০৯:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রেল সংকট, নতুন টাস্কফোর্স এবং আগেভাগেই সমাধানের প্রশ্ন

সাম্প্রতিক রেল বিপর্যয় ও টাস্কফোর্সের গঠন

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সিঙ্গাপুরে  চার দিনের মধ্যে তিনবার মেট্রো রেলের বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটেছে। শুধু তিন মাসের মধ্যে অন্তত ১৫ বার সেবা ব্যাহত হয়েছে। এসবের পরপরই প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, রেল অপারেটর এবং ল্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (এলটিএ)-র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি নতুন টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এই টাস্কফোর্সের দায়িত্ব হবে রেলের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ পর্যালোচনা করে কোনগুলো দ্রুত প্রতিস্থাপন, উন্নয়ন বা বেশি ঘন ঘন রক্ষণাবেক্ষণ দরকার তা নির্ধারণ করা। পাশাপাশি পুরো সিস্টেমের প্রযুক্তিগত অডিট করা হবে এবং ভবিষ্যতে বিঘ্ন ঘটলে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে সেবা পুনরুদ্ধারের পদ্ধতি পর্যালোচনা করা হবে।

অতীতের অভিজ্ঞতা ও আগের পদক্ষেপ

২০১১ সালে সিঙ্গাপুরের রেল ব্যবস্থায় বড় সংকট দেখা দেয়। একের পর এক বিপর্যয়ের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্তে রেল ব্যবস্থার সাংগঠনিক ও সংস্কৃতিগত দুর্বলতা উঠে আসে।

Singapore PM Lee Hsien Loong denounced by siblings | Singapore | The  Guardian

পরে নর্থ-সাউথ ও ইস্ট-ওয়েস্ট লাইনে (NSEWL) ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেম আধুনিকীকরণের কাজ শুরু হয়, যার খরচ হয় ২.৬ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে নতুন সিগন্যালিং সিস্টেম, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা এবং নতুন ট্রেন যুক্ত হয়।

এসএমআরটি তখন গ্রাহকসেবা টিম ১৯০ থেকে বাড়িয়ে ৭০০ জন করে এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়। এসব পদক্ষেপের ফলে কাগজে কলমে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে নির্ভরযোগ্যতা তিনগুণ বাড়লেও বাস্তবে বড় বিপর্যয় চলতেই থাকে।

অর্জন ও পুনরায় সমস্যা

২০১৭ সালে লক্ষ্য ঠিক করা হয়—প্রতি ১০ লাখ কিলোমিটার অপারেশনে একটি লাইনে একবারের বেশি দেরি হবে না। ২০১৯ সালে এই লক্ষ্য পূরণ হয় এবং সিঙ্গাপুর তাইপে মেট্রোর মানে পৌঁছায়। এমনকি গড়ে দুই মিলিয়ন কিলোমিটার পর্যন্ত কোনো বড় বিপর্যয় ছাড়াই ট্রেন চলেছে।

তবে এর পরেও নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইস্ট-ওয়েস্ট লাইনের একটি অংশ টানা ছয় দিন অচল হয়ে যায়, যা কোটি কোটি যাত্রীকে দুর্ভোগে ফেলে। ২০২০ সালের পর প্রথমবারের মতো রেলের নির্ভরযোগ্যতা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। অপরদিকে তাইপে মেট্রো একই সময়ে আরও উন্নত সাফল্য ধরে রাখে।

MRT hits new reliability high at mid-year | The Straits Times

নতুন বাস্তবতা ও জটিলতা

বর্তমানে সিঙ্গাপুরের রেল নেটওয়ার্ক ২০১১ সালের ১৭৫ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে ২৭১ কিলোমিটারে পৌঁছেছে। বেশি স্টেশন, বেশি যন্ত্রাংশ মানে জটিলতাও বেড়েছে।

এখন এলটিএ শুধু নিয়ন্ত্রকের ভূমিকাতেই নেই, তারা সম্পূর্ণ সম্পদের মালিক। কোন ট্রেন বা সিস্টেম কেনা হবে, কিভাবে নবায়ন হবে—এসব সিদ্ধান্তও তারা নেয়। তাই দায়ভার শুধু অপারেটরদের ওপর বর্তায় না।

ভবিষ্যতের করণীয়

নতুন টাস্কফোর্সের সুপারিশ ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ প্রকাশ হবে। সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই আগামী পাঁচ বছরে রেল সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে এক বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

তবে আগের মতো শুধু প্রচলিত নিয়মে কাজ করলে সমস্যা পুরোপুরি সমাধান হবে না। অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, কখনো কখনো নিয়মের বাইরে গিয়ে বাস্তব সমস্যার উৎস খুঁজে বের করতে হয়। যদি এবারও সিস্টেমে লুকানো ঝুঁকি দূর করা না যায়, তাহলে সিঙ্গাপুরের রেল নির্ভরযোগ্যতা আবারও বড় সংকটে পড়তে পারে।

রেল সংকট, নতুন টাস্কফোর্স এবং আগেভাগেই সমাধানের প্রশ্ন

০৬:৩১:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সাম্প্রতিক রেল বিপর্যয় ও টাস্কফোর্সের গঠন

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সিঙ্গাপুরে  চার দিনের মধ্যে তিনবার মেট্রো রেলের বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটেছে। শুধু তিন মাসের মধ্যে অন্তত ১৫ বার সেবা ব্যাহত হয়েছে। এসবের পরপরই প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, রেল অপারেটর এবং ল্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (এলটিএ)-র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি নতুন টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এই টাস্কফোর্সের দায়িত্ব হবে রেলের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ পর্যালোচনা করে কোনগুলো দ্রুত প্রতিস্থাপন, উন্নয়ন বা বেশি ঘন ঘন রক্ষণাবেক্ষণ দরকার তা নির্ধারণ করা। পাশাপাশি পুরো সিস্টেমের প্রযুক্তিগত অডিট করা হবে এবং ভবিষ্যতে বিঘ্ন ঘটলে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে সেবা পুনরুদ্ধারের পদ্ধতি পর্যালোচনা করা হবে।

অতীতের অভিজ্ঞতা ও আগের পদক্ষেপ

২০১১ সালে সিঙ্গাপুরের রেল ব্যবস্থায় বড় সংকট দেখা দেয়। একের পর এক বিপর্যয়ের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্তে রেল ব্যবস্থার সাংগঠনিক ও সংস্কৃতিগত দুর্বলতা উঠে আসে।

Singapore PM Lee Hsien Loong denounced by siblings | Singapore | The  Guardian

পরে নর্থ-সাউথ ও ইস্ট-ওয়েস্ট লাইনে (NSEWL) ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেম আধুনিকীকরণের কাজ শুরু হয়, যার খরচ হয় ২.৬ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে নতুন সিগন্যালিং সিস্টেম, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা এবং নতুন ট্রেন যুক্ত হয়।

এসএমআরটি তখন গ্রাহকসেবা টিম ১৯০ থেকে বাড়িয়ে ৭০০ জন করে এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়। এসব পদক্ষেপের ফলে কাগজে কলমে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে নির্ভরযোগ্যতা তিনগুণ বাড়লেও বাস্তবে বড় বিপর্যয় চলতেই থাকে।

অর্জন ও পুনরায় সমস্যা

২০১৭ সালে লক্ষ্য ঠিক করা হয়—প্রতি ১০ লাখ কিলোমিটার অপারেশনে একটি লাইনে একবারের বেশি দেরি হবে না। ২০১৯ সালে এই লক্ষ্য পূরণ হয় এবং সিঙ্গাপুর তাইপে মেট্রোর মানে পৌঁছায়। এমনকি গড়ে দুই মিলিয়ন কিলোমিটার পর্যন্ত কোনো বড় বিপর্যয় ছাড়াই ট্রেন চলেছে।

তবে এর পরেও নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইস্ট-ওয়েস্ট লাইনের একটি অংশ টানা ছয় দিন অচল হয়ে যায়, যা কোটি কোটি যাত্রীকে দুর্ভোগে ফেলে। ২০২০ সালের পর প্রথমবারের মতো রেলের নির্ভরযোগ্যতা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। অপরদিকে তাইপে মেট্রো একই সময়ে আরও উন্নত সাফল্য ধরে রাখে।

MRT hits new reliability high at mid-year | The Straits Times

নতুন বাস্তবতা ও জটিলতা

বর্তমানে সিঙ্গাপুরের রেল নেটওয়ার্ক ২০১১ সালের ১৭৫ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে ২৭১ কিলোমিটারে পৌঁছেছে। বেশি স্টেশন, বেশি যন্ত্রাংশ মানে জটিলতাও বেড়েছে।

এখন এলটিএ শুধু নিয়ন্ত্রকের ভূমিকাতেই নেই, তারা সম্পূর্ণ সম্পদের মালিক। কোন ট্রেন বা সিস্টেম কেনা হবে, কিভাবে নবায়ন হবে—এসব সিদ্ধান্তও তারা নেয়। তাই দায়ভার শুধু অপারেটরদের ওপর বর্তায় না।

ভবিষ্যতের করণীয়

নতুন টাস্কফোর্সের সুপারিশ ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ প্রকাশ হবে। সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই আগামী পাঁচ বছরে রেল সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে এক বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

তবে আগের মতো শুধু প্রচলিত নিয়মে কাজ করলে সমস্যা পুরোপুরি সমাধান হবে না। অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, কখনো কখনো নিয়মের বাইরে গিয়ে বাস্তব সমস্যার উৎস খুঁজে বের করতে হয়। যদি এবারও সিস্টেমে লুকানো ঝুঁকি দূর করা না যায়, তাহলে সিঙ্গাপুরের রেল নির্ভরযোগ্যতা আবারও বড় সংকটে পড়তে পারে।