বিপুল পরিমাণ নকল পণ্য জব্দ
শাংহাই থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, চীনা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এ বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্টের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত প্রায় ১৮ লাখ ৩০ হাজার নকল লাবুবু পুতুল জব্দ করেছে। দীর্ঘদিন বিদেশি ব্র্যান্ডের নকল উৎপাদনের অভিযোগে সমালোচিত চীন এবার নিজস্ব জনপ্রিয় পণ্যকে সুরক্ষা দেওয়ার চাপে পড়েছে।
বাজারে নকল লাবুবুর ছড়াছড়ি
ঝেজিয়াং প্রদেশের এক পাইকারি বাজারে একজন ব্যবসায়ী ১০টির বেশি কিনলে প্রতি পুতুল মাত্র ২.৫ ইউয়ান (প্রায় ৩৫ সেন্ট) দামে নকল লাবুবু বিক্রি করছিলেন। অথচ আসল লাবুবু পুতুলের দাম সাধারণত প্রায় ১০০ ইউয়ান।
তিনি স্বীকার করেন, এগুলো নকল এবং ধরা পড়লে শাস্তি পেতে হবে।
লাবুবুর উৎস ও জনপ্রিয়তা
লাবুবু চরিত্রটি প্রথমে হংকংয়ের ইলাস্ট্রেটর কাসিং লুং-এর শিশুতোষ ছবির বইয়ে দেখা যায়। ২০১৯ সালে চীনা কোম্পানি পপ মার্ট ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ ‘দ্য মনস্টারস’ সিরিজের অংশ হিসেবে এই পুতুল বাজারে আনে।
কেপপ গ্রুপ ব্ল্যাকপিঙ্কের লিসা ইনস্টাগ্রামে লাবুবুর ছবি শেয়ার করার পর চরিত্রটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। তরুণরা ব্যাগে ঝুলিয়ে রাখতে শুরু করে, অন্য তারকারাও অনুসরণ করেন।
চীনে বিক্রির রেকর্ড
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ‘দ্য মনস্টারস’ সিরিজের বিক্রি পৌঁছেছে ৪.৮ বিলিয়ন ইউয়ান (৬৭৫ মিলিয়ন ডলার), যা আগের বছরের তুলনায় আট গুণ বেশি। এর সঙ্গে সমানতালে বেড়েছে নকলের দাপট।
গ্রাহকদের ভিন্ন প্রতিক্রিয়া
চীনা ভোক্তাদের একাংশ নকলের বিস্তারে ক্ষুব্ধ। তবে অন্যরা বলছেন, ব্যাগে ঝুলিয়ে রাখলে যেভাবেই হোক নষ্ট হবে, তাই নকল কিনলেও সমস্যা নেই।
কর্তৃপক্ষের অভিযানে কৌশল
জুলাইয়ে কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, আসল লাবুবুর বৈশিষ্ট্য হলো এতে থাকে ৯টি দাঁত। নকল পুতুলে সাধারণত দাঁতের সংখ্যা আলাদা হয়। তবে নকল উৎপাদকরা এখন নয় দাঁতের সংস্করণও তৈরি করছে।
জানুয়ারি থেকে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ ২৩৭টি মামলায় জড়িত নকল লাবুবু জব্দ করেছে, যেগুলো ৬১টি দেশ ও অঞ্চলে রপ্তানির উদ্দেশ্যে পাঠানো হচ্ছিল।
পপ মার্টের উদ্যোগ
পপ মার্ট চীন ছাড়াও যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছে। কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, বিদেশে প্রায় ৭.৯১ মিলিয়ন নকল পণ্য আটক হয়েছে।
আসল পণ্য যাচাইয়ের জন্য প্রতিটি পুতুলে কিউআর কোড সংযুক্ত করা হচ্ছে এবং অংশীদার কারখানায় উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। ফলে পুনর্বিক্রয় বাজারে দামও কমেছে।
মেধাস্বত্ব নিয়ে চীনের পূর্ব ইতিহাস
চীনের কারখানাগুলো দীর্ঘদিন ধরে নকল পণ্য তৈরির জন্য সমালোচিত। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন মেধাস্বত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে, যা পরবর্তীতে বাণিজ্যযুদ্ধে রূপ নেয়।
২০২০ সালের বাণিজ্য চুক্তিতে চীন কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও যুক্তরাষ্ট্র এখনও চীনের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান।
আইন ও আদালতের পদক্ষেপ
২০২১ সালে সংশোধিত কপিরাইট আইনে লঙ্ঘনকারীদের বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা হয়। প্রতিবছর প্রায় ৫ লাখ মেধাস্বত্ব বিরোধের মামলা হচ্ছে, যা ২০১৮ সালের আগে তুলনামূলক কম ছিল।
চীনের সফট পাওয়ার ও নতুন দৃষ্টান্ত
‘নে ঝা টু’ নামের জনপ্রিয় অ্যানিমেশন ও ‘ব্ল্যাক মিথ: উকং’ গেম চীনের সফট পাওয়ার বাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো প্রযুক্তিতে চীন বিশ্বমানের উদাহরণ তৈরি করছে।
২০২৪ সালে গুয়াংজুর এক আদালত এক এআই সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে কপিরাইট লঙ্ঘনের দায়ে ১০ হাজার ইউয়ান জরিমানা করে। প্রতিষ্ঠানটির তৈরি ছবিতে জাপানি ‘আল্ট্রাম্যান’ চরিত্রের নকল পাওয়া গিয়েছিল।
একসময় যেসব দেশে চীনকে নকল উৎপাদক হিসেবে দেখা হতো, সেখানে এখন নিজস্ব সৃষ্টিশীল পণ্য রক্ষায় দেশটি জোর দিচ্ছে। লাবুবুর মতো বৈশ্বিক হিট পণ্য চীনের মেধাস্বত্ব সুরক্ষা নীতির নতুন পরীক্ষায় রূপ নিয়েছে।