১০:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি জাতিগোষ্ঠীর দীর্ঘ পথচলা

প্রাচীন উৎপত্তি ও ভৌগোলিক শিকড়

চাকমা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান জাতিগোষ্ঠী। কিন্তু তারা আদিতে এ অঞ্চলের অধিবাসী ছিল না। বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্র থেকে জানা যায়, চাকমাদের উৎপত্তি মূলত উত্তর-পূর্ব ভারতের আরাকান রাজ্য, ত্রিপুরা এবং তিব্বত-বর্মা সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে। অনেক গবেষক মনে করেন, তাদের প্রাচীন ইতিহাস বৌদ্ধধর্ম প্রসারের সঙ্গেও যুক্ত।

প্রাচীন আরাকান রাজ্যে চাকমারা একটি শক্তিশালী সম্প্রদায় ছিল। আরাকান রাজ্যের রাজধানী ম্রাউক-উ (বর্তমানে ম্রাউক ইউ নামে পরিচিত) শহরে তারা বাণিজ্য ও কৃষির সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, আরাকানের শাসকদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব এবং বহিরাগত আক্রমণের ফলে তারা ধীরে ধীরে নিজস্ব অঞ্চল ছেড়ে অন্যত্র বসতি গড়তে শুরু করে।

আরাকান থেকে চট্টগ্রাম পাহাড়ে আগমন

প্রথম দফার স্থানান্তর

চাকমাদের চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকায় আসার ইতিহাস ১৫শ শতকের শেষ ভাগ থেকে শুরু হয়। মিং রাজবংশ ও আরাকান রাজ্যের সংঘর্ষে যখন সীমান্তবর্তী জনগোষ্ঠী বিপর্যস্ত হয়, তখন চাকমাদের একটি অংশ পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে সরে আসে।

দ্বিতীয় দফার স্থানান্তর

১৬শ শতক থেকে ১৭শ শতকে আরাকান রাজ্যে মুসলিম আরব বণিক ও বাঙালি জলদস্যুদের সঙ্গে সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করে। এই সময় অনেক চাকমা দলবদ্ধভাবে দক্ষিণ-পূর্ব চট্টগ্রাম পাহাড়ের দিকে আসে এবং নদী ও ঝরনানির্ভর এলাকায় বসতি গড়ে তোলে।

তৃতীয় দফার স্থানান্তর

১৭শ শতকের শেষ দিকে মোগল সাম্রাজ্য যখন চট্টগ্রাম দখল করে (১৬৬৬ সালে শায়েস্তা খাঁর অভিযান), তখন পাহাড়ি অঞ্চলে নতুন ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি হয়। এই সময় চাকমারা ধীরে ধীরে রাঙামাটি, কাপ্তাই, লংগদু, প্রভৃতি অঞ্চলে বিস্তৃতভাবে বসতি স্থাপন করে।

চাকমা রাজের ঐতিহাসিক নিদর্শন রাঙ্গুনিয়ার রাজবাড়ী

চাকমা রাজবংশ ও শাসকরা

চাকমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন ধীরে ধীরে একটি রাজবংশে রূপ নেয়। ইতিহাসে জানা যায়, চাকমাদের প্রথম দিকের শাসকদের মধ্যে রাজা সুলতান ঘূর্ণ খ্যাতনামা ছিলেন। তার নেতৃত্বে চাকমারা নিজেদের শাসন কাঠামো গড়ে তোলে।

উল্লেখযোগ্য চাকমা রাজারা

  • • রাজা কালিন্দী রাণী (১৮৪৪–১৮৭৩) : তিনি ছিলেন একজন নারী শাসক, যিনি চাকমাদের রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করেন।
  • • রাজা হরিশ চন্দ্র রায় (১৭৭৭–১৮১৫) : ব্রিটিশদের সঙ্গে তিনি কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।
  • • রাজা ধীরেন্দ্র লাল রায় চৌধুরী (১৯৩৫–১৯৭১) : পাকিস্তান আমলে চাকমাদের স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
  • • রাজা দেবাশীষ রায় (বর্তমান) : বর্তমানে চাকমা সার্কেলের প্রতীকী প্রধান হিসেবে আছেন।

চাকমা বিদ্রোহ হচ্ছে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদিদের বিরুদ্ধে চাকমা জাতির অভ্যুত্থান - ফুলকিবাজ

মোগল ও ব্রিটিশদের সঙ্গে সম্পর্ক

চাকমারা মোগল শাসকদের সঙ্গে প্রথমে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। মোগলরা তাদের কাছ থেকে খাজনা আদায়ের চেষ্টা করলে চাকমারা বিদ্রোহ করে। তবে ১৮শ শতকে এসে চাকমা রাজারা মোগলদের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছায় এবং খাজনা প্রদানের বিনিময়ে তাদের স্বাধীনতা বজায় রাখে।

ব্রিটিশ শাসনামলে চাকমারা এক নতুন প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যে আসে। ১৭৬০ সালে ব্রিটিশরা চট্টগ্রাম দখল করার পর তারা চাকমাদের সঙ্গে একাধিক চুক্তি করে। ব্রিটিশরা চাকমা রাজাদের স্বীকৃতি দিলেও পাহাড়ি এলাকায় প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। ১৯০০ সালের “চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্টস রেগুলেশন” ছিল এই অঞ্চলের শাসনব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

সমাজ ও সংস্কৃতি

ভাষা

চাকমা ভাষা ইন্দো-আর্য পরিবারের অন্তর্গত। এটি সংস্কৃত ও পালি ভাষার প্রভাব বহন করে। চাকমাদের নিজস্ব লিপিও রয়েছে, যা ‘অক্ষরলিপি’ নামে পরিচিত।

ধর্ম

চাকমারা মূলত বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। তারা থেরবাদ বৌদ্ধধর্ম অনুসরণ করে, যা আরাকান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।

জুম চাষ

অর্থনীতি

ঝুমচাষ ছিল তাদের প্রধান জীবিকা। পাহাড় কেটে ফসল উৎপাদন, বাঁশ-কাঠের ব্যবহার এবং বনজ সম্পদের ওপর তাদের অর্থনীতি গড়ে ওঠে।

পোশাক ও খাদ্য

চাকমা নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক হলো “পিনন” ও “হাদি”। পুরুষরা সাধারণত লুঙ্গি ও গামছা ব্যবহার করে। তাদের খাদ্যাভ্যাসে চাল, মাছ, শাকসবজি, বাঁশকোরল ও ঝাল-মসলা বিশেষ ভূমিকা রাখে।

রাজনৈতিক সংগ্রাম ও আধুনিক ইতিহাস

পাকিস্তান আমলে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ (১৯৬০) চাকমাদের জীবনে বড় বিপর্যয় আনে। প্রায় ১৮ হাজার পরিবার তাদের ভূমি হারিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়।

গত ৬০ বছরেও এমন শঙ্কায় পড়েনি কাপ্তাই হ্রদ, দুশ্চি...

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও চাকমারা নিজেদের রাজনৈতিক অধিকার ও ভূমি রক্ষার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। শান্তিবাহিনী এবং জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)-এর আন্দোলন এরই অংশ ছিল। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তি চাকমা এবং অন্যান্য পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য একটি নতুন অধ্যায় তৈরি করে।

চাকমা জনগোষ্ঠীর ইতিহাস কেবল একটি জাতিগোষ্ঠীর স্থানান্তরের গল্প নয়। এটি রাজনৈতিক সংগ্রাম, সাংস্কৃতিক অভিযোজন ও টিকে থাকার কাহিনি। আরাকান থেকে চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকায় তাদের আগমন একদিকে যেমন রাজনৈতিক অস্থিরতার ফল, অন্যদিকে এটি ছিল নতুন পরিবেশে অভিযোজিত হয়ে নিজেদের পরিচয় ধরে রাখার এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া।

আজকের দিনে চাকমারা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের এক অপরিহার্য অংশ। তাদের ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক সংগ্রাম শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের নয়, বরং সমগ্র বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

সূর্যালোকের সুফল: ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি ছাড়িয়ে স্বাস্থ্য উপকারিতা কি বেশি?

পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি জাতিগোষ্ঠীর দীর্ঘ পথচলা

০৭:৩৪:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রাচীন উৎপত্তি ও ভৌগোলিক শিকড়

চাকমা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান জাতিগোষ্ঠী। কিন্তু তারা আদিতে এ অঞ্চলের অধিবাসী ছিল না। বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্র থেকে জানা যায়, চাকমাদের উৎপত্তি মূলত উত্তর-পূর্ব ভারতের আরাকান রাজ্য, ত্রিপুরা এবং তিব্বত-বর্মা সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে। অনেক গবেষক মনে করেন, তাদের প্রাচীন ইতিহাস বৌদ্ধধর্ম প্রসারের সঙ্গেও যুক্ত।

প্রাচীন আরাকান রাজ্যে চাকমারা একটি শক্তিশালী সম্প্রদায় ছিল। আরাকান রাজ্যের রাজধানী ম্রাউক-উ (বর্তমানে ম্রাউক ইউ নামে পরিচিত) শহরে তারা বাণিজ্য ও কৃষির সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, আরাকানের শাসকদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব এবং বহিরাগত আক্রমণের ফলে তারা ধীরে ধীরে নিজস্ব অঞ্চল ছেড়ে অন্যত্র বসতি গড়তে শুরু করে।

আরাকান থেকে চট্টগ্রাম পাহাড়ে আগমন

প্রথম দফার স্থানান্তর

চাকমাদের চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকায় আসার ইতিহাস ১৫শ শতকের শেষ ভাগ থেকে শুরু হয়। মিং রাজবংশ ও আরাকান রাজ্যের সংঘর্ষে যখন সীমান্তবর্তী জনগোষ্ঠী বিপর্যস্ত হয়, তখন চাকমাদের একটি অংশ পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে সরে আসে।

দ্বিতীয় দফার স্থানান্তর

১৬শ শতক থেকে ১৭শ শতকে আরাকান রাজ্যে মুসলিম আরব বণিক ও বাঙালি জলদস্যুদের সঙ্গে সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করে। এই সময় অনেক চাকমা দলবদ্ধভাবে দক্ষিণ-পূর্ব চট্টগ্রাম পাহাড়ের দিকে আসে এবং নদী ও ঝরনানির্ভর এলাকায় বসতি গড়ে তোলে।

তৃতীয় দফার স্থানান্তর

১৭শ শতকের শেষ দিকে মোগল সাম্রাজ্য যখন চট্টগ্রাম দখল করে (১৬৬৬ সালে শায়েস্তা খাঁর অভিযান), তখন পাহাড়ি অঞ্চলে নতুন ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি হয়। এই সময় চাকমারা ধীরে ধীরে রাঙামাটি, কাপ্তাই, লংগদু, প্রভৃতি অঞ্চলে বিস্তৃতভাবে বসতি স্থাপন করে।

চাকমা রাজের ঐতিহাসিক নিদর্শন রাঙ্গুনিয়ার রাজবাড়ী

চাকমা রাজবংশ ও শাসকরা

চাকমাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন ধীরে ধীরে একটি রাজবংশে রূপ নেয়। ইতিহাসে জানা যায়, চাকমাদের প্রথম দিকের শাসকদের মধ্যে রাজা সুলতান ঘূর্ণ খ্যাতনামা ছিলেন। তার নেতৃত্বে চাকমারা নিজেদের শাসন কাঠামো গড়ে তোলে।

উল্লেখযোগ্য চাকমা রাজারা

  • • রাজা কালিন্দী রাণী (১৮৪৪–১৮৭৩) : তিনি ছিলেন একজন নারী শাসক, যিনি চাকমাদের রাজনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করেন।
  • • রাজা হরিশ চন্দ্র রায় (১৭৭৭–১৮১৫) : ব্রিটিশদের সঙ্গে তিনি কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।
  • • রাজা ধীরেন্দ্র লাল রায় চৌধুরী (১৯৩৫–১৯৭১) : পাকিস্তান আমলে চাকমাদের স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
  • • রাজা দেবাশীষ রায় (বর্তমান) : বর্তমানে চাকমা সার্কেলের প্রতীকী প্রধান হিসেবে আছেন।

চাকমা বিদ্রোহ হচ্ছে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদিদের বিরুদ্ধে চাকমা জাতির অভ্যুত্থান - ফুলকিবাজ

মোগল ও ব্রিটিশদের সঙ্গে সম্পর্ক

চাকমারা মোগল শাসকদের সঙ্গে প্রথমে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। মোগলরা তাদের কাছ থেকে খাজনা আদায়ের চেষ্টা করলে চাকমারা বিদ্রোহ করে। তবে ১৮শ শতকে এসে চাকমা রাজারা মোগলদের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছায় এবং খাজনা প্রদানের বিনিময়ে তাদের স্বাধীনতা বজায় রাখে।

ব্রিটিশ শাসনামলে চাকমারা এক নতুন প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যে আসে। ১৭৬০ সালে ব্রিটিশরা চট্টগ্রাম দখল করার পর তারা চাকমাদের সঙ্গে একাধিক চুক্তি করে। ব্রিটিশরা চাকমা রাজাদের স্বীকৃতি দিলেও পাহাড়ি এলাকায় প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। ১৯০০ সালের “চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্টস রেগুলেশন” ছিল এই অঞ্চলের শাসনব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দলিল।

সমাজ ও সংস্কৃতি

ভাষা

চাকমা ভাষা ইন্দো-আর্য পরিবারের অন্তর্গত। এটি সংস্কৃত ও পালি ভাষার প্রভাব বহন করে। চাকমাদের নিজস্ব লিপিও রয়েছে, যা ‘অক্ষরলিপি’ নামে পরিচিত।

ধর্ম

চাকমারা মূলত বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। তারা থেরবাদ বৌদ্ধধর্ম অনুসরণ করে, যা আরাকান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।

জুম চাষ

অর্থনীতি

ঝুমচাষ ছিল তাদের প্রধান জীবিকা। পাহাড় কেটে ফসল উৎপাদন, বাঁশ-কাঠের ব্যবহার এবং বনজ সম্পদের ওপর তাদের অর্থনীতি গড়ে ওঠে।

পোশাক ও খাদ্য

চাকমা নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক হলো “পিনন” ও “হাদি”। পুরুষরা সাধারণত লুঙ্গি ও গামছা ব্যবহার করে। তাদের খাদ্যাভ্যাসে চাল, মাছ, শাকসবজি, বাঁশকোরল ও ঝাল-মসলা বিশেষ ভূমিকা রাখে।

রাজনৈতিক সংগ্রাম ও আধুনিক ইতিহাস

পাকিস্তান আমলে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ (১৯৬০) চাকমাদের জীবনে বড় বিপর্যয় আনে। প্রায় ১৮ হাজার পরিবার তাদের ভূমি হারিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়।

গত ৬০ বছরেও এমন শঙ্কায় পড়েনি কাপ্তাই হ্রদ, দুশ্চি...

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও চাকমারা নিজেদের রাজনৈতিক অধিকার ও ভূমি রক্ষার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। শান্তিবাহিনী এবং জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)-এর আন্দোলন এরই অংশ ছিল। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তি চাকমা এবং অন্যান্য পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য একটি নতুন অধ্যায় তৈরি করে।

চাকমা জনগোষ্ঠীর ইতিহাস কেবল একটি জাতিগোষ্ঠীর স্থানান্তরের গল্প নয়। এটি রাজনৈতিক সংগ্রাম, সাংস্কৃতিক অভিযোজন ও টিকে থাকার কাহিনি। আরাকান থেকে চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকায় তাদের আগমন একদিকে যেমন রাজনৈতিক অস্থিরতার ফল, অন্যদিকে এটি ছিল নতুন পরিবেশে অভিযোজিত হয়ে নিজেদের পরিচয় ধরে রাখার এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া।

আজকের দিনে চাকমারা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের এক অপরিহার্য অংশ। তাদের ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক সংগ্রাম শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের নয়, বরং সমগ্র বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।