মালয়েশিয়া আগামী সপ্তাহ থেকে জ্বালানি ভর্তুকি ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ঘোষণা দিয়েছেন, এই পদক্ষেপ সরকারি ব্যয় কমিয়ে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামোসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যয় বাড়াতে সহায়ক হবে।
নতুন মূল্যনীতি
৩০ সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়ান নাগরিকরা প্রতি লিটার RON95 জ্বালানি ১.৯৯ রিঙ্গিত (৪৭ সেন্ট) দামে পাবেন। বর্তমানে এর দাম ২.০৫ রিঙ্গিত। তবে বিদেশিরা আর ভর্তুকি সুবিধা পাবেন না। তাদের জন্য দাম বেড়ে প্রায় ২.৬০ রিঙ্গিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার বলেন, “সরকার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী লক্ষ্যভিত্তিক ভর্তুকি কার্যকর করেছে এবং জ্বালানির দাম কমিয়েছে। সক্রিয় ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা প্রত্যেক নাগরিক স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই সুবিধা পাবেন।”
সরকারের উদ্দেশ্য ও সাশ্রয়
আনোয়ার এই সিদ্ধান্তকে “সাহসী পদক্ষেপ” বলে আখ্যায়িত করেছেন। তার মতে, বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মধ্যে এটি আর্থিক চাপ কমাবে। সাশ্রয় হওয়া অর্থ নগদ সহায়তা কর্মসূচি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।
যদিও সরকার ব্যয়ের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়নি, তবে আনোয়ারের ধারণা, এই সংস্কারের মাধ্যমে প্রতিবছর প্রায় ৮ বিলিয়ন রিঙ্গিত (১.৯ বিলিয়ন ডলার) সাশ্রয় হবে। এটি মোট ভর্তুকি খরচের প্রায় ৪০ শতাংশ।
মাসিক সীমা ও প্রক্রিয়া
নতুন ব্যবস্থায় মালয়েশিয়ার নাগরিকরা প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ৩০০ লিটার পর্যন্ত ভর্তুকি মূল্যে জ্বালানি কিনতে পারবেন। রাইড-শেয়ার ড্রাইভারদের জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ ছাড়। কোনো রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন হবে না; জাতীয় পরিচয়পত্র দেখালেই ভর্তুকি পাওয়া যাবে। এছাড়া ই-ওয়ালেট অ্যাপ্লিকেশন দিয়েও সুবিধা নেওয়া যাবে।
অর্থনীতিবিদদের মতামত
অর্থনীতিবিদ জিওফ্রে উইলিয়ামস নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, “যদি ৮ বিলিয়ন রিঙ্গিত সাশ্রয়ের লক্ষ্য পূরণ হয়, তবে সরকারকে অগ্রাধিকার খাতে অর্থ পুনর্বণ্টনের সুযোগ দেবে।” তবে তিনি এটিকে বিদেশিদের জন্য “বৈষম্যমূলক” পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
আঞ্চলিক তুলনা
দীর্ঘদিন ধরেই মালয়েশিয়া জনগণের স্বার্থে জ্বালানিতে ভর্তুকি দিয়ে আসছে। বর্তমানে দেশটির জ্বালানির দাম এখনো অঞ্চলের অনেক দেশের তুলনায় কম। উদাহরণস্বরূপ—
- • সিঙ্গাপুরে দাম: ২.৮৪ ডলার প্রতি লিটার
- • কম্বোডিয়ায়: ১.১৬ ডলার
- • থাইল্যান্ডে: ১.০২ ডলার
- • ফিলিপাইনে: ১.০১ ডলার
- • ভিয়েতনামে: ০.৭৪ ডলার
- • ইন্দোনেশিয়ায়: ০.৬১ ডলার
পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ
মালয়েশিয়া ভিত্তিক প্যাসিফিক রিসার্চ সেন্টারের সিনিয়র ফেলো আমান্ডা ইয়ো মন্তব্য করেছেন, এই পদক্ষেপ জাতীয় অগ্রাধিকার খাতে সম্পদ বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। তবে পরিবেশগত প্রভাব নির্ভর করবে মানুষ কতটা আচরণগত পরিবর্তন আনতে পারে তার ওপর।
তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি লাস্ট-মাইল কানেক্টিভিটি সমাধান না করা হয় — যেখানে এমআরটি ও এলআরটি নেটওয়ার্ক উন্নত হলেও বাস সার্ভিস অনিয়মিত — তাহলে নির্গমন কমাতে দেরি হবে এবং ২০৫০ সালের নেট-জিরো লক্ষ্যে পৌঁছানো কঠিন হয়ে যাবে।”