আইপিওর প্রস্তুতি
মালয়েশিয়ার এমএমসি পোর্ট হোল্ডিংস দেশটির এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় শেয়ার বাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আনার পরিকল্পনা করছে। বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে পরিবর্তনের সুযোগ কাজে লাগাতে এবং প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রতিষ্ঠানটি এই উদ্যোগ নিয়েছে।
সিকিউরিটিজ কমিশন মালয়েশিয়ার অনুমোদন অনুযায়ী, এমএমসি পোর্ট তাদের মোট শেয়ারের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ জনগণের পাশাপাশি পরিচালনা পর্ষদ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য উন্মুক্ত করবে। বিশ্লেষকদের মতে, এতে প্রায় ৮.৫ বিলিয়ন রিঙ্গিত (প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) তোলা সম্ভব হবে এবং কোম্পানির মূল্য দাঁড়াবে প্রায় ৩০ বিলিয়ন রিঙ্গিত।
কৌশলগত অবস্থান ও কার্যক্রম
এমএমসি পোর্ট মালাক্কা প্রণালীর পাশে পাঁচটি টার্মিনাল পরিচালনা করে—তানজুং পেলেপাস, জোহর পোর্ট, নর্থপোর্ট, পেনাং পোর্ট ও তানজুং ব্রুয়াস পোর্ট। মালাক্কা প্রণালী বৈশ্বিক শিপিংয়ের অন্যতম প্রধান রুট। কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর পাঁচটির মধ্যে চারটি বন্দর মালয়েশিয়ার শীর্ষ পাঁচে স্থান পেয়েছে, আর দুটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শীর্ষ সাতের মধ্যে ছিল।

কোম্পানির প্রধান নির্বাহী আজমান শাহ মোহাম্মদ ইউসুফ জানিয়েছেন, এমএমসি’র লক্ষ্য দেশটিকে একটি বৈশ্বিক ট্রানশিপমেন্ট হাব হিসেবে গড়ে তোলা। এজন্য বন্দর অবকাঠামোয় ধারাবাহিক বিনিয়োগ প্রয়োজন। তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যেই কনটেইনার ও প্রচলিত কার্গো পরিচালনা সক্ষমতা বাড়াচ্ছি। একই সঙ্গে ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশনের মাধ্যমে কার্যকারিতা উন্নত করছি।”
সম্প্রসারণ পরিকল্পনা
আইপিও প্রসপেক্টাসে বলা হয়েছে, এমএমসি পোর্ট ২০২৪ সালে ২৪ মিলিয়ন টিইইউ (কনটেইনার ইউনিট) থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে ২৬.৯ মিলিয়নে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছে। প্রচলিত কার্গো পরিচালনা ক্ষমতা ৫১.৪ মিলিয়ন টন থেকে বাড়িয়ে ৬৬.১ মিলিয়ন টন করা হবে।
কোম্পানির মতে, এই সক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন পুনর্বিন্যাস ও বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনের পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বাজারে শেয়ার বাড়ানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি উচ্চমূল্যের কার্গো আকর্ষণ, গুদামজাতকরণ ও বাল্ক হ্যান্ডলিংয়ের মতো মূল্য সংযোজন সেবা সম্প্রসারণও পরিকল্পনায় রয়েছে।
আর্থিক অবস্থা
গত বছর এমএমসি পোর্টের রাজস্ব দাঁড়ায় ৪.৩৬ বিলিয়ন রিঙ্গিত, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। তবে নিট মুনাফা ৯ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৬৩৬ মিলিয়ন রিঙ্গিত।

মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ
এমএমসি পোর্ট হলো এমএমসি করপোরেশনের একটি ইউনিট। এটি মালয়েশিয়ার প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সৈয়দ মোক্তার আলবুখারির নিয়ন্ত্রণে। তিনি দেশটির একমাত্র চাল আমদানিকারক ও পরিবেশক প্রতিষ্ঠান পদিবারাস ন্যাশনাল (বারনাস)-এরও মালিক।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব
যদি আইপিও সফলভাবে সম্পন্ন হয়, তবে এটি মালয়েশিয়ার ইতিহাসে ২০১২ সালের পর সবচেয়ে বড় হবে। সে বছর ফেলদা গ্লোবাল ভেঞ্চারস ১০.৫ বিলিয়ন রিঙ্গিত সংগ্রহ করেছিল। এর পরের বড় তালিকাভুক্তির মধ্যে রয়েছে ২০২৪ সালে জোহর প্লান্টেশনস গ্রুপের ৭৩৫ মিলিয়ন রিঙ্গিত এবং গত বছর ৯৯ স্পিড মার্ট রিটেইল হোল্ডিংসের ২.৩৬ বিলিয়ন রিঙ্গিত তোলা।
আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট
২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আইপিও কার্যক্রম কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক অনিশ্চয়তার কারণে অনেক কোম্পানি পিছিয়ে গেছে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ফিলিপাইনে তালিকাভুক্তির সংখ্যা এক বছরে ৩১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪৯-এ। অর্থ সংগ্রহও ১১ শতাংশ হ্রাস পেয়ে নেমে এসেছে ১.৩৭ বিলিয়ন ডলারে। ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে যেখানে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল, তার বিপরীতে এ পতনকে বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















