ভূমিকা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটি পুনর্দখলের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তবে বর্তমান ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, এটি বাস্তবায়িত হলে তা নতুন করে আফগানিস্তানে পুনরায় আক্রমণের মতো দেখাতে পারে। এতে ১০ হাজারেরও বেশি সেনা মোতায়েন, উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং জটিল সরবরাহ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হবে।
ট্রাম্পের বক্তব্য
লন্ডনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, “আমরা ওই ঘাঁটি ফের চাই”। তিনি দাবি করেন, ঘাঁটিটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি চীনের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির স্থানের কাছাকাছি। তাঁর ভাষায়, “চীন যেখানে পারমাণবিক অস্ত্র বানায়, সেখান থেকে ঘাঁটিটি মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে।”
ট্রাম্প পূর্বেও পানামা খাল থেকে গ্রিনল্যান্ড পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চল অধিগ্রহণের কথা বলেছেন। বাগরাম নিয়েও তিনি দীর্ঘদিন ধরে মনোযোগী ছিলেন। তিনি ইঙ্গিত দেন, কোনো ধরনের তালেবান সম্মতি নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র এটি পুনরায় ব্যবহার করতে পারে।
বাগরামের অতীত
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে আল-কায়েদার হামলার পর আফগানিস্তানে দুই দশকের যুদ্ধকালে বাগরাম ছিল মার্কিন বাহিনীর মূল ঘাঁটি। সেখানে ফাস্টফুড রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিকস ও আফগানি কার্পেট বিক্রির দোকান পর্যন্ত ছিল। পাশাপাশি এটি একটি বিশাল কারাগারেরও কেন্দ্র ছিল।
পুনর্দখলের চ্যালেঞ্জ
একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে বাগরাম ঘাঁটি পুনর্দখলের কোনো সক্রিয় পরিকল্পনা নেই। তবে এমন উদ্যোগ নিলে তা হবে বিশাল ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ।
- ঘাঁটি দখল ও ধরে রাখতে দশ হাজারেরও বেশি সেনার প্রয়োজন হবে।
- বিচ্ছিন্ন ও স্থলবেষ্টিত আফগানিস্তানে নিয়মিত সরবরাহ দেওয়া হবে কঠিন।
- বিশাল পরিধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে মার্কিন বাহিনী রকেট হামলার শিকার হতে পারে।
অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, “বাস্তবিকভাবে এটি ঘটানো সম্ভব বলে আমি মনে করি না।”
বিশেষজ্ঞদের মতামত
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, বাগরাম পুনর্দখল করলে তা বিশাল মানবশক্তি, অর্থ ও প্রযুক্তি দাবি করবে। এমনকি তালেবান সম্মতি দিলেও আইএস ও আল-কায়েদার মতো গোষ্ঠীর হামলা ঠেকানো কঠিন হবে। ইরানের দিক থেকেও উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
একজন সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, “চীনের নিকটবর্তী হওয়ার কারণে বিশেষ কোনো সামরিক সুবিধা নেই। বরং ঝুঁকিগুলো সুবিধার চেয়ে বেশি।”
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
২০২১ সালে বাইডেন প্রশাসনের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে, যা নিয়ে ট্রাম্প বারবার সমালোচনা করেছেন। তিনি দাবি করেন, একটি ছোট মার্কিন বাহিনী বাগরামে রাখার পরিকল্পনা ছিল। তবে তাঁর প্রশাসনের সঙ্গেই তালেবানের সঙ্গে করা চুক্তিতে সব আন্তর্জাতিক বাহিনী প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছিল।
বর্তমানে পেন্টাগন আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অগোছালো প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া নিয়ে পর্যালোচনা করছে। ট্রাম্পের দৃষ্টিতে এটি যুক্তরাষ্ট্রের বড় চ্যালেঞ্জ—চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা—থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিয়েছে।
সাম্প্রতিক আলোচনা
গত সপ্তাহান্তে মার্কিন কর্মকর্তারা কাবুলে তালেবান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় ছিলেন ট্রাম্প প্রশাসনের বিশেষ দূত অ্যাডাম বোয়লার ও সাবেক মার্কিন প্রতিনিধি জালমে খলিলজাদ। তারা তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।