন, “দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে ব্রিটেনের বিশেষ দায়বদ্ধতা রয়েছে।” তিনি ১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণা স্মরণ করিয়ে দেন, যেখানে ব্রিটেন ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য জাতীয় আবাস প্রতিষ্ঠার সমর্থন জানিয়েছিল। তবে সেখানে স্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনিদের জাতীয় অধিকারের কথা বলা হয়নি।

১৯২২ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনের অধীনে থাকা ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে আন্তর্জাতিকভাবে এখনো “অসমাপ্ত কাজ” হিসেবে দেখা হয়। ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলেও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান

এই ধারণা অনুযায়ী পশ্চিম তীর ও গাজায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হবে, রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম। কিন্তু আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ইসরায়েলের দখলদারিত্বে পশ্চিম তীরের অনেক এলাকা বসতি স্থাপনের মাধ্যমে পূর্ণ হয়ে গেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ। ফলে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান এখন প্রায় ফাঁপা স্লোগানে পরিণত।

কারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে?

জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রায় ৭৫ শতাংশ ইতিমধ্যেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘে ফিলিস্তিন স্থায়ী পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে, তবে ভোটাধিকার নেই।

চীন ও রাশিয়া ১৯৮৮ সালেই স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স যোগ হলে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের মধ্যে চারজন সমর্থন করবে। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী অবস্থানে থাকবে।

কেন এখন এই পদক্ষেপ?

ব্রিটিশ সরকার আগে বলেছিল, স্বীকৃতি শুধুমাত্র শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আসা উচিত। শুধু প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে তা অর্থহীন। কিন্তু গাজার দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতি ও বিশ্বজনমতের চাপ এখন দেশগুলোকে বাধ্য করেছে।

কানাডা স্বীকৃতি শর্তসাপেক্ষে দিচ্ছে: ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে সংস্কার, ২০২৬ সালে নির্বাচন এবং রাষ্ট্রকে নিরস্ত্র করার শর্তে। ব্রিটেন ঘোষণা দিয়েছে, ইসরায়েল যদি যুদ্ধ থামানো, পশ্চিম তীরে দখল না করা এবং শান্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার মতো পদক্ষেপ না নেয়, তবে তারা জাতিসংঘ অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর বিরোধিতা

মার্কিন প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিরোধী।

  • বর্তমান রাষ্ট্রদূত জুন মাসে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সৃষ্টিকে সমর্থন করে না।
  • পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেপ্টেম্বরের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির চাপে হামাস আরও উৎসাহিত হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের আশঙ্কা, স্বীকৃতি ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর দখল করতে উসকে দেবে এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি আরও কঠিন হয়ে উঠবে।