০৫:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
বন্যার নতুন বাস্তবতা: এফিমার মানচিত্র পাল্টাতে শহরগুলোর জোর প্রচেষ্টা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রধানের আহ্বান: মার্কিন-চীনের বাণিজ্য যুদ্ধ শিথিল করতে, অথবা দীর্ঘমেয়াদী বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে ঝুঁকি ‘নো কিংস’ বিক্ষোভ, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী ব্যাপক মিছিল সমাবেশ জুলাই সনদ সাধারণ মানুষের জীবনে কতটা পরিবর্তন আনতে পারবে? রাজসাহীর ইতিহাস (পর্ব -৪৩) বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের বিভিন্ন জায়গায় এখনও ধোঁয়া উড়ছে – রবিবার যে চিত্র দেখা যাচ্ছে রাফাহ বন্ধই, ইসরায়েল শনাক্ত করল এক জিম্মির মরদেহ এসএনএল ‘উইকেন্ড আপডেট’: ট্রাম্প, স্যান্টোস ও আর্জেন্টিনা—সবাই তালগোল পাকাল ট্রাম্পের ‘কিং ট্রাম্প’ এআই ভিডিওতে সমালোচনার ঝড় রুশ গ্যাস প্ল্যান্টে ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা, বড় অগ্নিকাণ্ড

সাংস্কৃতিক বিনিময়ে অনিশ্চয়তা

নাটকের সংলাপ থেকে বিতর্কের সূচনা

দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জুন জি-হিউন অভিনীত ডিজনি+ সিরিজ ‘টেম্পেস্ট’-এ এক দৃশ্যে তিনি একজন কূটনীতিকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সেখানে তাঁর সংলাপ ছিল:

“চীন কেন যুদ্ধকে প্রাধান্য দেয়? সীমান্তের কাছে তো পরমাণু বোমা পড়তে পারে।”

এই কাল্পনিক সংলাপ চীনের সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকে মনে করছেন এতে চীনকে যুদ্ধপ্রিয় হিসেবে দেখানো হয়েছে। এর জেরে অনলাইনে অভিনেত্রীর সঙ্গে যুক্ত ব্র্যান্ডগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।

পুরনো নিষেধাজ্ঞার পুনরুজ্জীবন

এই বিতর্ক আবারও সামনে এনেছে প্রায় এক দশক ধরে চলা দক্ষিণ কোরিয়ান বিনোদনবিষয়ক চীনের অনানুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা।

Why does China prefer war?' The K-drama line that infuriated the Chinese  internet

২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যান্টি-মিসাইল সিস্টেম দক্ষিণ কোরিয়ায় বসানোর সিদ্ধান্তের পর থেকেই চীনে কে-ড্রামা ও কে-পপ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি কিছুটা শিথিলতা দেখা দিলেও ‘টেম্পেস্ট’ নিয়ে বিতর্ক নতুন করে সেই নিষেধাজ্ঞাকে শক্ত করেছে।

চীনা প্ল্যাটফর্ম ওয়েইবোতে একজন লিখেছেন: “কে-ড্রামার ওপর নিষেধাজ্ঞা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাখুন।” এই মন্তব্যে ১০ হাজারের বেশি লাইক পড়েছে।

নাটকের আরও দৃশ্য নিয়ে সমালোচনা

শুধু ওই সংলাপই নয়, সিরিজের আরও কিছু অংশ নিয়ে চীনা দর্শকদের আপত্তি রয়েছে।

  • • চীনের দালিয়ান শহরকে ভাঙাচোরা ভবন দিয়ে দেখানো হয়েছে, যা হংকংয়ে ধারণ করা বলে ধারণা করা হয়।
  • • একটি দৃশ্যে লাল কার্পেটের ওপর হলুদ তারা আঁকা কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে, যা অনেকের কাছে চীনের পতাকার মতো লেগেছে।
  • • প্রাচীন চীনা কবিতা পাঠ করার সময় জুন জি-হিউনের উচ্চারণ নিয়েও সমালোচনা উঠেছে।

এসব কারণে চীনা নেটিজেনরা একযোগে তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

13 of the best new K-dramas to watch in September 2025, including Tempest  with Jun Ji-hyun | South China Morning Post

ব্র্যান্ডগুলোতে চাপ

ওয়েইবো ব্যবহারকারীদের নজরে আসে, আমেরিকান স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ড লা মের, ফরাসি বিলাসবহুল ব্র্যান্ড লুই ভুইতোঁ এবং সুইস ঘড়ির ব্র্যান্ড পিয়াজে ইতোমধ্যেই তাদের সামাজিক মাধ্যম থেকে জুন জি-হিউনের প্রচার মুছে দিয়েছে।

একটি মন্তব্যে বলা হয়: “জুন জি-হিউনের বিজ্ঞাপন সরানো যথেষ্ট নয়, তাঁর সব চুক্তি বাতিল করুন, নইলে আমরা লুই ভুইতোঁ বর্জন করব।”

তবে অভিনেত্রীর এজেন্সি জানিয়েছে, এসব ব্র্যান্ডের ক্যাম্পেইন ‘টেম্পেস্ট’-এর সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এবং সিরিজ প্রচারের আগেই সেগুলো শেষ হয়েছিল।

চীনা ভোক্তাদের চাপ প্রয়োগের ইতিহাস

চীনের ভোক্তারা জাতীয় গৌরব ক্ষুণ্ণ হলে বর্জন আন্দোলনে নেমে পড়েন। এর আগে এইচঅ্যান্ডএম, ইউনিক্লো এবং সম্প্রতি সোয়াচও এমন আন্দোলনের শিকার হয়েছে।

তবে কিছু মানুষ জুনের পক্ষে বলেছেন, সংলাপ তিনি লেখেননি। এক নেটিজেন লিখেছেন: “জুন জি-হিউন কেবল অভিনেত্রী। একটি সিনেমার আগে তাঁর পক্ষে একটি দেশের ইতিহাস ও সম্পর্ক বোঝা সম্ভব নয়।”

তবু এ ধরনের মন্তব্য প্রতিরোধ করতে পারেনি বিরূপ প্রতিক্রিয়া। সমালোচকরা বলছেন, তিনি বড় তারকা, স্ক্রিপ্ট পড়ার সুযোগ ছিল এবং এতে অভিনয় করা তাঁর দায়িত্ব।

Jun Ji-Hyun Earned 13 Billion Won In 2022, Ranked Among Top-Paid Actresses:  "Sales Increased 5X After My Endorsement!"

জুন জি-হিউনের ক্যারিয়ার

জুন জি-হিউন ২০০১ সালে ‘মাই স্যাসি গার্ল’ সিনেমায় অভিনয় করে এশিয়া জুড়ে জনপ্রিয়তা পান। এরপর ‘মাই লাভ ফ্রম দ্য স্টার’ (২০১৩) এবং নেটফ্লিক্স সিরিজ ‘কিংডম’ (২০২১)-এ অভিনয় করে সাফল্য ধরে রাখেন।

তবে ২০১৬ সালের পর থেকে চীনের বিনোদন অঙ্গনে তাঁকে আর দেখা যায়নি, ওই নিষেধাজ্ঞার কারণেই।

সাম্প্রতিক কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট

চলতি বছরের শুরুতে দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সাংস্কৃতিক বিনিময় পুনরুদ্ধারের বিষয়ে সম্মত হয়েছিলেন। এরপর দক্ষিণ কোরিয়ার হিপহপ ব্যান্ড হোমিজ প্রায় এক দশক পর প্রথমবার চীনে কনসার্ট করে।

কিন্তু কে-পপ ব্যান্ড এপেক্সের অনুষ্ঠান ‘স্থানীয় পরিস্থিতি’র কারণে বাতিল হয়। আরও একটি কনসার্ট স্থগিত হলে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে “উপকারী সাংস্কৃতিক বিনিময়ের” বিরোধিতা করে না।

তবু চীন নিজস্ব বিশাল বিনোদন শিল্প গড়ে তুলেছে। অনেক চীনা দর্শকের মতে, ‘টেম্পেস্ট’-এর বিতর্ক তাদের আরও দূরে সরিয়ে দিয়েছে কে-ড্রামা থেকে।

ওয়েইবোর এক ব্যবহারকারী লিখেছেন: “এখন ২০২৫ সাল, আর এখনও কে-ড্রামা দেখছেন, কতই না হাস্যকর!”

জনপ্রিয় সংবাদ

বন্যার নতুন বাস্তবতা: এফিমার মানচিত্র পাল্টাতে শহরগুলোর জোর প্রচেষ্টা

সাংস্কৃতিক বিনিময়ে অনিশ্চয়তা

০১:০০:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নাটকের সংলাপ থেকে বিতর্কের সূচনা

দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জুন জি-হিউন অভিনীত ডিজনি+ সিরিজ ‘টেম্পেস্ট’-এ এক দৃশ্যে তিনি একজন কূটনীতিকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সেখানে তাঁর সংলাপ ছিল:

“চীন কেন যুদ্ধকে প্রাধান্য দেয়? সীমান্তের কাছে তো পরমাণু বোমা পড়তে পারে।”

এই কাল্পনিক সংলাপ চীনের সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকে মনে করছেন এতে চীনকে যুদ্ধপ্রিয় হিসেবে দেখানো হয়েছে। এর জেরে অনলাইনে অভিনেত্রীর সঙ্গে যুক্ত ব্র্যান্ডগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।

পুরনো নিষেধাজ্ঞার পুনরুজ্জীবন

এই বিতর্ক আবারও সামনে এনেছে প্রায় এক দশক ধরে চলা দক্ষিণ কোরিয়ান বিনোদনবিষয়ক চীনের অনানুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা।

Why does China prefer war?' The K-drama line that infuriated the Chinese  internet

২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যান্টি-মিসাইল সিস্টেম দক্ষিণ কোরিয়ায় বসানোর সিদ্ধান্তের পর থেকেই চীনে কে-ড্রামা ও কে-পপ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি কিছুটা শিথিলতা দেখা দিলেও ‘টেম্পেস্ট’ নিয়ে বিতর্ক নতুন করে সেই নিষেধাজ্ঞাকে শক্ত করেছে।

চীনা প্ল্যাটফর্ম ওয়েইবোতে একজন লিখেছেন: “কে-ড্রামার ওপর নিষেধাজ্ঞা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাখুন।” এই মন্তব্যে ১০ হাজারের বেশি লাইক পড়েছে।

নাটকের আরও দৃশ্য নিয়ে সমালোচনা

শুধু ওই সংলাপই নয়, সিরিজের আরও কিছু অংশ নিয়ে চীনা দর্শকদের আপত্তি রয়েছে।

  • • চীনের দালিয়ান শহরকে ভাঙাচোরা ভবন দিয়ে দেখানো হয়েছে, যা হংকংয়ে ধারণ করা বলে ধারণা করা হয়।
  • • একটি দৃশ্যে লাল কার্পেটের ওপর হলুদ তারা আঁকা কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে, যা অনেকের কাছে চীনের পতাকার মতো লেগেছে।
  • • প্রাচীন চীনা কবিতা পাঠ করার সময় জুন জি-হিউনের উচ্চারণ নিয়েও সমালোচনা উঠেছে।

এসব কারণে চীনা নেটিজেনরা একযোগে তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

13 of the best new K-dramas to watch in September 2025, including Tempest  with Jun Ji-hyun | South China Morning Post

ব্র্যান্ডগুলোতে চাপ

ওয়েইবো ব্যবহারকারীদের নজরে আসে, আমেরিকান স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ড লা মের, ফরাসি বিলাসবহুল ব্র্যান্ড লুই ভুইতোঁ এবং সুইস ঘড়ির ব্র্যান্ড পিয়াজে ইতোমধ্যেই তাদের সামাজিক মাধ্যম থেকে জুন জি-হিউনের প্রচার মুছে দিয়েছে।

একটি মন্তব্যে বলা হয়: “জুন জি-হিউনের বিজ্ঞাপন সরানো যথেষ্ট নয়, তাঁর সব চুক্তি বাতিল করুন, নইলে আমরা লুই ভুইতোঁ বর্জন করব।”

তবে অভিনেত্রীর এজেন্সি জানিয়েছে, এসব ব্র্যান্ডের ক্যাম্পেইন ‘টেম্পেস্ট’-এর সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এবং সিরিজ প্রচারের আগেই সেগুলো শেষ হয়েছিল।

চীনা ভোক্তাদের চাপ প্রয়োগের ইতিহাস

চীনের ভোক্তারা জাতীয় গৌরব ক্ষুণ্ণ হলে বর্জন আন্দোলনে নেমে পড়েন। এর আগে এইচঅ্যান্ডএম, ইউনিক্লো এবং সম্প্রতি সোয়াচও এমন আন্দোলনের শিকার হয়েছে।

তবে কিছু মানুষ জুনের পক্ষে বলেছেন, সংলাপ তিনি লেখেননি। এক নেটিজেন লিখেছেন: “জুন জি-হিউন কেবল অভিনেত্রী। একটি সিনেমার আগে তাঁর পক্ষে একটি দেশের ইতিহাস ও সম্পর্ক বোঝা সম্ভব নয়।”

তবু এ ধরনের মন্তব্য প্রতিরোধ করতে পারেনি বিরূপ প্রতিক্রিয়া। সমালোচকরা বলছেন, তিনি বড় তারকা, স্ক্রিপ্ট পড়ার সুযোগ ছিল এবং এতে অভিনয় করা তাঁর দায়িত্ব।

Jun Ji-Hyun Earned 13 Billion Won In 2022, Ranked Among Top-Paid Actresses:  "Sales Increased 5X After My Endorsement!"

জুন জি-হিউনের ক্যারিয়ার

জুন জি-হিউন ২০০১ সালে ‘মাই স্যাসি গার্ল’ সিনেমায় অভিনয় করে এশিয়া জুড়ে জনপ্রিয়তা পান। এরপর ‘মাই লাভ ফ্রম দ্য স্টার’ (২০১৩) এবং নেটফ্লিক্স সিরিজ ‘কিংডম’ (২০২১)-এ অভিনয় করে সাফল্য ধরে রাখেন।

তবে ২০১৬ সালের পর থেকে চীনের বিনোদন অঙ্গনে তাঁকে আর দেখা যায়নি, ওই নিষেধাজ্ঞার কারণেই।

সাম্প্রতিক কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট

চলতি বছরের শুরুতে দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সাংস্কৃতিক বিনিময় পুনরুদ্ধারের বিষয়ে সম্মত হয়েছিলেন। এরপর দক্ষিণ কোরিয়ার হিপহপ ব্যান্ড হোমিজ প্রায় এক দশক পর প্রথমবার চীনে কনসার্ট করে।

কিন্তু কে-পপ ব্যান্ড এপেক্সের অনুষ্ঠান ‘স্থানীয় পরিস্থিতি’র কারণে বাতিল হয়। আরও একটি কনসার্ট স্থগিত হলে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে “উপকারী সাংস্কৃতিক বিনিময়ের” বিরোধিতা করে না।

তবু চীন নিজস্ব বিশাল বিনোদন শিল্প গড়ে তুলেছে। অনেক চীনা দর্শকের মতে, ‘টেম্পেস্ট’-এর বিতর্ক তাদের আরও দূরে সরিয়ে দিয়েছে কে-ড্রামা থেকে।

ওয়েইবোর এক ব্যবহারকারী লিখেছেন: “এখন ২০২৫ সাল, আর এখনও কে-ড্রামা দেখছেন, কতই না হাস্যকর!”