সম্প্রতি বলিউডের শীর্ষ তারকারা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন তাঁদের ছবি, কণ্ঠস্বর ও পরিচিত ভঙ্গি অবৈধভাবে ব্যবহার রোধে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি ভুয়া ছবি ও ভিডিও বা ডিপফেক তাঁদের জন্য নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
ব্যক্তিত্ব অধিকার কী
ব্যক্তিত্ব অধিকার বা ‘পার্সোনালিটি রাইটস’-এর আওতায় একজন মানুষ তাঁর নাম, ছবি, কণ্ঠস্বর কিংবা ভঙ্গিমা থেকে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার অধিকার রাখেন। অন্য কেউ অনুমতি ছাড়া এগুলো ব্যবহার করতে পারে না। তবে ভারতে এখনো এই বিষয়ে আলাদা কোনো আইন নেই। আদালত সাধারণ আইন ও পূর্ববর্তী রায়ের নজিরের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে।
আদালতের শরণাপন্ন তারকারা
বলিউড তারকাদের অভিযোগ, তাঁদের পরিচয় ব্যবহার করে ভুয়া ওয়েবসাইট, অবৈধ পণ্য বিপণন, এমনকি অশ্লীল কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে। দিল্লি হাইকোর্ট এসব ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করে বেআইনি কনটেন্ট সরানোর নির্দেশ দিয়েছে।
দালের মেহেন্দির মামলা
২০০২ সালে গায়ক দালের মেহেন্দি প্রথমবার আদালতের দ্বারস্থ হন। তাঁর আদলে অবৈধ পুতুল তৈরি ও বিক্রি হচ্ছিল। সেই মামলা থেকেই ভারতে ব্যক্তিত্ব অধিকার নিয়ে আইনি লড়াইয়ের সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে এরকম মামলা ক্রমেই বেড়েছে।
ভারতের সীমাবদ্ধতা
বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় ভারত এখনো পিছিয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও জার্মানির মতো দেশে ব্যক্তিত্ব অধিকার আলাদা আইনে সুরক্ষিত। সেখানে প্রয়াত শিল্পীর পরিবারও তাঁর নাম, ছবি বা পরিচিতি থেকে লাভবান হওয়ার অধিকার রাখে। কিন্তু ভারতে ব্যক্তিত্ব অধিকারকে গোপনীয়তার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ফলে মৃত্যুর পর এ অধিকারও শেষ হয়ে যায়।
সুশান্ত সিং রাজপুত মামলা
২০২১ সালে অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর তাঁর বাবা একটি চলচ্চিত্রের মুক্তি বন্ধ করতে আদালতে যান। আদালত জানায়, রাজপুতের ব্যক্তিত্ব অধিকার উত্তরাধিকারসূত্রে তাঁর পরিবার পাবে না। ফলে মামলা খারিজ হয়ে যায়।
নতুন আইনের প্রয়োজনীয়তা
আইনজীবী ধ্রুব আনন্দ মনে করেন, ভারতে ব্যক্তিত্ব অধিকার রক্ষায় আলাদা আইন প্রণয়ন করা জরুরি। এতে নিয়ম স্পষ্ট হবে এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ের সুযোগও তৈরি হবে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, আলাদা আইন না থাকলে আদালতের ব্যাখ্যার পরিধি বাড়ে, যা ভুক্তভোগীর জন্যও সহায়ক হতে পারে।
প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ
প্রযুক্তির অগ্রগতি এই বিতর্ককে আরও জটিল করেছে। ২০২৪ সালে হলিউডে শত শত লেখক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। একই বছর অভিনেত্রী স্কারলেট জোহানসন অভিযোগ করেন, তাঁর কণ্ঠস্বর অনুমতি ছাড়া একটি এআই মডেলে ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তা অস্বীকার করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আইন সবসময় প্রযুক্তির থেকে এক ধাপ পিছিয়ে থাকে। তাই বিদ্যমান আইনগুলোকে আধুনিক প্রেক্ষাপটে কাজে লাগানো, আদালতের নজির অনুসরণ করা এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো সবচেয়ে জরুরি।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 





















