বিমানবন্দরে ডিম নিক্ষেপ: তাৎক্ষণিক ঘটনা, দীর্ঘদিনের ক্ষোভ
নিউইয়র্কের জন এফ. কেনেডি বিমানবন্দরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেনের ওপর আওয়ামী লীগের কর্মীদের ডিম নিক্ষেপ সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলোর একটি। কিন্তু এ আক্রমণ কেবল বিমানবন্দরের উত্তেজনাই নয়—এটি আসলে এক বছরের বেশি সময় ধরে জমে ওঠা রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
আখতার হোসেনের সঙ্গে ছিলেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা। তাদের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভকারীরা গালিগালাজ ও স্লোগান দেন।
ছাত্রসংগঠনের কর্মকাণ্ড ও বিতর্ক
গত এক বছরে আখতার ও জারার নেতৃত্বাধীন ছাত্রসংগঠনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। প্রবাসী আওয়ামী লীগের নেতারা বারবার উল্লেখ করেছেন—
- তাদের সংগঠন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে,
- ১৯৭১ সালের ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা চালিয়েছে,
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ও স্মৃতি ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে।
এইসব কর্মকাণ্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ জমতে থাকে। নিউইয়র্কে এই ক্ষোভ প্রকাশ পেল সরাসরি প্রতিবাদ ও ডিম নিক্ষেপের মাধ্যমে।
নির্যাতনের অভিযোগ ও জনঅসন্তোষ
অভিযোগ আছে, ছাত্রসংগঠনের নির্দেশে দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিরোধী দল ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন ছিল তাদের কৌশল। এই অভিজ্ঞতা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে বিশেষভাবে প্রতিফলিত হয়, যারা দেশে থাকা পরিবারের কষ্টের খবর নিয়মিত পেয়ে আসছেন।
ফলে, বিদেশের মাটিতেও তাদের প্রতি একই ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে।
নিউইয়র্কের প্রেক্ষাপট
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের আগমনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সকাল থেকেই বিমানবন্দরে অবস্থান নেয়। তারা “ইউনুস বিরোধী” স্লোগান দেয় এবং আখতার-জারাকে লক্ষ্য করে প্রতিবাদ করে।
অন্যদিকে, বিএনপি ও জামায়াতের স্থানীয় নেতাকর্মীরা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও হুমায়ন কবিরকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত হন। ফলে বিমানবন্দরে দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থান পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।
রাজনৈতিক তাৎপর্য
এই ঘটনার তাৎপর্য কেবল একটি ‘ডিম নিক্ষেপে’ সীমাবদ্ধ নয়। এর ভেতরে লুকিয়ে আছে কয়েকটি বড় বার্তা—
প্রবাসী বাংলাদেশিদের সক্রিয় প্রতিক্রিয়া
বিদেশের মাটিতেও রাজনৈতিক বিরোধিতা কতটা তীব্র আকার নিতে পারে, এই ঘটনাই তার প্রমাণ।
১৯৭১-এর চেতনা নিয়ে বিরোধ
যেসব ছাত্রসংগঠন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে অস্বীকার বা বিকৃত করছে বলে অভিযোগ, তাদের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিরোধ বাড়ছে।
রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ইঙ্গিত
এই ক্ষোভ ইঙ্গিত করছে, দেশের ভেতরে এবং বাইরে বিরোধী রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আরও তীব্র হতে পারে।
নিউইয়র্কের ঘটনা একটি প্রতীকী বার্তা দিয়েছে—মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ও মানুষের স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করা যাবে না। আখতার হোসেন ও তাসনিম জারার ওপর আক্রমণকে যদিও “অনাকাঙ্ক্ষিত” বলে অভিহিত করা হয়েছে, তবু এটা পরিষ্কার যে, তাদের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ জমে উঠেছিল, তা এই ঘটনায় বিস্ফোরিত হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিহাসের মর্যাদা, স্বাধীনতার চেতনা ও নাগরিক অধিকারের প্রশ্ন যে এখনও প্রধান ইস্যু, নিউইয়র্কের বিমানবন্দর ঘটনা আবারও তা মনে করিয়ে দিল।