যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের অ্যালগরিদম নিয়ন্ত্রণের পথে
হোয়াইট হাউস ঘোষণা করেছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানিগুলো টিকটকের অ্যালগরিদম নিয়ন্ত্রণ করবে এবং অ্যাপটির যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাত পরিচালকের মধ্যে ছয়জন হবেন মার্কিন নাগরিক। বহুল আলোচিত এই চুক্তি কয়েক দিনের মধ্যেই সই হতে পারে, যদিও বেইজিং এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
জাতীয় নিরাপত্তা ও চাপ
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে টিকটকের কার্যক্রমকে চীনা মূল কোম্পানি বাইটড্যান্স থেকে আলাদা করার চেষ্টা করছে। আগে জানানো হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রে কার্যক্রম বিক্রি না করলে অ্যাপটি বন্ধ হয়ে যাবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানুয়ারি থেকে চারবার নিষেধাজ্ঞা পিছিয়েছেন এবং সর্বশেষ সময়সীমা বাড়িয়ে ডিসেম্বর করেছেন।
ডেটা নিয়ন্ত্রণে ওরাকল
প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ডেটা ও গোপনীয়তার দায়িত্ব নেবে প্রযুক্তি জায়ান্ট ওরাকল। কোম্পানির চেয়ারম্যান ল্যারি এলিসন, যিনি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি। তার ভাষায়, “ডেটা ও অ্যালগরিদম এখন আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, বিস্তারিত বিষয় ইতিমধ্যেই ঠিক হয়ে গেছে, এখন শুধু সই বাকি।”
উল্লেখ্য, ল্যারি এলিসনের ছেলে ডেভিড এলিসন সম্প্রতি প্যারামাউন্ট মিডিয়া অধিগ্রহণ করেছেন, যা সিবিএস নিউজের মালিক। ফলে এলিসন পরিবার এখন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রভাবশালী মিডিয়া পরিবারে পরিণত হয়েছে।
ট্রাম্প–শি ফোনালাপ ও চীনের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং টিকটকের যুক্তরাষ্ট্র শাখা নিয়ে ফোনালাপে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছেন। তবে চীন এখনো তা নিশ্চিত করেনি। ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশালে লিখেছেন, আলোচনাটি ছিল “ফলপ্রসূ” এবং তিনি শির সমর্থনের জন্য “কৃতজ্ঞ”।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, সরকার কোম্পানির ইচ্ছাকে সম্মান করে এবং বাজারের নিয়ম অনুযায়ী সমাধানকে স্বাগত জানায়, তবে সমাধান অবশ্যই চীনের আইন অনুযায়ী হতে হবে। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, শি আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে।
মূল বিতর্ক: অ্যালগরিদমের মালিকানা
চুক্তির সবচেয়ে বড় বাধা হলো শক্তিশালী অ্যালগরিদমের মালিকানা, যা যুক্তরাষ্ট্রের ১৭ কোটি ব্যবহারকারীর কাছে কনটেন্ট পৌঁছে দেয়। যুক্তরাজ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হলে তিনি পরিষ্কার করে জানাননি, যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন অ্যালগরিদম বানাতে হবে কিনা, নাকি বর্তমানটি ব্যবহার করা যাবে।
ট্রাম্পের অবস্থান পরিবর্তন
প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প টিকটক নিষিদ্ধের পক্ষে ছিলেন। তবে ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারে তরুণ ভোটারদের আকর্ষণ করতে তিনি প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করেন এবং তখন থেকেই অবস্থান পরিবর্তন করেন।
২০২৪ সালের শুরুতে মার্কিন কংগ্রেস একটি আইন পাশ করে, যেখানে বলা হয়, বাইটড্যান্সকে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম বিক্রি করতে হবে, নইলে অ্যাপটি নিষিদ্ধ হবে। সুপ্রিম কোর্টও এই আইন বহাল রাখে। তখন টিকটক সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, পরে নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করা হয়।
নিরাপত্তা উদ্বেগ
মার্কিন বিচার বিভাগ আগেও জানিয়েছিল, টিকটকের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীদের তথ্য চীনের হাতে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যা তারা “অত্যন্ত গভীর ও ব্যাপক জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি” বলে উল্লেখ করেছিল।