সারসংক্ষেপ
- ট্রাম্প দাবি করেছেন, শি টিকটক চুক্তিতে সম্মতি দিয়েছেন, যদিও চীনের বক্তব্য তুলনামূলক সতর্ক।
- মার্কিন কংগ্রেস বিক্রি না হলে টিকটক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল।
- তিন মাস পর দুই নেতার প্রথম ফোনালাপ।
- বাণিজ্য আলোচনার পরও যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কে টানাপোড়েন রয়ে গেছে।
টিকটক চুক্তি ও বৈঠকের পরিকল্পনা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং টিকটক নিয়ে অগ্রগতি করেছেন। ছয় সপ্তাহ পর তারা দক্ষিণ কোরিয়ায় সরাসরি বৈঠকে বসবেন। আলোচনায় বাণিজ্য, অবৈধ মাদক ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধও থাকবে।
এটি ছিল দুই সুপারপাওয়ার নেতার মধ্যে তিন মাস পর প্রথম ফোনালাপ। যদিও আলোচনার ফলে টিকটকের ভাগ্য নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো গেছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
দুই নেতা একমত হয়েছেন যে, ৩১ অক্টোবর দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়ংজুতে শুরু হতে যাওয়া এপেক (APEC) ফোরামের ফাঁকে আরও বৈঠক হবে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি আগামী বছর চীন সফর করবেন এবং শি পরে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন।
ট্রাম্পের বক্তব্য: চুক্তি এগোচ্ছে
ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, “তিনি (শি) টিকটক চুক্তিতে অনুমোদন দিয়েছেন। এখন কেবল আনুষ্ঠানিক সই বাকি থাকতে পারে। চুক্তি ভালোভাবেই এগোচ্ছে।”
ট্রাম্পের দাবি, আলোচনায় বাণিজ্য, ফেন্টানিল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। শি নাকি ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি যুদ্ধের সমাপ্তি চান।
কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত ছিল, যদি টিকটকের মার্কিন সম্পদ চীনা মালিক বাইটড্যান্স বিক্রি না করে, তবে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ হবে। এ কারণে চীনের চূড়ান্ত অনুমোদন ট্রাম্পের জন্য বড় বাধা ছিল।
চীনের সরকারি বিবৃতিতে অবশ্য টিকটক নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তির কথা উল্লেখ করা হয়নি। তারা জানিয়েছে, “টিকটক বিষয়ে চীনের অবস্থান পরিষ্কার। সরকার সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ইচ্ছাকে সম্মান করে এবং বৈষম্যহীন আচরণের দাবি জানায়।”
জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ ও অমীমাংসিত প্রশ্ন
ট্রাম্প আপাতত কংগ্রেসের টিকটক আইন প্রয়োগ স্থগিত রেখেছেন। কারণ তিনি আশঙ্কা করছেন, অ্যাপটি বন্ধ হলে কোটি কোটি মার্কিন ব্যবহারকারী ক্ষুব্ধ হবে এবং রাজনৈতিক যোগাযোগও বিঘ্নিত হবে।
চুক্তি নিয়ে এখনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন অমীমাংসিত —
- টিকটকের নতুন মালিকানার কাঠামো কেমন হবে?
- চীন কতটা নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখবে?
- ট্রাম্প কী ধরনের ছাড় চাইবেন?
- কংগ্রেস অনুমোদন দেবে কি না?
ট্রাম্প বলেছেন, “সবই ঠিকঠাক হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র খুব শক্ত নিয়ন্ত্রণ রাখবে।”
তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার হয়তো এই চুক্তি সম্পাদনে মধ্যস্থতার জন্য একটি ফি নেবে, যা কয়েক বিলিয়ন ডলার হতে পারে।
সূত্র জানায়, টিকটকের মার্কিন সম্পদ নতুন মালিকানায় গেলেও অ্যাপটি এখনো বাইটড্যান্সের অ্যালগরিদম ব্যবহার করবে। এ নিয়ে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের উদ্বেগ রয়েছে যে, চীন হয়তো মার্কিন নাগরিকদের ওপর নজরদারি চালাতে পারে।
শুল্কযুদ্ধ ও অর্থনৈতিক চাপ
জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফেরার পর ট্রাম্প ব্যাপক হারে শুল্ক বাড়িয়েছেন, বিশেষ করে চীনের রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতিকে লক্ষ্য করে। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে চীনও শুল্ক বাড়িয়েছে। এপ্রিলেই উভয় দেশের শুল্ক তিন অঙ্কে পৌঁছায়।
মে মাস থেকে সীমিত কয়েকটি চুক্তির মাধ্যমে এই শুল্কযুদ্ধ কিছুটা বিরতি পেয়েছে। তবে ট্রাম্প শুল্ককে নিজের অর্থনৈতিক নীতির প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন—যাতে হারানো উৎপাদনশীল চাকরি ফেরানো, বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং বিদেশি দেশগুলোকে চাপে রাখা যায়।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এমন সর্বজনীন শুল্ক অকার্যকর এবং এতে ভোক্তাদের খরচ বেড়ে যায় ও বিকল্প কমে আসে।
তবুও চীন এখনো যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং সবচেয়ে বড় পণ্য ঘাটতির উৎস। উভয় দেশের অর্থনীতি সম্প্রতি শ্লথ হওয়ার লক্ষণ দেখাচ্ছে।
আঞ্চলিক ও নিরাপত্তা ইস্যু
ফোনালাপ শেষে প্রকাশিত বিবৃতিতে তাইওয়ান প্রসঙ্গের উল্লেখ ছিল না। দক্ষিণ চীন সাগরসহ আঞ্চলিক উত্তেজনা এখনো উদ্বেগের কারণ হয়ে আছে।
আরেকটি মূল ইস্যু হলো, যুক্তরাষ্ট্রের দাবি—চীন যেন ফেন্টানিল সম্পর্কিত রাসায়নিক রপ্তানি দমন করে। ওয়াশিংটন বলছে, এসব মাদকের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল ওভারডোজ মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। তবে বেইজিং অভিযোগ করেছে, যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে বিকৃত করছে।