০৩:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
জুলাইয়ের আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করা ফারাবীসহ রাবির ৩ শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে পিটুনি হানি সিংহের পুনর্জাগরণ: দুবাইয়ের ছোট ঘর থেকে বিশ্বমঞ্চে তার ফিরে আসার গল্প কংগ্রেসের টালমাটাল অবস্থা: রাহুল গান্ধীর বারবার ‘হাওয়া হওয়া’ প্রশ্নের মুখে দুবাই এয়ারশো ২০২৫: বিশাল বিনিয়োগে বদলে যাচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমান খাত পুরুষ ও নারীর জন্য আলাদা স্মুদি সাজেশন অবসাদের প্রথম ১৮০ দিনই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ: গবেষণায় নতুন সতর্কবার্তা আরামের গুরুত্ব: শিশুদের ঘুমের জন্য সঠিক ঘুমের পোশাক কেন জরুরি দুবাইয়ের লাইব্রেরিয়ান থেকে বিশ্বব্যাপী গল্প-আন্দোলন: ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেল রঘুনাথের উদ্যোগ আইডিএফ–এর ‘হামাস গ্রাম’ প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ভেতরে: আরবান গেরিলা যুদ্ধের নতুন রূপরেখা ঘরকে মাকড়সার হাত থেকে রক্ষা করুন—জালমুক্ত রাখার ৮টি সম্পূর্ণ নিরাপদ ও কার্যকর উপায়

ভুয়া জুলাই শহীদ ও জুলাইযোদ্ধা সনাক্ত: দায় কার?

সরকারি যাচাইয়ের নতুন উদ্যোগ

অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই আন্দোলনে শহীদ বা যোদ্ধা হিসেবে সরকারি প্রজ্ঞাপনে অন্তর্ভুক্ত ৫২ জনের তথ্য পুনরায় যাচাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ নিয়ে সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দিয়েছে। এর আগে আটজনের নাম গেজেট থেকে বাতিল করা হয়।

জুলাই শহীদ ও জুলাইযোদ্ধার সংজ্ঞা

২০২৫ সালের “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জুলাইযোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ” অনুযায়ী—

  • জুলাই শহীদ: যারা আন্দোলনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের হামলায় নিহত।
  • জুলাইযোদ্ধা: যারা এ হামলায় আহত হয়েছেন।

অর্থাৎ সরাসরি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত না হলে তালিকায় নাম থাকার সুযোগ নেই। কিন্তু বাস্তবে তালিকায় অনেক অযাচিত নাম যুক্ত হয়েছে এবং তারা সরকারি সুবিধাও পাচ্ছেন।

সরকারি সুবিধা

  • শহীদ পরিবারের জন্য: এককালীন ৩০ লাখ টাকা, মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা, ফ্ল্যাট প্রদানের প্রকল্প।
  • আহত জুলাইযোদ্ধাদের জন্য: ১০–২০ হাজার টাকা মাসিক ভাতা, ১–৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থসাহায্য, চিকিৎসা সহায়তা, চাকরিতে অগ্রাধিকার ইত্যাদি।

অভিযোগ রয়েছে, এসব সুবিধা পেতেই অনেকেই ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে নাম তালিকায় তুলেছেন।

তালিকা প্রণয়নের প্রক্রিয়া

১. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রাথমিক তালিকা পাঠায়।
২. মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গেজেট আকারে প্রকাশ করে।
৩. জেলা প্রশাসক নেতৃত্বাধীন কমিটি মাঠ পর্যায়ে যাচাই করে।
৪. আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে নাম চূড়ান্ত হয়।

তাহলে প্রশ্ন উঠছে—এই প্রক্রিয়া থাকা সত্ত্বেও ভুয়া নাম এলো কীভাবে?

প্রশাসনের বক্তব্য

  • কিছু ডিসি ও ইউএনও অভিযোগ করেছেন রাজনৈতিক নেতা, ছাত্র প্রতিনিধি ও সমন্বয়কারীরা কাগজপত্র যাচাইয়ে বাধা দিয়েছেন, চাপ প্রয়োগ করেছেন।
  • সিলেটের সিভিল সার্জন বলেন, অনেকের নাম রাখার জন্য চাপ এসেছিল, ফলে যথাযথ যাচাই হয়নি।
  • বরিশালের ইউএনও বলেন, এলাকায় আন্দোলন না হলেও ঢাকার ঘটনার কাগজপত্রগুলো যাচাই করতে হয়েছে, যা কঠিন ছিল।
  • বরগুনা ও জামালপুর প্রশাসন দাবি করেছে, তাদের এলাকায় ভুয়া তালিকা হয়নি।
  • খুলনার ডিসি জানান, তদন্ত চলছে, প্রমাণ মিললে নাম বাদ ও শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শাস্তির বিধান

সরকারি অধ্যাদেশ অনুযায়ী—

  • ভুয়া তথ্য দিয়ে সুবিধা নিলে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড এবং ২ লাখ টাকা জরিমানা বা নেওয়া অর্থের দ্বিগুণ ফেরত দিতে হবে।
  • প্রশাসনের কেউ সম্পৃক্ত থাকলে সরকারি কাজে অবহেলার অভিযোগ আনা হবে।

সরকারি পরিসংখ্যান

  • ক-শ্রেণি আহত: ৬০২ জন, এককালীন ৫ লাখ টাকা ও মাসে ২০ হাজার টাকা।
  • খ-শ্রেণি আহত: ১১১৮ জন, এককালীন ৩ লাখ টাকা ও মাসে ১৫ হাজার টাকা।
  • গ-শ্রেণি আহত: ১২০৩৮ জন, এককালীন ১ লাখ টাকা ও মাসে ১০ হাজার টাকা।

বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মতোই জুলাই আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীদের জন্য আলাদা গেজেট ও সুবিধা চালু হয়েছে। কিন্তু ভুল বা জাল কাগজপত্র জমা দিয়ে নাম তোলার ঘটনা প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলছে। এখন সরকারের দায়িত্ব—ভুয়া নাম চিহ্নিত করে প্রকৃত শহীদ ও যোদ্ধাদের মর্যাদা নিশ্চিত করা।

জনপ্রিয় সংবাদ

জুলাইয়ের আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করা ফারাবীসহ রাবির ৩ শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে পিটুনি

ভুয়া জুলাই শহীদ ও জুলাইযোদ্ধা সনাক্ত: দায় কার?

০১:০৪:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সরকারি যাচাইয়ের নতুন উদ্যোগ

অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই আন্দোলনে শহীদ বা যোদ্ধা হিসেবে সরকারি প্রজ্ঞাপনে অন্তর্ভুক্ত ৫২ জনের তথ্য পুনরায় যাচাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ নিয়ে সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দিয়েছে। এর আগে আটজনের নাম গেজেট থেকে বাতিল করা হয়।

জুলাই শহীদ ও জুলাইযোদ্ধার সংজ্ঞা

২০২৫ সালের “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জুলাইযোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ” অনুযায়ী—

  • জুলাই শহীদ: যারা আন্দোলনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের হামলায় নিহত।
  • জুলাইযোদ্ধা: যারা এ হামলায় আহত হয়েছেন।

অর্থাৎ সরাসরি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত না হলে তালিকায় নাম থাকার সুযোগ নেই। কিন্তু বাস্তবে তালিকায় অনেক অযাচিত নাম যুক্ত হয়েছে এবং তারা সরকারি সুবিধাও পাচ্ছেন।

সরকারি সুবিধা

  • শহীদ পরিবারের জন্য: এককালীন ৩০ লাখ টাকা, মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা, ফ্ল্যাট প্রদানের প্রকল্প।
  • আহত জুলাইযোদ্ধাদের জন্য: ১০–২০ হাজার টাকা মাসিক ভাতা, ১–৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থসাহায্য, চিকিৎসা সহায়তা, চাকরিতে অগ্রাধিকার ইত্যাদি।

অভিযোগ রয়েছে, এসব সুবিধা পেতেই অনেকেই ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে নাম তালিকায় তুলেছেন।

তালিকা প্রণয়নের প্রক্রিয়া

১. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রাথমিক তালিকা পাঠায়।
২. মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গেজেট আকারে প্রকাশ করে।
৩. জেলা প্রশাসক নেতৃত্বাধীন কমিটি মাঠ পর্যায়ে যাচাই করে।
৪. আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে নাম চূড়ান্ত হয়।

তাহলে প্রশ্ন উঠছে—এই প্রক্রিয়া থাকা সত্ত্বেও ভুয়া নাম এলো কীভাবে?

প্রশাসনের বক্তব্য

  • কিছু ডিসি ও ইউএনও অভিযোগ করেছেন রাজনৈতিক নেতা, ছাত্র প্রতিনিধি ও সমন্বয়কারীরা কাগজপত্র যাচাইয়ে বাধা দিয়েছেন, চাপ প্রয়োগ করেছেন।
  • সিলেটের সিভিল সার্জন বলেন, অনেকের নাম রাখার জন্য চাপ এসেছিল, ফলে যথাযথ যাচাই হয়নি।
  • বরিশালের ইউএনও বলেন, এলাকায় আন্দোলন না হলেও ঢাকার ঘটনার কাগজপত্রগুলো যাচাই করতে হয়েছে, যা কঠিন ছিল।
  • বরগুনা ও জামালপুর প্রশাসন দাবি করেছে, তাদের এলাকায় ভুয়া তালিকা হয়নি।
  • খুলনার ডিসি জানান, তদন্ত চলছে, প্রমাণ মিললে নাম বাদ ও শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শাস্তির বিধান

সরকারি অধ্যাদেশ অনুযায়ী—

  • ভুয়া তথ্য দিয়ে সুবিধা নিলে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড এবং ২ লাখ টাকা জরিমানা বা নেওয়া অর্থের দ্বিগুণ ফেরত দিতে হবে।
  • প্রশাসনের কেউ সম্পৃক্ত থাকলে সরকারি কাজে অবহেলার অভিযোগ আনা হবে।

সরকারি পরিসংখ্যান

  • ক-শ্রেণি আহত: ৬০২ জন, এককালীন ৫ লাখ টাকা ও মাসে ২০ হাজার টাকা।
  • খ-শ্রেণি আহত: ১১১৮ জন, এককালীন ৩ লাখ টাকা ও মাসে ১৫ হাজার টাকা।
  • গ-শ্রেণি আহত: ১২০৩৮ জন, এককালীন ১ লাখ টাকা ও মাসে ১০ হাজার টাকা।

বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মতোই জুলাই আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীদের জন্য আলাদা গেজেট ও সুবিধা চালু হয়েছে। কিন্তু ভুল বা জাল কাগজপত্র জমা দিয়ে নাম তোলার ঘটনা প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলছে। এখন সরকারের দায়িত্ব—ভুয়া নাম চিহ্নিত করে প্রকৃত শহীদ ও যোদ্ধাদের মর্যাদা নিশ্চিত করা।