ছাগল চরানো থেকে মহাকাশপাথর ব্যবসা
লেমিন হানুন আগে ছিলেন একজন ছাগল চরানো। কিন্তু এখন তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে টিকটক ও ফেসবুকের মাধ্যমে মহাকাশ থেকে পড়া উল্কাপিণ্ড বিক্রি করেন সারা বিশ্বের ক্রেতাদের কাছে। দিনে তিনি মোবাইল ফোনে লেনদেন করেন, রাতে হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করেন।
হানুন দশ বছর আন্দালুসিয়ার নির্মাণ কাজে শ্রমিক ছিলেন। মায়ের অসুস্থতার কারণে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং ছাগল চরাতে থাকেন। একসময় পাথর খুঁজতে শুরু করেন। পরে ছাগল বিক্রি করে ভাইকে স্পেনে পাঠানো এবং মায়ের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করেন। এরপর পুরোপুরি মন দেন মহাকাশপাথরের ব্যবসায়।
মরুভূমিতে মহাকাশপাথরের খোঁজ
সাহারা মরুভূমি উল্কাপিণ্ড খোঁজার জন্য আদর্শ স্থান। এখানে খণ্ডগুলো সহজে চোখে পড়ে এবং দীর্ঘদিন টিকে থাকে। নব্বই দশকে শিকারি ও দালালরা সক্রিয় হয়, কিন্তু ২০১১ সালে মরক্কোতে পাওয়া বিশাল ‘তিসসিন্ট’ নামের মঙ্গলগ্রহের উল্কাপিণ্ড থেকেই শুরু হয় আসল উন্মাদনা। এখন পর্যন্ত মৌরিতানিয়া থেকে ৩০০টিরও বেশি অনুমোদিত উল্কাপিণ্ড নথিভুক্ত হয়েছে।

জীবিকা ও ঝুঁকি
মৌরিতানিয়ার জনসংখ্যার ১০ শতাংশ বেকার বলা হলেও, অধিকাংশ মানুষ কম মজুরির অনিশ্চিত কাজে জড়িত। খরা ও মরুকরণ ছাগল চরানো কঠিন করে তুলেছে। ফলে অনেকে উল্কাপিণ্ড শিকারে ঝুঁকছেন। তবে মূল্যবান পাথর পাওয়া খুবই বিরল। বেশিরভাগ সময় পাওয়া যায় কম দামের কন্ড্রাইট। অনেকেই জ্বালানি ও পানি নিয়ে মরুভূমিতে যান, আবার খালি হাতে ফিরে আসেন।
প্রতারণা ও টিকটকের ব্যবসা
কিছু দালাল পাথরকে কালচে দেখাতে টিকটকের ফিল্টার ব্যবহার করেন বা ভিজিয়ে দেন, যাতে দূরের ক্রেতারা প্রতারিত হতে পারে। মৌরিতানিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব প্রেশিয়াস স্টোনস ও মেটিওরাইটস-এর সভাপতি মোহাম্মদ এল আমর সতর্ক করে বলেন, টিকটকে দ্রুত লাভের জন্য বিক্রি করা অর্থনীতির ক্ষতি করছে।
বৈশ্বিক বাজারে দাম ও পাচার
মৌরিতানিয়ায় একটি ২৮৫ গ্রামের উল্কাপিণ্ড প্রায় ৫০ ইউরোতে বিক্রি হয়, যা ইউরোপে দ্বিগুণ এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি গ্রাম ১,০০০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এতে মোট দাম দাঁড়ায় প্রায় ২ লাখ ৮৫ হাজার ডলার।

২০২৩ সালের নভেম্বরে নাইজারের উত্তর-পশ্চিমে পাওয়া ২৫ কেজি ওজনের একটি মঙ্গলের উল্কাপিণ্ড ২০২৫ সালের জুলাইয়ে নিউইয়র্কে নিলামে বিক্রি হয় ৫.৩ মিলিয়ন ডলারে। এরপর নাইজার সরকার সম্ভাব্য অবৈধ পাচারের তদন্ত শুরু করে। কিন্তু মৌরিতানিয়ায় এ বিষয়ে কোনো আইন নেই। ফলে ব্যবসা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন।
স্থানীয় বাস্তবতা
বির মোগরেইন শহরে কয়েক হাজার মানুষ বসবাস করে। শান্ত শহরের ভেতরে লুকিয়ে আছে অতীতের অনানুষ্ঠানিক খনন ও পাচারের ইতিহাস। হানুন এখনো বলেন, অনুমতির কথা কেউ বললেও অধিকাংশ দালাল কোনো ফি দেয় না। সরকারও এ খাত সম্পর্কে অজ্ঞ। বিনিয়োগ সংস্থার এক মুখপাত্র বলেন, “এটা উত্তরাঞ্চলের ছোটখাটো বিষয়, সাধারণ ব্যবসা নয়।”
ধর্মীয় বিশ্বাস ও আশা
হানুন বিশ্বাস করেন, উল্কাপিণ্ড মানুষ খুঁজে পায় না, বরং উল্কাপিণ্ডই মানুষকে খুঁজে নেয়। তার কাছে এটি আসমান থেকে আসা এক উপহার।




সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















