ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ
দক্ষিণ কোরিয়ার শাসকদল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সংসদ সদস্য জিন সাং-জুন সতর্ক করেছেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি দিন দিন মানি লন্ডারিং ও অবৈধ বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের অন্যতম বড় মাধ্যম হয়ে উঠছে।
ডিজিটাল সম্পদে বিনিয়োগের জনপ্রিয়তা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় এই উদ্বেগ আরও তীব্র হয়েছে। দেশটিতে প্রথমবারের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়েছে।
নিয়ন্ত্রণে নতুন চ্যালেঞ্জ
এই প্রবণতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও বিনিয়োগকারী সুরক্ষার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা কঠিন হয়ে পড়ছে। সন্দেহজনক লেনদেনের সংখ্যা দ্রুত বাড়লেও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নিলে কোরিয়ান ওয়ান-ভিত্তিক স্টেবলকয়েনকে কেন্দ্র করে সীমান্ত পারাপারের অবৈধ লেনদেন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
সন্দেহজনক লেনদেনের ভয়াবহ বৃদ্ধি
সংসদ সদস্য জিন সাং-জুনকে জমা দেওয়া কোরিয়া ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (KoFIU)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ভার্চুয়াল অ্যাসেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের কাছ থেকে ৩৬ হাজার ৬৮৪টি সন্দেহজনক লেনদেনের প্রতিবেদন জমা পড়েছে।
২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ১৯৯। ২০২২ সালে তা ১০ হাজার ছাড়ায় এবং ২০২৪ সালে প্রায় ২০ হাজারে পৌঁছে যায়।
অপরাধের আর্থিক চিত্র
একই সময়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি-সংশ্লিষ্ট অপরাধের মামলা আদালতে পাঠানো হয়েছে মোট ৯.৫ ট্রিলিয়ন ওয়ানের (প্রায় ৭.১ বিলিয়ন ডলার) বেশি অর্থমূল্যের।
এর মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি, অর্থাৎ প্রায় ৮.৬ ট্রিলিয়ন ওয়ান অবৈধ বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সঙ্গে জড়িত। এসব লেনদেন ব্যাংক নয়, বরং অনুমোদনবিহীন চ্যানেলের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।
স্টেবলকয়েনের ঝুঁকি
এখন আর শুধু বিটকয়েন বা ইথেরিয়ামের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই অপরাধমূলক লেনদেন। স্টেবলকয়েন, বিশেষ করে ডলার-ভিত্তিক টেথারও অবৈধ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
২০২৫ সালের মে মাসে শুল্ক কর্তৃপক্ষ এক ঘটনায় আবিষ্কার করে, এক কোরিয়ান ব্যবসায়ী রাশিয়ান এক আমদানিকারকের কাছ থেকে পাওয়া নগদ অর্থ ব্যবহার করে টেথারের মাধ্যমে অবৈধভাবে ৫৭১ কোটি ওয়ান বিদেশে পাঠিয়েছেন।
কঠোর সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান
সংসদ সদস্য জিন বলেন, ক্রমেই বেশি সংখ্যক বিনিয়োগকারী স্টেবলকয়েন ব্যবহার করছেন, যার সঙ্গে অবৈধ লেনদেনও বাড়ছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “কো-এফ-আই-ইউ ও কোরিয়া কাস্টমস সার্ভিসসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সমন্বিত ও সক্রিয় কৌশল প্রয়োজন। অপরাধমূলক অর্থের উৎস খুঁজে বের করা, শনাক্ত করা ও মামলা চালানো জরুরি। একই সঙ্গে অবৈধ রেমিট্যান্স ও ক্রিপ্টো-সংশ্লিষ্ট আর্থিক অপরাধ রোধে আরও কার্যকর নীতি গ্রহণ করা উচিত।”