০৮:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যা: ধান-কাপাস ডুবে গেল, রফতানি ও বাজেটের পথে অচলাবস্থা

পাকিস্তানে কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো গ্রামীণ কৃষি এলাকা ও শিল্পাঞ্চল একসঙ্গে ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে হাজার কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে, একইসঙ্গে নড়বড়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনাও বড় ধাক্কা খেল।

সরকার ২০২৬ সালের জন্য ৪ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল। কৃষি ও শিল্প পুনরুদ্ধারের ওপর নির্ভর করেই এই আশাবাদ দেখানো হয়েছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৭ বিলিয়ন ডলারের সহায়তায় অর্থনীতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছিল। কিন্তু জুনের শেষ থেকে রেকর্ড বর্ষণ এবং ভারতের বাঁধ থেকে পানি ছাড়ার ফলে পাঞ্জাব ও সিন্ধুর বিস্তীর্ণ অঞ্চল ডুবে যায়।

ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে, আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমপক্ষে ২ লাখ ২০ হাজার হেক্টর ধানের জমি প্লাবিত হয়েছে। শুধু পাঞ্জাবেই ১৮ লাখ একর জমি তলিয়ে গেছে। পাকিস্তান ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান খালিদ বাথ জানান, প্রায় অর্ধেক ধান আর ৬০ শতাংশ তুলা ও ভুট্টার ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে এক ট্রিলিয়ন রুপির সমান।

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ফয়সালাবাদের সাবেক উপাচার্য ইকরার আহমদ খান বলছেন, দেশজুড়ে প্রায় দশভাগের একভাগ ফসল ধ্বংস হয়েছে। কিছু এলাকায় সবজি ক্ষতি ৯০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে

এমন এক সময়ে এই বিপর্যয় ঘটল যখন পাকিস্তান গম বপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গম দেশটির মানুষের মোট ক্যালোরির প্রায় অর্ধেক সরবরাহ করে। ২০২৪ সালে ভালো ফলনের কারণে জাতীয় মজুত স্বস্তিদায়ক হলেও কাদামাটি জমে থাকায় এবার সময়মতো বপন ব্যাহত হতে পারে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু দাম বাড়াবে না, বরং খাদ্য নিরাপত্তার বড় সংকট তৈরি করবে।

সরকারের শঙ্কা

পরিকল্পনা মন্ত্রী আহসান ইকবাল জানিয়েছেন, এই বন্যায় জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা পিছিয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এটি সাময়িক কিন্তু গুরুতর সরবরাহ সংকট তৈরি করবে। যদিও ২০২২ সালের মতো ৩০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির পুনরাবৃত্তি হবে না, তবু অর্থনীতির চাপ বাড়ছেই। এদিকে গম, পেঁয়াজ, চিনি ও টমেটোর দাম লাফিয়ে বাড়ছে।

আইএমএফ-এর প্রতিনিধি মাহির বেনিসি জানিয়েছেন, এ সপ্তাহে জরুরি তহবিল মূল্যায়ন করা হবে, বাজেট পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব কি না সেটিও দেখা হবে।

শিল্পে ধাক্কা

শুধু কৃষিই নয়, শিল্পেও বিপর্যয় নেমে এসেছে। সিয়ালকোটসহ বিভিন্ন শিল্পনগরীর কারখানা ও কর্মশালা প্লাবিত হয়েছে। তুলার সংকটে টেক্সটাইল খাত বিপাকে পড়বে, যা পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের খাত। ধান রফতানিতেও ভারতকে হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

মানবিক বিপর্যয়

২৬ জুন থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত এক হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। আড়াই মিলিয়নের বেশি মানুষকে পাঞ্জাব ও সিন্ধু থেকে সরিয়ে নিতে হয়েছে। লাহোরে বহু ঘরবাড়ি ও ছোট ব্যবসা ভেসে গেছে।

রিকশাচালক মোহাম্মদ আরিফ জানান, তার ঘর প্লাবিত হওয়ায় তিনদিন ধরে সন্তানদের নিয়ে রাস্তায় থাকতে হচ্ছে।

পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যা: ধান-কাপাস ডুবে গেল, রফতানি ও বাজেটের পথে অচলাবস্থা

০১:৩৬:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পাকিস্তানে কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো গ্রামীণ কৃষি এলাকা ও শিল্পাঞ্চল একসঙ্গে ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে হাজার কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে, একইসঙ্গে নড়বড়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনাও বড় ধাক্কা খেল।

সরকার ২০২৬ সালের জন্য ৪ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল। কৃষি ও শিল্প পুনরুদ্ধারের ওপর নির্ভর করেই এই আশাবাদ দেখানো হয়েছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৭ বিলিয়ন ডলারের সহায়তায় অর্থনীতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছিল। কিন্তু জুনের শেষ থেকে রেকর্ড বর্ষণ এবং ভারতের বাঁধ থেকে পানি ছাড়ার ফলে পাঞ্জাব ও সিন্ধুর বিস্তীর্ণ অঞ্চল ডুবে যায়।

ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে, আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমপক্ষে ২ লাখ ২০ হাজার হেক্টর ধানের জমি প্লাবিত হয়েছে। শুধু পাঞ্জাবেই ১৮ লাখ একর জমি তলিয়ে গেছে। পাকিস্তান ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান খালিদ বাথ জানান, প্রায় অর্ধেক ধান আর ৬০ শতাংশ তুলা ও ভুট্টার ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে এক ট্রিলিয়ন রুপির সমান।

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ফয়সালাবাদের সাবেক উপাচার্য ইকরার আহমদ খান বলছেন, দেশজুড়ে প্রায় দশভাগের একভাগ ফসল ধ্বংস হয়েছে। কিছু এলাকায় সবজি ক্ষতি ৯০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে

এমন এক সময়ে এই বিপর্যয় ঘটল যখন পাকিস্তান গম বপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গম দেশটির মানুষের মোট ক্যালোরির প্রায় অর্ধেক সরবরাহ করে। ২০২৪ সালে ভালো ফলনের কারণে জাতীয় মজুত স্বস্তিদায়ক হলেও কাদামাটি জমে থাকায় এবার সময়মতো বপন ব্যাহত হতে পারে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু দাম বাড়াবে না, বরং খাদ্য নিরাপত্তার বড় সংকট তৈরি করবে।

সরকারের শঙ্কা

পরিকল্পনা মন্ত্রী আহসান ইকবাল জানিয়েছেন, এই বন্যায় জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা পিছিয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এটি সাময়িক কিন্তু গুরুতর সরবরাহ সংকট তৈরি করবে। যদিও ২০২২ সালের মতো ৩০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির পুনরাবৃত্তি হবে না, তবু অর্থনীতির চাপ বাড়ছেই। এদিকে গম, পেঁয়াজ, চিনি ও টমেটোর দাম লাফিয়ে বাড়ছে।

আইএমএফ-এর প্রতিনিধি মাহির বেনিসি জানিয়েছেন, এ সপ্তাহে জরুরি তহবিল মূল্যায়ন করা হবে, বাজেট পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব কি না সেটিও দেখা হবে।

শিল্পে ধাক্কা

শুধু কৃষিই নয়, শিল্পেও বিপর্যয় নেমে এসেছে। সিয়ালকোটসহ বিভিন্ন শিল্পনগরীর কারখানা ও কর্মশালা প্লাবিত হয়েছে। তুলার সংকটে টেক্সটাইল খাত বিপাকে পড়বে, যা পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের খাত। ধান রফতানিতেও ভারতকে হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

মানবিক বিপর্যয়

২৬ জুন থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত এক হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। আড়াই মিলিয়নের বেশি মানুষকে পাঞ্জাব ও সিন্ধু থেকে সরিয়ে নিতে হয়েছে। লাহোরে বহু ঘরবাড়ি ও ছোট ব্যবসা ভেসে গেছে।

রিকশাচালক মোহাম্মদ আরিফ জানান, তার ঘর প্লাবিত হওয়ায় তিনদিন ধরে সন্তানদের নিয়ে রাস্তায় থাকতে হচ্ছে।