চুক্তি স্বাক্ষরের ঘটনা
সৌদি আরব ও পাকিস্তান বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাতে একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এদিন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ রিয়াদে পরস্পরকে আলিঙ্গন করে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরও উপস্থিত ছিলেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে জানানো হয়, “যে কোনো একটি দেশের ওপর আক্রমণকে উভয় দেশের ওপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য করা হবে।”
আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট
চুক্তিটি এমন সময়ে এলো যখন ইসরায়েলের হামলা উপসাগরীয় অঞ্চলের কূটনৈতিক ভারসাম্য নাড়া দিয়েছে। ৯ সেপ্টেম্বর দোহায় হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলি বিমান হামলা আরব বিশ্বকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। কাতার তখন গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছিল।
এছাড়া উপসাগরীয় দেশগুলো ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ওপর আস্থা হারাচ্ছে। ফলে সৌদি আরব দীর্ঘদিনের মিত্র পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করল।
পাকিস্তানের পারমাণবিক শক্তির গুরুত্ব
পাকিস্তান মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র এবং সবচেয়ে বড় সেনাবাহিনীর অধিকারী। দেশটি সবসময় জানিয়েছে, এর পারমাণবিক অস্ত্র কেবল প্রতিবেশী প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে প্রতিহত করার জন্যই তৈরি।
সৌদি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই চুক্তি শুধু সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয়, বরং বহু বছরের আলোচনার ফল। এটি দুই দেশের দীর্ঘস্থায়ী সহযোগিতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিল।
সেনা উপস্থিতি ও অর্থনৈতিক সহায়তা
দীর্ঘদিন ধরেই সৌদি আরবে পাকিস্তানি সেনারা মোতায়েন আছে। বর্তমানে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার সেনা সৌদি বাহিনীকে প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত ও কার্যকরী সহায়তা দিচ্ছে। এর মধ্যে সৌদি স্থল ও বিমান বাহিনীকে সহায়তা দেওয়াও অন্তর্ভুক্ত।
সৌদি আরব পাকিস্তানকে ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে, যা গত ডিসেম্বর মাসে নবায়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করার চেষ্টা চলছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
চুক্তির খবরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানান, তারা ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে অবগত এবং এটি ভারতের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে তা পর্যালোচনা করবে।
সৌদি কর্মকর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, পাকিস্তানের পাশাপাশি ভারতের সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি মজবুত। তারা অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে চান।
ঐতিহাসিক সম্পর্ক ও যুদ্ধ
সৌদি আরব ও পাকিস্তানের সম্পর্ক ধর্মীয় বন্ধন, কৌশলগত স্বার্থ এবং অর্থনৈতিক নির্ভরতার ওপর প্রতিষ্ঠিত।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের বিভক্তির পর পাকিস্তান ও ভারত তিনটি বড় যুদ্ধ লড়েছে। তবে উভয় দেশ পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পর সংঘাত সীমিত পর্যায়েই সীমাবদ্ধ রয়েছে, কারণ এর ঝুঁকি পারমাণবিক পর্যায়ে রূপ নিতে পারে।
এই প্রতিরক্ষা চুক্তি শুধু দুই দেশের সম্পর্কের নতুন মাত্রা যোগ করেনি, বরং মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা রাজনীতিতে নতুন ভারসাম্য তৈরি করতে পারে।