করছাড়ে স্বস্তি
ভারতে লাখো মানুষের দৈনন্দিন জীবনে কিছুটা স্বস্তি আনতে যাচ্ছে সরকার। সোমবার থেকে দুধ, পাউরুটি, জীবন ও স্বাস্থ্য বীমা এবং জীবনরক্ষাকারী ওষুধে আর কোনো জিএসটি (পণ্য ও পরিষেবা কর) দিতে হবে না। ছোট গাড়ি, টেলিভিশন ও এয়ার কন্ডিশনারে করহার ২৮% থেকে নেমে হবে ১৮%। চুলের তেল, সাবান, শ্যাম্পুর মতো সাধারণ পণ্যে করহার নেমে আসবে ১২% বা ১৮% থেকে ৫%-এ।
এটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষিত জিএসটি কাঠামোর বড় সংস্কারের অংশ, যা ট্যাক্স ব্যবস্থাকে সহজ করবে এবং ভোক্তা খরচ বাড়াবে। দেশের জিডিপির অর্ধেকের বেশি আসে ভোগব্যয় থেকে, তাই এর বড় প্রভাব পড়ার আশা করা হচ্ছে।
উৎসবের মৌসুমে বাড়তি প্রভাব
ভারতে চার মাসব্যাপী উৎসব মৌসুম শুরু হয়েছে। এ সময় মানুষ সাধারণত নতুন গাড়ি, পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী কেনে। একই সময়ে ভোক্তা পণ্যের কোম্পানিগুলো তাদের বার্ষিক বিক্রির বড় অংশ নিশ্চিত করে। তাই করছাড় ভোক্তাদের হাতে বাড়তি টাকা দেবে, যা অভ্যন্তরীণ বাজারকে চাঙ্গা করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভারতের ওপর ৫০% শুল্ক বৃদ্ধির চাপকেও এ স্বস্তি আংশিকভাবে সামাল দিতে পারে।
শেয়ারবাজার ও গাড়ি শিল্পে প্রভাব
আগস্টে করছাড়ের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই গাড়ি কোম্পানির শেয়ারের দাম ৬% থেকে ১৭% পর্যন্ত বেড়েছে। ডিলারশিপগুলোতে আগ্রহ বাড়ছে, যদিও মজুদ পণ্য এখনো বিক্রি হয়নি।
মুম্বাইয়ের হিরো মোটোকর্প শোরুমে বিক্রেতারা বলছেন, বিক্রি গত বছরের তুলনায় আগামী দুই মাসে ৩০-৪০% বাড়তে পারে। হিরো ইন্ডিয়ার প্রধান বাণিজ্য কর্মকর্তা অশুতোষ বর্মা জানান, প্রথমবার মোটরসাইকেল কিনতে আগ্রহীদের খরচ কমেছে, বিশেষ করে সস্তা মডেলগুলোতে।
সফটওয়্যার ডেভেলপার বিশাল পাওয়ার বলেন, উৎসবের ডিসকাউন্ট আর করছাড় এক সঙ্গে মিলে এখনই কেনার সেরা সময়। তিনি দশেরা উৎসবে একটি নতুন বাইক কেনার পরিকল্পনা করছেন।
ভোক্তা পণ্য কোম্পানির প্রস্তুতি
গদরেজ গ্রুপের সব্যসাচী গুপ্ত জানান, করছাড় ও ভালো ফসল মিলিয়ে এয়ার কন্ডিশনারের মতো পণ্যের বাজার বড় শহরের বাইরে পর্যন্ত ছড়াতে পারে। তবে কোম্পানিগুলোকে দ্রুত নতুন দামে লেবেল ছাপাতে হচ্ছে এবং চাহিদার অনিশ্চয়তার কারণে উৎপাদন সামঞ্জস্য করতে হচ্ছে।
অনেক ছোট ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতার কাছে এখনো খবর পৌঁছায়নি। মুম্বাইয়ের ক্রফোর্ড মার্কেটে অনেকেই পরিবর্তন সম্পর্কে জানেন না বা বিভ্রান্ত। কেউ কেউ আগের দামে কেনা পণ্যের কর কীভাবে মেটাবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না।
বিয়ের পোশাকে অস্বস্তি
পোশাকের ক্ষেত্রে মিশ্র প্রভাব পড়ছে। ২৯ ডলারের (প্রায় ২,২০০ টাকা) কম মূল্যের পোশাকে জিএসটি ৫% করা হলেও তার চেয়ে বেশি দামের পোশাকে কর বেড়ে হয়েছে ১৮%। বিয়ের পোশাক সাধারণত এই সীমার ওপরে থাকে। ফলে পুরো সরবরাহ শৃঙ্খলে কারিগর, ডিজাইনার ও খুচরা বিক্রেতাদের ওপর চাপ বাড়বে।
ক্রফোর্ড মার্কেটের এক দোকানদার নরেশ জি বলেন, “ভারতীয়রা বিয়ের পোশাকে অনেক খরচ করে। মৌসুম শুরু হতে যাচ্ছে, কিন্তু বাড়তি কর উজ্জ্বলতা কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে।”
সামগ্রিক চিত্র
রেটিং সংস্থা ক্রিসিলের হিসেবে, করছাড় গড় ভোক্তার মাসিক ব্যয়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশে প্রভাব ফেলবে এবং মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াবে। তবে কোম্পানিগুলো কতটা ছাড় ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেয় তার ওপরই প্রভাব নির্ভর করবে।
সরকার অনুমান করছে, করছাড়ে এ বছর প্রায় ৫.৪ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব কমতে পারে। তবে স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ও সংস্থা মুডিস-এর ধারণা, ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হবে এবং আগামী বছরগুলোতে সরকারি বাজেটে চাপ বাড়বে।
ফেডারেল কর রাজস্ব গত চার মাসে প্রায় স্থবির, অথচ ব্যয় বেড়েছে ২০%-এর বেশি। তাই বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের অবকাঠামো খাতে বড় বিনিয়োগে কাটছাঁট করার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
সামগ্রিকভাবে জিএসটি করছাড় ভোক্তা ও বাজারকে স্বস্তি দেবে এবং উৎসব মৌসুমে খরচ বাড়াবে। তবে রাজস্ব ঘাটতি মোকাবিলা করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।