অভিজ্ঞ লেখকদের আধিপত্য
২০২৫ সালের বুকার পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় নতুন কোনো লেখকের নাম নেই। এতে জায়গা পেয়েছেন অভিজ্ঞ লেখকেরা, যাদের মধ্যে রয়েছেন ২০০৬ সালের বিজয়ী কিরণ দেশাই এবং আগেরবার তালিকাভুক্ত হওয়া ডেভিড স্যালাই ও অ্যান্ড্রু মিলার। আরও আছেন বেন মার্কোভিটস, সুসান চই ও কেটি কিতামুরা। তালিকাটি ঘোষণা করা হয় লন্ডনের সাউথব্যাঙ্ক সেন্টারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে।
বিচারকদের প্যানেল
এই বছরের বিচারকদের মধ্যে রয়েছেন অভিনেত্রী ও প্রকাশনা সংস্থা এসজেপি লিটের প্রধান সারাহ জেসিকা পার্কার। চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন ১৯৯৩ সালের বুকার জয়ী আইরিশ লেখক রডি ডয়েল।
কিরণ দেশাইয়ের প্রত্যাবর্তন
‘দ্য ইনহেরিটেন্স অব লস’-এর জন্য বুকার জয়ী দেশাই এবার মনোনীত হয়েছেন তার নতুন উপন্যাস দ্য লোনলিনেস অব সোনিয়া অ্যান্ড সানির জন্য। প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটি তালিকার মধ্যে সবচেয়ে বড়। বইটি প্রেম ও পরিবারকে ঘিরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের পটভূমিতে লেখা।
ডেভিড স্যালাই
হাঙ্গেরি ও ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত লেখক স্যালাই ২০১৬ সালের পর আবারও তালিকাভুক্ত হয়েছেন তার উপন্যাস ফ্লেশ নিয়ে। এতে প্রধান চরিত্র ইস্তভানের কিশোর বয়স থেকে মধ্যজীবন পর্যন্ত যাত্রা তুলে ধরা হয়েছে, যা হাঙ্গেরি থেকে লন্ডন পর্যন্ত বিস্তৃত। এক সমালোচকের ভাষায়, এটি “বেঁচে থাকার অদ্ভুত বাস্তবতা এবং সময়ের ভেতর দিয়ে শরীরী অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার উপন্যাস”।
অ্যান্ড্রু মিলার
ব্রিটিশ লেখক মিলার তার দশম উপন্যাস দ্য ল্যান্ড ইন উইন্টার নিয়ে সংক্ষিপ্ত তালিকায় এসেছেন। ১৯৬২-৬৩ সালের শীতকালে পশ্চিমাঞ্চলের দুটি তরুণ দম্পতির জীবনের কাহিনি এতে উঠে এসেছে।
অন্যান্য লেখকরা
- কেটি কিতামুরা: তার উপন্যাস অডিশন সমালোচকদের মতে “অদ্ভুত সাহিত্যিক পরিবেশনা”। এটি দুই ভাগে বিভক্ত, যেখানে মা-ছেলের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে জটিল আখ্যান গড়ে উঠেছে। ২০০ পৃষ্ঠার কম হওয়ায় এটি তালিকার সবচেয়ে ছোট উপন্যাস।
- সুসান চই: তার উপন্যাস ফ্ল্যাশলাইট কোরিয়ান অভিবাসীর নিখোঁজ হওয়ার গল্প, যা যুদ্ধ-পরবর্তী জাপান, আমেরিকার শহরতলি ও উত্তর কোরিয়ার প্রেক্ষাপটে বিস্তৃত।
- বেন মার্কোভিটস: তার উপন্যাস দ্য রেস্ট অব আওয়ার লাইভস একজন আইন অধ্যাপক টম লেওয়ার্ডকে কেন্দ্র করে লেখা, যিনি মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নামিয়ে দিয়ে স্ত্রীর কাছে না ফিরে পশ্চিম দিকে যাত্রা করেন।
বিচারকদের মন্তব্য
চেয়ারম্যান রডি ডয়েল বলেন, “সব বই-ই ভিন্ন ভিন্ন ও সতেজ উপায়ে ব্যক্তির সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম তুলে ধরেছে—ভালোবাসা, মনোযোগের খোঁজ, সহনশীলতা কিংবা মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। প্রতিটি বই-ই অসাধারণভাবে লেখা এবং অসাধারণ মানবিক।”
আমেরিকান লেখকদের উপস্থিতি
তালিকার অর্ধেক লেখকই আমেরিকান (মার্কোভিটস, চই, কিতামুরা)। বিচারক ক্রিস পাওয়ার বলেন, “ইংরেজি এখন বৈশ্বিক ভাষা, আর এই পুরস্কারও তাই বৈশ্বিক। যদি আমেরিকানদের জন্য উন্মুক্ত না হতো, অনেক গুরুত্বপূর্ণ বই আমাদের চোখে পড়তো না।” ১৯৬৯ সালে কেবল কমনওয়েলথ লেখকরা অংশ নিতে পারতেন, কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে সারা বিশ্বের লেখকদের জন্য এটি উন্মুক্ত।
দীর্ঘতালিকা থেকে বাদ পড়া বই
এবারের পুরস্কারের জন্য ১৫৩টি বই জমা পড়েছিল। চার ঘণ্টার বৈঠকের পর সাতটি বই চূড়ান্ত তালিকায় আসতে পারেনি, এর মধ্যে রয়েছে ক্লেয়ার অ্যাডামের লাভ ফর্মস, তাশ আউর দ্য সাউথ, নাতাশা ব্রাউনের ইউনিভার্সালিটি এবং আরও কয়েকটি। বিচারক পার্কার বলেন, “একটি বই বাদ দেওয়া আমাদের জন্য কষ্টকর ছিল, কোনো সিদ্ধান্তই ছিল না হালকাভাবে নেওয়া।”
পুরস্কার ঘোষণা
বুকার পুরস্কারের বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে আগামী ১০ নভেম্বর। বিজয়ী পাবেন ৫০ হাজার পাউন্ড। গত বছর সামান্থা হার্ভির অরবিটাল-এ পুরস্কার পেয়েছিল।