তাইওয়ানে প্রাণহানি ও নিখোঁজ
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় হিসেবে পরিচিত টাইফুন রাগাসা বুধবার চীনের দক্ষিণাঞ্চলের দিকে ধাবিত হয়েছে। এর আগে এটি তাইওয়ানে আঘাত হেনে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু ঘটায় এবং বহু মানুষকে নিখোঁজ করে। তাইওয়ানের হুয়ালিয়েন কাউন্টিতে ১২৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। পাহাড়ি বাঁধ ভেঙে বন্যার পানি একটি শহরে ঢুকে পড়ায় এই বিপর্যয় ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন যে সতর্কবার্তা যথাসময়ে দেওয়া হয়নি, যদিও তাইওয়ান নিয়মিতভাবে টাইফুনের আঘাত মোকাবিলা করে থাকে।
হংকংয়ে ক্ষয়ক্ষতি
ঝড়ের প্রভাবে হংকংয়ে সমুদ্রের উঁচু ঢেউ উপকূলীয় এলাকায় আছড়ে পড়ে সড়ক ও আবাসিক এলাকায় পানি ঢুকেছে। একটি বিলাসবহুল হোটেলেও প্রবল ঢেউ ঢুকে ভেতরে প্লাবিত করেছে। অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন এবং অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৮০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। মাকাওতে ক্যাসিনোগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছে এবং অতিথিদের কক্ষের বাইরে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
চীনে সতর্কতা ও প্রস্তুতি
চীনের সামুদ্রিক কর্তৃপক্ষ এ বছরের প্রথম সর্বোচ্চ ‘লাল সতর্কতা’ জারি করেছে। গুয়াংডং প্রদেশে ২.৮ মিটার পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঝড়টি পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে গঠিত হয়ে সোমবার ২৬০ কিমি/ঘণ্টারও বেশি বাতাসের বেগ নিয়ে ক্যাটাগরি ৫ মাত্রায় পৌঁছেছিল। এখন এটি দুর্বল হয়ে ক্যাটাগরি ৩-এ নেমে এলেও এখনো গাছ, বৈদ্যুতিক লাইন ও ভবনে ক্ষতি করার মতো শক্তি রয়েছে।
অবকাঠামো ও আর্থিক কার্যক্রম
অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পূর্বের ঘূর্ণিঝড় ‘হাতো’ ও ‘ম্যাংখুট’-এর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে পার্ল রিভার ডেল্টা অঞ্চল এখন অনেক বেশি প্রস্তুত। এমনকি এ বছর হংকং শেয়ারবাজার টাইফুন চলাকালেও খোলা রাখা হয়েছে। তবে প্রভাব এড়াতে বুধবার ৩২০ কোটি ডলারের একটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
দক্ষিণ চীনের নগরীগুলো ঝুঁকিতে
ঝড়টি হংকংয়ের প্রায় ১০০ কিমি দক্ষিণ দিয়ে অতিক্রম করে বুধবার বিকেলে দক্ষিণ চীনের উপকূলে আঘাত হানবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গুয়াংঝু, শেনজেন, ফোশান ও দংগুয়ানসহ প্রায় ৫ কোটি মানুষের বসবাসের এলাকায় ঝড়ের প্রভাব পড়তে পারে। ইতিমধ্যে জরুরি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় গুয়াংডং প্রদেশে লাখ লাখ তাঁবু, ভাঁজ করা বিছানা ও উদ্ধার সরঞ্জাম পাঠিয়েছে এবং ৭ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মানুষের প্রতিক্রিয়া ও দুর্ঘটনা
শেনজেনে কিছু মানুষ নিরাপদ দূরত্ব থেকে ঝড় দেখার জন্য বাইরে বেরিয়ে আসেন। কেউ কেউ প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় হাঁটার অভিজ্ঞতা নিতে চেয়েছেন। তবে কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অবস্থান অত্যন্ত বিপজ্জনক। হংকংয়ের জলসীমা থেকে মা ও তার পাঁচ বছরের শিশুকে সমুদ্রে ভেসে যেতে দেখা গেছে; বর্তমানে তারা নিবিড় পরিচর্যায় চিকিৎসাধীন।
পরিস্থিতির সারসংক্ষেপ
টাইফুন রাগাসা শক্তি কমালেও এখনো ধ্বংসাত্মক প্রভাব বিস্তার করছে। তাইওয়ানে প্রাণহানি, হংকংয়ে প্লাবন, এবং চীনের দক্ষিণাঞ্চলে আশঙ্কাজনক প্রস্তুতি—সব মিলিয়ে এটি এ বছরের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর একটি হিসেবে ধরা হচ্ছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















